অন্যান্য

বিনা চিকিৎসায় ঢাবি শিক্ষার্থী সুমন চাকমা’র মৃত্যুতে নিন্দার ঝর

সতেজ চাকমা: দীর্ঘ দুই বছর ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে ক্যান্সারকে হারই মানিয়েছিলেন সুমন চাকমা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এই শিক্ষার্থীর বাড়ী খাগড়াছড়ি জেলার সদর উপজেলায়।তার বাবা সুপেন চাকমা একজন কৃষক। কৃষক বাবার পক্ষে ক্যান্সারের মত রোগের ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ যোগানো সম্ভব না হওয়ায় বিভিন্ন মানবতাবাদী মানুষের সহায়তায় সুমন চাকমা ভারতে এই ক্যান্সার চিকিৎসা চালিয়ে নেন। গত বছর (২০১৯) সালের জুন মাসে ভারত থেকে ফিরে এসে সুস্থ বোধ করায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করাও শুরু করেন তিনি। কিন্তু ২০২০ সালের শুরুতে আবারও তার অসুস্থটা দেখা দেয়। কিন্তু ঠিক এ সময়েই করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় সারা বিশ্বজুড়ে। এতে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরেও কোনো হাসপাতাল তাকে ভর্তি নেয়নি।অনেক ডাক্তার করোনা সন্দেহে তাকে করোনার টেস্ট করার পরামর্শ দেন। কিন্তু সুমন চাকমা’র স্বাস্থ্যগত আগের রিপোর্ট না দেখে কেবলমাত্র সন্দেহ বশত ভর্তি না নেওয়ার কারণে শেষমেশ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার জন্য বাড়ীতে নিতে বাধ্য হন তার পরিবার। এ নিয়ে বিগত ২৬ মার্চ সুমন চাকমা তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুকের টাইমলাইনে লিখেন- “আমার করোনা হয় নি অথচ পরিস্তিতি দেখে মনে হচ্ছে করোনার জন্যেই আমাকে মারা যেতে হবে।” শেষ পর্যন্ত তাঁর আশংকায় সত্যি হয় গতকাল (৬ এপ্রিল ২০২০)। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ গণমাধ্যমে নিন্দার ঝর ওঠে। এভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ার খবর পেয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ভিডিও কনফারেন্সে এ বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, রোগী কেন ফেরত যাবে? রোগী দ্বারে দ্বারে ঘুরে কেন মারা যাবে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র কীভাবে মারা যাবে? রোগী যেখানে যেখানে গিয়েছিল সেখানে সেসব ডাক্তারের দায়িত্ব ছিল আমি তাদের নাম জানতে চাই।

এছাড়া তিনি একই কনফারেন্সে আরো বলেন, সবার আতংক থাকবে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করে রোগী দেখতে হবে।ডাক্তারদের এরকম দুর্বল মানসিকতা দিয়ে কাজ হবেনা বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

এ নিয়ে মতামত জানতে চাওয়া হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. জোবাইদা নাসরীণ আইপি নিউজকে জানান, এটা অত্যন্ত দু:খজনক। এভাবে সন্তানতুল্য একজন শিক্ষার্থী বিনা চিকিৎসাই মারা যাওয়াটা পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। প্রথম দিকে ডাক্তারদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী না থাকার ব্যাপারেও চিকিৎসা ব্যবস্থার দুর্বলতার কথা জানান ঢাবির নৃবিজ্ঞানের এই শিক্ষক।

এদিকে এবিষয়ে জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি রিবেং দেওয়ান বলেন , ব্যাপারটি আসলে দু:খ জনক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীকে এভাবে বিনা চিকিৎসায় মরতে হচ্ছে চিকিৎসা ব্যবস্থার গলদ এবং গাফিলতির কারণে। পুরো বাংলাদেশের যে চিকিৎসা ব্যবস্থা তাতে করোনার কারণে বাকী রোগে আক্রান্ত রোগীদের যেন চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা না হয়। এক্ষেত্রে ডাক্তারদের আরো মানবিক এবং যত্নবান হওয়া দরকার। সরকারকে এ ব্যাপারে আরো আন্তরিক হওয়ার দাবীও করেন এ ছাত্র নেতা।

এব্যাপারেও একইভাবে দু:খ প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আরেক শিক্ষক ড. খায়রুল চৌধুরী। তিনি বলেন, চিকিৎসা ব্যবস্থার সামগ্রিক ব্যর্থতার একটি উদাহরণ এটি। এভাবে সন্তানতুল্য একজন শিক্ষাথী মারা যাওয়াটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও সামগ্রীক ব্যর্থতা বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এ ব্যাপারে চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আরো ঢেলে সাজানো এবং দায়বদ্ধ করারও আহ্বান জানান এই শিক্ষক। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ ব্যাপারে নিন্দার ঝর উঠেছে ।

Back to top button