মতামত ও বিশ্লেষণ

বিলাইছড়িতে সেনাসদস্য কর্তৃক কিশোরী ধর্ষণ ও নির্যাতনের প্রতিবাদে নাগরিক সমাবেশের প্রচারপত্র

সংগ্রামী সুধী,
আমরা নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংগঠনসমূহ অত্যন্ত ক্ষোভ ও দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি যে, দেশে আদিবাসী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগণের উপর নিপীড়ন, নির্যাতন ও অত্যাচারের মাত্রা ক্রমশ: বেড়ে চলেছে। পাহাড়ে ও সমতলে আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। কিন্তু এসব ঘটনার যথাযথ প্রতিকার মিলছে না। ক্ষতিগ্রস্তরা পাচ্ছেন না ন্যায় বিচার। উপরন্তু, অনেক ক্ষেত্রে রক্ষক নিজেই ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে।

গত ২২ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখ দিবাগত রাতে রাঙ্গামাটি জেলাধীন বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের ওড়াছড়ি গ্রামে এক মারমা কিশোরী (১৭) ফারুয়া সেনাক্যাম্পের সেনাসদস্য কর্তৃক নিজ-বাড়িতে ধর্ষণের শিকার হয়েছে এবং ছোট বোন (১৫) শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, ১৩ বেঙ্গলের দীঘলছড়ি সেনা জোনের অধীন ফারুয়া সেনা ক্যাম্পের সুবেদার মিজানের নেতৃত্বে একদল সেনাসদস্য ঐ সময় উক্ত ওড়াছড়ি গ্রামে তল্লাসী অভিযান চালায়। এক পর্যায়ে সেনাদলের দুই সদস্য তল্লাসীর নাম করে ধর্ষিতা কিশোরীর বাড়িতে প্রবেশ করে ভিকটিমের বাবা-মাকে বাড়ির বাইরে বের করে দেয়। এরপর সেনাসদস্যদের মধ্যে একজন দরজায় অস্ত্র নিয়ে পাহারা দেয়, অপরজন মারমা কিশোরীর কক্ষে ঢুকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণের সময় কিশোরী চিৎকার করলেও অস্ত্রের মুখে বাবা-মা এগিয়ে যেতে পারেনি। এ সময় ধর্ষণের শিকার কিশোরীর আরেক ছোট বোনকেও শ্লীনতাহানি চেষ্টা করা হয় বলে জানা যায়। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ধর্ষণের ঘটনাটি সেনাদলের কম্যান্ডার সুবেদার মিজানকে জানানো হলে সুবেদার মিজান এব্যাপারে নিজে তদন্ত করে শাস্তি দেবেন বলে জানান। তবে তিনি এব্যাপারে কাউকে না জানানোর নির্দেশ দেন।

২৩ জানুয়ারি দুপুরের দিকে ধর্ষিতা কিশোরীকে রাঙ্গামাটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর স্থানীয় প্রশাসন ও প্রশাসনের দৌঁড়ঝাপ শুরু হয়। সন্ধ্যার পর থেকেই একদল পুলিশ এসে ভিকটিমদেরকে সার্বক্ষণিক প্রহরায় রেখেছে। চাকমা সার্কেল চীফ রাজা দেবাশীষ রায় ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য বাঞ্চিতা চাকমা হাসপাতালে ভিকটিমদের দেখতে গিয়ে বাধার শিকার হয়েছেন। এই ঘটনায় এখনো কোন মামলা দায়ের করা হয়নি। হয়রানি ও প্রতিশোধের ভয়ে ভিকটিম বা ভিকটিমের মা-বাবারা মামলা করতে সাহস করছে না বলে জানা গেছে। ভিকটিমের মা-বাবারা নিরীহ জুমচাষী।

আমরা দেশের নাগরিক হিসেবে এবং মানবাধিকারকামী সংগঠনসমুহের সদস্য হিসেবে এই বর্বর ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সৃষ্ট আমাদের সেনাবাহিনী নানা সুনাম অর্জন করেছে দেশে ও বিদেশে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবতার কাজে আমাদের সেনাবাহিনী প্রশংসনীয় অবদান রাখছে। সুতরাং বাংলাদেশের মহান সেনাবাহিনী তার কতিপয় দুস্কৃতকারী ও লম্পট সদস্যের ব্যক্তিগত কুকর্মের দায় নিতে পারে না। অতএব, দোষী সেনা সদস্যদের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

আজকের প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে আমাদের দাবিঃ
১। অবিলম্বে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে অভিযুক্ত সেনাসদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।
২। ভিকটিম পরিবারকে পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে হবে এবং সকল প্রকার হয়রানি ও হুমকি-ধামকি বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি ভিকটিমদের সুচিকিৎসা ও যথাযথ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩। আদিবাসী নারীসহ সকল নারী নির্যাতনের বিচার দ্রুত ও যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে হবে।
৪। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, নাগরিক উদ্যোগ, এএলআরডি, আইইডি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, নারীপক্ষ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, জনউদ্যোগ, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, সেন্টার ফর সোস্যাল এক্টিভিজম, কাপেং ফাউন্ডেশন, আরডিসি, আদিবাসী কালচারাল ফোরাম, পিসিপি, বাগাছাস, গাসু, সাসু, জেএইউপি, আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক, কুবরাজ, বাআছাসপ, বিএমএসসি, টিএসএফ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, জাতীয় হাজং সংগঠন, বাহাছাস ও হাসুক।
২৬ জানুয়ারি, ২০১৮ শুক্রবার, জাতীয় জাদুঘর, শাহবাগ, ঢাকা

Back to top button