বান্দরবানে প্রশাসনের বাধা উপেক্ষা করে জেএসএস এর চুক্তির দুই দশক পালন
বান্দরবান প্রতিনিধিঃ শনিবার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২০তম বছর পূর্তি উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি বান্দরবান জেলা কমিটির উদ্যোগে বেলা ১.৩০ঘটিকার সময় বিক্ষোভ মিছিল ও বেলা ২.০০ঘটিকার সময় বান্দরবান পুরাতন রাজবাড়ি মাঠে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
চুক্তির দুই দশক পুর্তিকে কেন্দ্র করে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল এবং গণসমাবেশকে বাধাগ্রস্থ করার জন্য বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় সমাবেশ এবং বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিতে আসা লোকজনকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিরাপত্তার নামে তল্লাশি করে জনগণকে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আয়োজকরা জানান, গণসমাবেশকে বাধাগ্রস্থ করার জন্য সকাল ৮.০০ঘটিকা হতে বান্দরবান- রাঙ্গামাটি সড়কের বালাঘাটা বাজারে, বান্দরবান- রোয়াংছড়ি ও বাঘমারা সড়কের হাংসামা পাড়া এবং বান্দরবান- রুমা ও থানছি সড়কের ফারুক পাড়া এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বান্দরবান সদর জোনের নেতৃত্বে নিরাপত্তার নামে তল্লাশি করে জনগণকে হয়রানি করে।
পরে দুপুর ১২.০০ঘটিকার সময় সমাবেশে যোগদানের উদ্দেশ্যে রাজবিলা এলাকা হতে ২টি বাস গাড়ি বালাঘাটা বাজারে পৌছালে তল্লাশি শেষে ১টি গাড়ি ছেড়ে দেয় আর ১টি গাড়িতে থাকা লোকজনদের প্রথমে নাম, ঠিকানা, কি করে ইত্যাদি জিজ্ঞাসা করে। গণসমাবেশে যোগদান করতে আসছে জানালে সবার জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে হবে বলে প্রায় ১.৩০ (দেড়)ঘন্টা গাড়িটি আটকে রেখে হয়রানি করা হয়। এছাড়া একই সড়ক দিয়ে গণসমাবেশে যোগাদান করতে আসা ২৫-৩০তি গাড়ি নিরাপত্তার নামে তল্লাশি করে জনগণকে হয়রানি করে। অন্যদিকে বান্দরবান – রোয়াংছড়ি ও বাঘমারা সড়কে হাংসামা পাড়া এলাকায় গণসমাবেশে যোগদান করতে আসা ২৫টির অধিক গাড়িকে আটকে তল্লাশি করা হয়। একইভাবে বান্দরবান – রুমা ও থানছি সড়কের ফারুক পাড়া এলাকায়ও গাড়িগুলোতে একই কায়দায় তল্লাশি করা হয়। ফলে যথাসময়ে সমাবেশে যোগদান করা সম্ভব হয়নি। এদিকে বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে জনগণ সমাবেশে আসতে দেখে বান্দরবান সদর থানা ওসি অফিসে এসে মিছিল করা যাবে না এবং সরকার ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না মর্মে জানায়। কেন জিজ্ঞাসা করিলে তিনি উপরের নির্দেশ বলে জানায়। এরপর সামগ্রিক বিষয়ে জেলা প্রশাসককে জানালে তিনি পুলিশ সুপারের সাথে বিস্তারিত কথা বলা অনুরোধ করেন। পুলিশ সুপারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি র্যালি করার অনুমতি দেন এবং প্রথমে র্যালিতে স্লোগান দেওয়া যাবে না এবং পরে উগ্র স্লোগান, সরকার বিরোধী ও সেনাবাহিনী বিরোধী স্লোগান না দেওয়ার শর্তে র্যালি করার অনুমতি দেওয়া হয়। র্যালি শেষে বান্দরবান পুরাতন রাজবাড়ি মাঠে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি বান্দরবান জেলা শাখার সংগ্রামী সভাপতি জননেতা উছোমং মারমার সভাপতিত্বে ও সহ-সাধারণ সম্পাদক উচসিং মারমার স লনায় গণসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সম্মানিত সদস্য জননেতা শ্রী কেএসমং মারমা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় ভূমি বিষয়ক সম্পাদক জননেতা চিংহ্লামং চাক, ৪নং সুয়ালক ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ক্যহ্লাউ চৌধুরি, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি বান্দরবান জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও রোয়াংছড়ি উপজেলা পরিষদের মাননীয় চেয়ারম্যান শ্রী ক্যবামং মারমা, মহিলা সমিতি বান্দরবান জেলা শাখার সভানেত্রী ও বান্দরবান সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান শ্রীমতি ওয়াইচিং প্রু, উন্নয়ন কর্মী লেলুং খুমী, বান্দরবান জজকোর্টের এ্যাডভোকেট বাসিংথোয়াই মারমা, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি ছাত্রনেতা অজিত তঞ্চঙ্গ্যা প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন জনসংহতি সমিতির জেলা সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মংস্তু মারমা।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে জনসংহতি সমিতিও সরকারের একটি অংশ। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি “পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি” স্বাক্ষর করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধান ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও সরকারকে একসাথে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি নিয়ে মিথ্যাচার করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দেওয়া মিথ্যা তত্ত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ৪৮টি ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে বলে জানান। অথচ বীর বাহাদুর ৮বছর আগেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ৯৮ ভাগ চুক্তি বাস্তবায়িত হয়েছে বলেছেন এবং ঢাকা শাক্যমুণি বৌদ্ধ বিহারের কঠিন চীবর দানানুষ্ঠানে এ সরকারের আমলে পার্বত্য চুক্তির ৮০ভাগ বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে বলেছেন।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি একটি বিপ্লবী সংগঠন। বিপ্লবী কর্মীদের মামলা, হামলা ও জেলবন্দী করে দমন করা সম্ভব নয়। কর্মীবাহিনীকে আরো বিপ্লবী চিন্তাধারা ধারণ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থি সকল কার্যক্রম প্রতিরোধ করতে হবে এবং পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলন সংগঠিত করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
বক্তারা আরো বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। উন্নয়নের জোয়ারে ভাসতে ভাসতে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসমূহ সংখ্যালঘু হয়ে প্রান্তিক অবস্থায় রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হলে এসব জাতিসমূহের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। তাই পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে আরো বৃহত্তর আন্দোলন সংগঠিত করতে হবে।