জাতীয়

মহাদেবপুরে আদিবাসী তরুণ-তরুণীদের নাচে গানে কারাম উৎসব পালিত

আদিবাসী তরুণ-তরুণীদের নাচে গানে গতকাল মুখরিত হয়ে উঠেছিল নাটশাল মাঠ । নিজস্ব ভাষায় নিজস্ব সত্বায় আদিবাসীরা তাদের ধর্মীয় কারাম উৎসবে মেতে উঠেছিল। নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার নাটশাল মাঠে গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত কারাম উৎসব পালনের ২২ বছর পূর্তিতে এভাবেই মাদলের তালে তালে নেচে-গেয়ে মহাধুমধামের সাথে কারাম উৎসব পালন করলো আদিবাসীরা। এদিন আদিবাসীদের সুরে সুর আর তালে তাল মিলিয়ে অনেক বাঙ্গালীকেও মাঠে নাচতে চোখে পড়ে।

উত্তরাঞ্চলের ওঁরাও, সাঁওতাল, মুন্ডা, মালো, মাহাতো, ভুঁইমালি, পাহান, রাজোয়ারসহ নানা বর্ণ ও গোত্রের আদিবাসীরা হাজার বছর ধরে কারাম উৎসব পালন করে আসছে। তবে ২২ বছর আগে নাটশাল মাঠে সাংগঠনিকভাবে শুরু হয় এই ধর্মীয় কারাম উৎসবের। প্রতিবছর ভাদ্র মাসের উদিত চাঁদের পূর্ণিমার রাতে কারাম পুজো (ডালপুজা) পালন করা হয়। পূর্ণিমার রাতে গত মঙ্গলবার রাতভর চলেছে কারাম পুজো (ডালপুজা)। আর গতকাল আদিবাসী সমাবেশ, আলোচনা সভা ও নৃত্য প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল বুধবার সকাল থেকেই আদিবাসীদের গন্তব্যস্থল হয়ে ওঠে মহাদেবপুরের নাটশাল মাঠ। ধর্মীয় চেতনায় নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর, পত্নীতলা, বদলগাছী, সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর, ধামইরহাট উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে আদিবাসীরা নাটশাল মাঠে এসে সমবেত হতে থাকেন। বিকেল ৩টার মধ্যে মাঠ আদিবাসীদের মিলনমেলায় পরিনত হয়। বিকেলে তারা শুরু করে তাদের ঐতিহ্যপূর্ণ নিজস্ব জাতিসত্তায় প্রচলিত গান ও নাচ। তরুন-তরুনীরা একে অপরের হাত ধরে সারিবদ্ধ হয়ে কোমর দুলিয়ে মাদলের তালে তালে যখন নৃত্য শুরু করে, তখন এক অপরূপ দৃশ্যের অবতারনা ঘটে। হাজার হাজার দর্শক-জনতা মাঠের চারিপাশে দাঁড়িয়ে এই নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করে। এই নাচ-গান চলে রাত অবধি।

এই কারাম উৎসবকে ঘিরে প্রতিবছরের মত এবারেও নাটশাল মাঠে গ্রামীণ মেলা বসে। খাবারের হরেক রকম মিঠাই সামগ্রীর পাশাপাশি দোকানীরা শিশুদের খেলনা, চুড়ি-ফিতা, প্রসাধনীসহ হরেক রকম মনভোলানো সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসে সেখানে। বেচা-কেনাও হয় বেশ। শিশু ও তরুনীরা সেসব দোকানে ঝুঁকে পড়ে তাদের পছন্দের সামগ্রী কিনতে। সেখানে আদিবাসী আর বাঙ্গালীদের যেন এক মিলন মেলায় পরিণত হয়।

কারাম উৎসব উপলক্ষ্যে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা আদিবাসী সংস্কৃতি বিকাশের জন্য সরকারী উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন গঠন করার আহ্বান জানান।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম। জাতীয় আদিবাসী সাংস্কৃতিক পরিষদের সভাপতি বাসন্তী মুরমুর সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সবিন চন্দ্র মুণ্ডা, উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট শহিদ হাসান সিদ্দিকী স্বপন, জয়নাল আবেদীন মুকুল, বেসরকারি সংস্থা আরকোর নির্বাহী পরিচালক সজল কুমার চৌধুরী প্রমুখ।

Back to top button