ভূমি রক্ষায় সিলেটে মনিপুরী যুব সমিতির সংবাদ সম্মেলন
সিলেটের মনিপুরী যুব সমিতির ভূমি গ্রাস করতে উঠে পড়ে লেগেছে একটি ভূমিখেকো চক্র। এনিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু করেছেন তারা। ভূমিদস্যুদের কবল থেকে এই ভূমিটি রক্ষার জন্য তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, ভূমিমন্ত্রী, সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ সচেতন সিলেটবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন মনিপুরী যুব সমিতির সভাপতি ধীরেন সিংহ।
শনিবার নগরীর শিবগঞ্জস্থ সেনপাড়া মনিপুরী যুব সমিতির মাঠে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই আহবান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে ধীরেন সিংহ বলেন, বিগত এসএ খতিয়ান অনুযায়ী সিলেটের রায়নগর মৌজার জেএল নং-৯৭, খতিয়ান নং-১৮৩, দাগ নং-১৪৩ এর ০.৪৮ একর তালিকাভূক্ত মালিক ছিলেন দিগেন্দ্র সিং মণিপুরী ও নৃপেন্দ্র সিং মণিপুরী। তাদের পিতার নাম জয় সিং মণিপুরী। বিনা রেজিষ্টারি দলিলে খতিয়ানভূক্ত ছিলেন মুজাহের পুরের শাহ নাজমুল হোসেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় নৃপেন্দ্র সিং মণিপুরী তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভারতে চলে যান। পরে এই সম্পত্তিটি তৎকালীন শত্রু সম্পত্তি ‘অর্পিত’ আইনদ্বারা পরিবর্ধিত হয়ে যথারীতি অত্র ভূমিটিও তালিকাভূক্ত হয়।
প্রায় ৫০ বছর আগে এখানে মনিপুরী যুব সমিতির কার্যালয় স্থাপন করা হয়। এই সমিতি থেকে মণিপুরী সম্প্রদায়ের জন্য নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। আর তাই এ সম্প্রদায়সহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষের জন্যও একটি জাতীয় সম্পদে পরিণত হয়েছে।
এই সম্পদের উপর একটি ভূমিখেকো চক্রের কুদৃষ্টি পড়েছে। তারা তা গ্রাস করতে উঠে পড়ে লেগেছে। এরই প্রতিবাদে গত ৩ মার্চ সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। ৭৭ সালে এখানে মণিপুরী তাঁত শিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে উঠে। পরে পর্যায়ক্রমে আরো নানা কার্যক্রম এখান থেকে পরিচালিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, মণিপুরী যুব সমিতিকে এখান থেকে উৎখাত করতে অবৈধভাবে কয়েকজন ভূমিখেকো নানা চক্রান্তে লিপ্ত হয়। তবে স্থানীয় মণিপুরীদের প্রতিরোধের মুখে তাদের বারবার ব্যর্থ হতে হয়েছে। ভূমিটি বিভিন্ন সময়ে সরকার ও প্রশাসনের অনেক বড়বড় কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পরে মণিপুরী সম্প্রদায়ের আবেগের এই জায়গাটি দখল করতে ভূমিখেকো আব্দুল মোছাব্বিরের সহযোগিতায় মিথ্যা বানোয়াট ও জালিয়াতির মাধ্যমে চিহ্নিত শিবির ক্যাডার রঞ্জন সিংহ নোঙথন ও সূর্য কুমার উরফে বাবুনু তৎপর হয়ে উঠে। এখনো তারা এই ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের পূর্বপুরুষ নদিয়া সিং মণিপুরী পৃথক খতিয়ানে তালিকাভূক্ত এবং তাদের উত্তরসুরীরা সেখানেই বসোবাস করছেন। জালিয়াতির মাধ্যমে টুলটিকর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ভূমিখেকো আব্দুল মোছাব্বিরের কাছ থেকে জাল ও বানোয়াট সনদ সংগ্রহ করে আংজাও সিংকে নদিয়া সিংয়ের সহোদর প্রমানের জন্য হাস্যকর অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি মৃত থোয়াবা সিংয়ের একমাত্র সন্তান। আলোচ্য ভূমিতে নদিয়া সিং আগমনের বহুপূর্বে আংজাও সিং মণিপুরীর বংশধরেরা যে বসোবাস করছেন তা অতীতে বারবার প্রমাণ হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলণে তিনি বলেন, গত ৫৪ বছর থেকে এখানে রঞ্জন সিং বা তাদের উত্তরসুরীদের বসোবাস বা দখলের প্রমাণ নেই। বর্তমানে নৃপেন্দ্র সিংয়ের প্রাচীর ঘেরা এই ভূমিতে রঞ্জনদের কোন দখল নেই। কিন্তু ১০৪৩/১২, আরজিতে এবং সাম্প্রতিক এক সংবাদ সম্মেলনে তা রঞ্জনদের দখলে আছে বলে চরম মিথ্যাচার করা হয়েছে।
ধীরেন সিং বলেন, নদীয়া সিং মণিপুরী ও আংজাও সিং মণিপুরীর মধ্যে কোনধরণের রক্তের সম্পর্ক নেই। কিন্তু শিবির ক্যাডার রঞ্জন সিং মণিপুরী জালিয়াতির মাধ্যমে এই মূল্যবান সম্পত্তি গ্রাস করতে চাইছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় রঞ্জন সিংয়ের বাড়িতে নিয়মিত জামায়াত শিবিরের বৈঠক হতো। সেই থেকে এলাকাবাসী তাকে শিবির ক্যাডার বলে থাকেন। তিনি মণিপুরী সম্প্রদায়ের আবেগ অনুভূতির এই ভূমিটুকু সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, ভূমিমন্ত্রী, সিলেটের জেলা প্রশাসন, সাংবাদিক সমাজসহ সিলেটের সর্বস্থরের সচেতন মানুষের সহায়তা কামনা করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সিলেট জেলা বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন, ২০নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মুহিবুর রহমান মহিব, সিলেটের শ্রী শ্রী জগন্নাত জিউর আখড়া কমিটির সভাপতি সুরজিৎ সিং, মনিপুরী সাহিত্য সংসদের যুগ্ম সম্পাদক সমেন্দ্র সিংহ ও মুক্তিযোদ্ধা মনমোহন সিংহ।