জাতীয়

বিলাইছড়িতে সেনাসদস্য কর্তৃক কিশোরী ধর্ষিত হওয়ার প্রতিবাদে পিসিপির বিক্ষোভ

সতেজ চাকমাঃ গত ২২ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১.৩০ ঘটিকার সময় রাঙ্গামাটির বিলাইছড়িতে ফারুয়া সেনা ক্যাম্পের জনৈক সেনাসদস্য কর্তৃক এক মারমা কিশোরীকে (১৭) নিজ বাড়ীতে জোরপূর্বক ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং ধর্ষক সেনাসদস্যের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কর্তৃক এক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে কলাভবন প্রদক্ষিণ করে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর ঘুরে টিএসসির রাজু ভাষ্কর্যে এসে শেষ হয়।পরে সেখানে পিসিপি ঢাবি শাখার সভাপতি অমর শান্তি চাকমার সভাপতিত্বে সিনিয়র সদস্য সতেজ চাকমার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তথ্য ও প্রচার সম্পাদক লিটন চাকমা, ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থী সরল তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাবি শাখার সিনিয়র সদস্য জিনেট চাকমা। এছাড়া সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের (বিএমএসসি) ঢাকা মহানগর শাখার তথ্য ও প্রচার সম্পাদক উক্যনু মারমা, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম (টিএসএফ) এর ঢাকা মহানগর শাখার সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক হ্লাচন্দ্র ত্রিপুরা,হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য রুনি চাকমা, বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থী অংশৈচিং মারমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক রিবেং দেওয়ান, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সদস্য ব্যবিলন চাকমা এবং পিসিপি কেন্দ্রীয় সদস্য নিপন ত্রিপুরা। বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি সম্পাদনের ২০ বছরের পরওপার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়ার ফলে পাহাড় থেকেচুক্তি মোতাবেক সেনাবাহিনী অপসারণ করা হয়নি উপরন্তু পাহাড়ে জারি করে রাখা হয়েছে অঘোষিত সেনাশাসন।যার ফলে সেনাবাহিনী কখনো প্রত্যক্ষ কখনোবা পরোক্ষ ভাবে রাষ্ট্রীয় লাইসেন্স নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে নানা সহিংসতা সৃষ্টি করে যাচ্ছে।বক্তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে সেনা-সেটলার কর্তৃক নানা সহিংসতা ঘটানো হয়েছে। এসবের যথাযথ বিচার না হওয়ার ফলে রাষ্ট্রের এ বিচারহীনতার সংস্কৃতির বেড়াজালে বন্দী হয়ে সেনাসদস্য কর্তৃক অবাধে এধরনের ধর্ষণের মত নৃশংস ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে।তাই বক্তারা অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক সকল অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার সহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি দ্রূত ও যথাযথ বাস্তবায়ন তথা ধর্ষক সেনাসদস্যের যথাযথ বিচার দাবী করেন। অন্যথায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আবারো পূর্বের অস্থিতিশীল অবস্থায় ফিরে গেলে সরকারকে এ দায় নিতে হবে বলে হুশিয়ার করেন।পরে সংগঠনের সভাপতি অমর শান্তি চাকমার সমাপনি বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সমাবেশ সমাপ্ত হয়। উল্লেখ্য গত ২২ জানুয়ারি ২০১৮ দিবাগত রাত আনুমানিক ১:৩০ টায় রাঙ্গামাটি জেলাধীন বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের অরাছড়ি গ্রামে এক মারমা কিশোরী (১৭) ফারুয়া সেনা ক্যাম্পের সেনাসদস্য কর্তৃক নিজ বাড়িতে ধর্ষণের শিকার হয়েছে।জানা গেছে, সুবেদার মিজান এর নেতৃত্বে ফারুয়া সেনা ক্যাম্পের একদল সেনাসদস্য ঐ সময় উক্ত অরাছড়ি গ্রামে আসে। এসময় সেনাদলের দুই সদস্য তল্লাশীর কথা বলে উক্ত ধর্ষিতা কিশোরীর বাড়িতে প্রবেশ করে কিশোরীর বাবা-মাকে বাড়ির বাইরে আসতে বাধ্য করে। এরপর সেনাসদস্যদের মধ্যে একজন দরজায় অস্ত্র নিয়ে থাকে, অপরজন উক্ত মারমা কিশোরীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণের সময় কিশোরী চিৎকার করলেও অস্ত্রের মুখে বাবা-মা এগিয়ে আসতে পারেনি।এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ধর্ষণের ঘটনাটি সেনাদলের কম্যান্ডার সুবেদার মিজানকে জানানো হলেও সুবেদার মিজান এব্যাপারে নিজে তদন্ত করে শাস্তি দেবেন বলে জানান। তবে তিনি এব্যাপারে কাউকে না জানানোর নির্দেশ দেন। আর যাওয়ার সময় পরদিন সকালে এলাকার মেম্বার, কার্বারী ও হেডম্যানকে ফারুয়া সেনা ক্যাম্পে গিয়ে দেখা করার নির্দেশ দেন।২২ জানুয়ারি সকালে স্থানীয় মেম্বার, কার্বারী ও হেডম্যানগণ ফারুয়া সেনা ক্যাম্পে গেছেন এবং এখনও পর্যন্ত ফিরে আসেননি। অপরদিকে এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় এবং সেনাবাহিনীর ভয়ে ধর্ষিতার বাবা-মা ও আত্মীয় স্বজনরা এখনও চিকিৎসার জন্য ধর্ষিতাকে কোন হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেননি।

Back to top button