জাতীয়

‘বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে ধর্ষণের মত ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে’-বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা

শ্যাম সাগর মানকিন: বিচারহীনতা ধর্ষণকে প্রণোদনা দেয়, অন্যায় কে প্রণোদনা দেয়, বিচারহীন সংস্কৃতির ফলেই ধর্ষণের মত ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে’ শুক্রবার শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এ কথা বলেন। সীতাকুন্ডের মহাদেবপুর ত্রিপুরা পাড়ায় আদিবাসী ত্রিপুরা কিশোরী ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আয়োজনে সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি প্রেতাত্মা আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি সর্ব ক্ষেত্রেই গ্রাস করেছে। এই পাকিস্তানি প্রেতাত্মায় সীতাকুন্ডে ত্রিপুরা কিশোরীদের উপর ঝাঁপিয়ে পরেছিলো।’ তিনি আরো বলেন, ‘ধর্ষণের প্রণোদনা সমাজ থেকে আসে, বিচারহীনতার সংস্কৃতি যখন সমাজে স্থায়ী হয়, অপরাধী অপরাধ করে পার পেয়ে যায় তখন সে ধর্ষণের উৎসাহ পায়।’ আগামীতে তরুনরা লড়াই করে দেশকে মানবিক করে তুলবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস তার বক্তব্যে বলেন, ‘ধর্ষণ কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি প্রান্তিক আদিবাসীদের আরো প্রান্তিকতর করে ফেলার একটা হাতিয়ার মাত্র।’ রাষ্ট্রকে কেবল ধর্ম নিরপেক্ষ হলে হবেনা, সাথে সাথে জাতি নিরপেক্ষ, লিঙ্গ নিরপেক্ষ হতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
‘দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৯ ভাগের মত বিভিন্ন সংখ্যালঘু দেশে রয়েছে অথচ তাদেরকেও এই আমরা সহ্য করতে পারিনা, আমরা এতোটাই অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছি’ বলে মন্তব্য করেন নাট্যকার ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতন জায়গাতেও আজ ধর্ষকের বিচরণ সম্ভব হচ্ছে বিচারহীনতার কারনেই বলেও তিনি বক্তব্য রাখেন। আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘এই রাষ্ট্রের সরকার মানবিক হয়ে উঠবে বলে আমরা আশা করতাম। কিন্তু এই রাষ্ট্র তা হয়ে ওঠেনি। আমরা স্বপ্ন দেখি একদিন এই রাষ্ট্র সংবেদনশীল, অনুভূতিশীল, প্রগতিশীল হয়ে উঠবে।’ আগামীতে তরুনেরা মুক্তিযুদ্ধের যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা সে চেতনায় দেশ এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি খুব নাজুক বলে মনে করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন। ‘এই রাষ্ট্র ধর্ষকের পক্ষে, এই রাষ্ট্র নিপীড়কের পক্ষে’ বলেও বক্তব্য রাখেন তিনি। বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের নেত্রী ফাল্গুনী ত্রিপুরা বলেন, ‘বিচারহীনতার এই কালে সীতাকুন্ডে ত্রিপুরা কিশোরী ধর্ষণ ও হত্যার বিচার কতটুকু হবে সে নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।’ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের আরেক নেত্রী রাখী ম্রং বলেন, ‘বাংলাদেশে বিগত সময়ে আদিবাসী নারী ধর্ষণের ঘটনায় কোন বিচার সম্পন্ন হয়নি, এই বিচারহীনতার সংস্কৃতির জন্য আদিবাসী নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে।’ সমাবেশে বক্তারা সীতাকুন্ডে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার আদিবাসী ত্রিপুরা কিশোরী শুকলতি ত্রিপুরা(১৫) ও ছবি রানী ত্রিপুরা(১১)-র খুনীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইননুযায়ী শাস্তি প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি আহবান করেন। তাছাড়া নিহতের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ, সীতাকুন্ডের আদিবাসী পাড়ায় বখাটের উৎপাত বন্ধ ও পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ সারাদেশে আদিবাসী নারীদের উপর সহিংসতারোধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী তোলা হয়।

অন্যান্যদের মধ্যে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কাপেং ফাউন্ডেশনের পল্লব চাকমা, আদিবাসী ফোরামের হিরন মিত্র চাকমা, ত্রিপুরা কল্যান সংঘের বরেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, আদিবাসী মানবাধিকার কর্মী প্রমীলা মাইন থিন, পিসিপি বান্দরবন জেলার নেতা বা মং মারমা, ত্রিপুরা ছাত্র সংগঠনের অসীম রায় ত্রিপুরা, গারো স্টুডেন্ট ফেডারেশনের জুয়েল হাউই, গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়নের তমাল স্নাল, বাগাছাস ঢাকা মহানগরের জিউস ঘাগ্রা, বর্মন ছাত্র পরিষদের প্রকাশ বর্মন, বাংলাদেশ হাজং ছাত্র সংগঠনের আশিষ হাজং, খাসি স্টুডেন্ট ইউনিয়নের ওয়ানলি আমসে প্রমূখ।

Back to top button