মধুপুরে আদিবাসীদের জমি দখল করে উডলট বাগান করার প্রচেষ্টা বনবিভাগের

ওয়েলসন নকরেক; টাঙ্গাইলের মধুপুরে শত বছর ধরে ভোগ করে আসা স্বতদখলীয় জমিতে উডলট করার উদ্দেশ্যে বিনা নোটিশে আদিবাসীদের কলা বাগান কেটে ফেলেছে বনবিভাগ। ১৪ সেপ্টেম্বর সোমবার সকাল ১০.০০টার দিকে মধুপুর উপজেলার পেগামারি গ্রামের বাসন্তী রেমার জমির কলা গাছ কেটে সেখানে একাশিয়া গাছের চারা লাগানো শুরু করে বনবিভাগের কর্মচারীরা। টাঙ্গাইল বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক(এসিএফ) জামাল হোসেন তালুকদারের নেতৃত্বে এই নিধনযজ্ঞ চলে।
পরে খবর পেয়ে স্থানীয় আদিবাসীরা ক্ষুব্ধ হয়ে এসিএফকে চার্জ করে। এসময় জমির মালিক বাসন্তী রেমা জানতে চান, বিনা নোটিশে কেন তার কলা গাছগুলো কাটা হয়েছে। জবাবে এসিএফ জামাল হোসেন তালুকদার বলেন, “আসলে আমরাতো জানতামনা এইটা আপনার জমি। আমরা বাঙ্গালির জমি মনে করেছিলাম।”
এক পর্যায়ে আদিবাসীরা আরো ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে তিনি দোখলা বন বিশ্রামাগারে আশ্রয় নেন এবং স্থানীয় প্রশাসনকে খবর দেন।
এই ব্যাপারে বিক্ষুব্ধ বাসন্তী রেমা বলেন, “আমার নানা-নানীরা এই জমিতে চাষাবাদ করেছেন, এখন আমরা চাষাবাদ করে খাই। এই জমি বনবিভাগের হয় কেমনে?”
সকাল ১১.৩০টায় স্থানীয় আদিবাসী নেতৃবৃন্দের সাথে বনবিভাগের কর্মকর্তাদের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় আদিবাসী নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন মধুপুর শাখার সভাপতি উইলিয়াম দাজেল, বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জন জেত্রা, ফিলিপ কুবি প্রমুখ। আলোচনায় আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর বুধবার দোখলা রেস্ট হাউজে মীমাংসার জন্য বসার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জন জেত্রা।
এদিকে এই ঘটনায় আদিবাসীদের মধ্যে ফের উচ্ছেদ আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা আশংকা করছেন এইভাবে ধাপে ধাপে অন্যদের জমিতেও দখলদারিত্ব চালাবে বনবিভাগ। এই আশংকার কারণও রয়েছে অবশ্য। আদিবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায় কয়েকদিন আগেও উইলিয়ায়াম দাজেলের জমির কলা গাছ কেটে ফেলেছে বনবিভাগ। এই বিষয়ে উইলিয়াম দাজেল বলেন, “আমি ৪০ বছর আগে এক লোকের কাছ থেকে জমিটা কিনেছি। সেই জমির কলা গাছ সেদিন কেটে ফেলল। এই নিয়ে রেঞ্জারের সাথে অনেক বার্গেনিং করেছি।” তাছাড়াও ঝান্দা মৃ নামের এক আদিবাসীর স্বতদখলীয় জমির কলা বাগানও সাফ করতে চেয়েছিল বনবিভাগ। বাসন্তী রেমা, গেটিস জেত্রা, লক্ষী চাম্বুগংরা এই অন্যায়ের সুষ্ঠু বিচার চান এবং তাদের ভূমির সঠিক বন্দোবস্ত চান।