জাতীয়

মধুপুরে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের নামে আদিবাসী উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে : নাগরিক প্রতিনিধি দল

আইপিনিউজ ডেস্কঃ ২৫ জুলাই, ২০১৬ সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি গোলটেবিল কক্ষে হিউম্যান রাইটস্‌ ডিফেন্ডারস্‌ ফোরাম, ঢাকা ও নাগরিক প্রতিনিধি দলের যৌথ উদ্যোগে এবং আইইডি ও কাপেং ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
টাঙ্গাইলের মধুপুরে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের নামে আদিবাসীদের জমি অধিগ্রহণ বিষয়ক পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শনোত্তর সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ-এর সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন হরেন্দ্রনাথ সিং।
বক্তব্য রাখেন ঐক্য ন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ, আইইডির নির্বাহী পরিচালক নুমান আহম্মদ খান, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, দৈনিক কালের কন্ঠের সাংবাদিক হোসেন জামাল, হিউম্যান রাইটস্‌ ডিফেন্ডারস্‌ ফোরাম, ঢাকা-এর আহ্বায়ক শিপন কুমার রবিদাস। এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আইইডির সমন্বয়কারী হামিদুজ্জামান, প্রকল্প সমন্বয়কারী জ্যোতি চট্টোপাধ্যায়, জনউদ্যোগ সদস্য সচিব তারিক হোসেন মিঠুল, আদিবাসী নেতা দীপায়ন খীসা, কাপেং ফাউন্ডেশনের হিরণ মিত্র চাকমা, জন ত্রিপুরা প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ফাল্গুনী ত্রিপুরা।
গত ২১-২২ জুলাই ২০১৬ নাগরিক ও সাংবাদিক প্রতিনিধি দলসহ টাঙ্গাইলের মধুপুরে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের নামে আদিবাসীদের জমি অধিগ্রহণ বিষয়ক পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শন করে। সেখানের অরণখোলা ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা আদিবাসী ও বাঙালিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কোনো এলাকার বাসিন্দাদের সাথে আলোচনা-সংলাপ ছাড়াই কীভাবে সে বিস্তীর্ণ এলাকাকে সংরক্ষিত বনভূমি ঘোষণা করা হলো, সেটি একটি প্রশ্ন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে যে, ঘোষিত সংরক্ষিত বনভূমি এলাকার মধ্যে ভূমির উপর কোন ধরনের দাবি-দাওয়া উপস্থাপিত হয়নি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই সংরক্ষিত বনভূমি ঘোষণার বিষয়টি এখনো বসবাসরত আদিবাসী জনগোষ্ঠীসহ কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে অবগত নয়। তাই নিজ ভূমির উপর দাবি-দাওয়া না থাকার তথ্যটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর। আদিবাসীদের অজান্তেই সংরক্ষিত বনভূমি কার্যক্রমটি পরিচালিত হচ্ছে বলে এলাকাবাসী মনে করে।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন, সরেজমিন সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, উদ্দেশ্য বন সংরক্ষণ হলেও বাস্তবে এলাকার বিভিন্ন স্থানে অবকাশ ও বিনোদন কেন্দ্র, বাংলো ইত্যাদি তৈরি হচ্ছে। এছাড়া বিস্তীর্ণ এলাকাকে ঘিরে দেয়াল নির্মাণের কথাও জানা গেছে। যেহেতু সংরক্ষিত বনভূমি, তাই সন্দেহ করা হয়, প্রক্রিয়াটি অরণখোলা ইউনিয়নের গ্রামগুলো থেকে আদিবাসীদের সরিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র মাত্র। যে ভূমির উপর যুগ-যুগ ধরে আদিবাসীদের বসবাস, যেখানে জড়িয়ে রয়েছে তাদের জীবন-জীবিকা, যাকে ঘিরে আদিবাসীরা স্বপ্ন দেখে সামনে এগিয়ে চলার সেই ভূমি থেকে তাদের উচ্ছেদ কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। হাজারো আদিবাসীকে বাস্তুহারা করে বিনোদনের জায়গা নির্মাণ কোনো সচেতন নাগরিকের পক্ষেই মেনে নেয়া অসম্ভব।
তারা বলেন, আমরা আদিবাসী গ্রামগুলো ঘুরে বসবাসরত আদিবাসীদের ভাষ্য জানার চেষ্টা করেছি। তাদের সাথে কথা বলে জানতে পারি, ঐ এলাকায় বন সংরক্ষণের নামে সরকারের অধিগ্রহণের বিপরীতে আদিবাসীরা যেকোন মূল্যে তাদের জমি ও বন রক্ষা করতে প্রস্তুত। প্রয়োজনে পীরেন স্নাল ও চলেশ রিছিলদের মতো জীবন দিতেও তারা কুণ্ঠা বোধ করবে না। কেননা স্থানীয় আদিবাসীরা বংশানুক্রমে এই বনকে আবিমা (মাটি মা) বা মায়ের মতোই গণ্য করে। একারণেই আদিবাসীরা মাতৃতুল্য ভূমি বা বনকে তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অনুযায়ী দলিল বা রেজিস্ট্রি করেনি।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, সরকারি দল তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এসব প্রথাগত অধিকার, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তাই সরকারের এই হঠাৎ বন সংরক্ষণ প্রক্রিয়া তাদের বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। তারা চায়, মধুপুর গড় অঞ্চলে বসবাসরত প্রায় ১৫ হাজার আদিবাসীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের বসতভিটা, স্কুল, মসজিদ, গির্জা, মন্দিরসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কবর, শ্মশান ও আবাদি জমিকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা বাতিল করা হোক।
সকল নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকারের কথা উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি, মুক্তিযুদ্ধের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান ও আইএলও এর কনভেনশন সূত্রে রাষ্ট্র আদিবাসীদের সুরক্ষা প্রদানে বাধ্য।

Back to top button