অন্যান্য

ভেঙ্গে ফেলা হল সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের পাঠশালা

বই হাতে হেঁটে যাচ্ছে সীমা, সনিয়া ও অন্তরা। তবে এই যাওয়াটা অন্যদিনের মত না। কারণ সাধারণত স্কুল ছুটি হলে শিশুরা খুশি মনে বাড়ি ফেরে। আজ তাদের চোখে মুখে বিষন্নতার ছাপ। কত কস্ট মনের মধ্যে যা চেহারার দিকে তাকালেই বুঝা যায়। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই এক নি:শ্বাসে বললো ‘আমরা ক্লাস ওয়ানে পড়ি, আজকে আমাগো স্কুল ভাইঙ্গা ফালাইবো, তাই ম্যাডাম তারাতারি ছুটি দিয়া দিছে।’ কমলমতী সুবিধাবঞ্চিত এই তিন শিশু শিক্ষার্থীদের মতো দুটি স্কুলের সকল শিশুর স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে তাদের ভবিষ্যত শিক্ষা জীবন। কারণ মঙ্গলবার রেলওয়ে কর্র্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযানের অংশ হিসেবে ইসদাইর রেলওয়ে বস্তির সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য তৈরী করা তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভেঙ্গে দিয়েছে।

এরমধ্যে সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গনের ‘সমগীত পাঠশালা’ ও স্বপ্নডানা স্কুল (২) সম্পূর্ন গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও আরবান আনন্দ স্কুল সম্পূর্ণ ও ইসদাইর রাবেয়া হোসেন উচ্চ বিদ্যলয়ের একাংশ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। বিনা পয়সায় লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষা উপকরনও পেত স্বপ্ন ডানা ও সমগীত স্কুলের শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন সাংষ্কৃতিক ব্যক্তি, সংগঠন সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে শিক্ষার্থীদের দিকে। আনন্দঘন সময়ও কাটিয়েছেন তারা সুবিধাবঞ্চিত এই শিশুদের সাথে। ফলে অন্যরকম এক পরিবেশে হাসি খুশি ভাবেই তারা এখানে লেখাপড়া করতো। কিন্তু স্মৃতির পাতায় স্থান করে নেয়ার আগেই অল্প সময়ের মধ্যে সব কিছু অতীত হয়ে গেছে কোমলমতি এই শিশুদের কাছে। বুলডোজার দিয়ে প্রিয় শিক্ষাঙ্গন গুড়িয়ে দেয়ার দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে ছিল অনেকটা সময়। মিন মিন করে ১০ বছরে এক ছেলে শিক্ষার্থী বলতে থাকে, আমাগো স্কুলটা ভাইয়া ফালাইলো, আমরা এখন পড়মু কই?
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) সরজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ভোর থেকেই ব্যস্ত সময় পার করে বস্তিবাসী। অভিযানের বুলডোজার জিনিস পত্র গুড়িয়ে দিতে পারে এই ভয়ে ভোর থেকেই নিজের ঘরের সকল কিছু সরাতে ব্যস্ত তারা। স্কুল শেষ করে ব্যাগ কাঁধে ছোট্ট মেয়েটিও মাকে সাহায্য করছে সরঞ্জাম স্থানান্তর করতে।

বস্তির বাসিন্দা আকবর আলী বলেন, এই পৃথিবীতে গরীব মানুষ সবই অবৈধ। ঘর ভাইঙ্গা দিল, আমরা এহন কই যামু। আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আর কয়দিন থাকা যায়।

উচ্ছেদ চলাকালে বুলডোজার সমগীত পাঠশালার স্কুল ঘর ভাঙ্গতে উদ্দ্যত হলে বিদ্যালয়ের শিক্ষক সজীব স্কুলের সাইনবোর্ড হাতে নিয়ে বুলডোজারের সামনে দাঁড়িয়ে যানন। এবং কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানান স্কুল ঘর না ভাঙ্গতে । কিন্তু তার সকল মানবিক আবেদন উপেক্ষা করে শেষে গুড়িয়ে দেয়া হয় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাঠশালা।

মঙ্গলবার শহরের ইসদাইর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেল লাইনের দু পাশের স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। সকাল ১০ থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত চলে এ অভিযান।

রেলওয়ে কর্তৃপ্ক্ষ জানান , নারায়ণগঞ্জকে আরো উন্নত করতে বিভিন্ন উন্নয়ণ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। নারায়ণগঞ্জের ডাবল লাইন প্রকল্পের বাস্তবায়নে আমাদের এ অভিযান । উক্ত অভিযানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে পুলিশী টহল লক্ষ করা যায়। তবে উচ্ছেদ চলাকালে কোনরূপ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।

কার্টেসীঃ pressnarayanganj.com

Back to top button