বান্দরবানে জেলা জনসংহতি সমিতি কার্যালয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের তল্লাশী
বান্দরবান প্রতিনিধিঃ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ রাত ১১:০০ টার দিকে বান্দরবান সেনা জোনের একদল সেনাসদস্য ও পুলিশ বিনা অনুমতিতে বান্দরবান জেলা সদরে অবস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বান্দরবান জেলা শাখা কার্যালয়ের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তল্লাশী অভিযান চালিয়েছে। ১৯ সেপ্টেম্বর রবিবার জেলা জনসংহতি সমিতির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই অভিযোগ করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, তল্লাশীর সমসয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা সমিতির কার্যালয়ে থাকা আলমিরাসহ আসবাবপত্র ভেঙে দেয় এবং কার্যালয়ের বিভিন্ন দলিলপত্রসহ অন্যান্য জিনিসপত্র তছনছ করে দেয়। যাওয়ার সময় ডেস্কটপ কম্পিউটারের সিপিইউ, ইন্টারনেটের মডেম, কার্যালয়ের ফাইলপত্র, একটি ডিজিটাল ক্যামেরা ও একটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। প্রায় এক ঘন্টাব্যাপী তল্লাশী চালিয়ে রাত ১২:০০ টার দিকে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা চলে যায়।
জেলা সাধারণ সম্পাদক ক্যবামং মারমার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে আরো অভিযোগ করা হয় একই তারিখে রাত ১১:৩০ টায় লামা উপজেলায় জনসংহতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন আসামের বাড়িতেও তল্লাশী চালিয়েছে আলীকদম সেনা জোন কমান্ডারের নেতৃত্বে একদল সেনা ও পুলিশ সদস্য। এসময় সেনা ও পুলিশ সদস্যরা স্বপন আসামের বাড়িতে থাকা জনসংহতি সমিতির লামা থানা কমিটির বিভিন্ন দাপ্তরিক কাগজপত্র ও বইপত্র নিয়ে যায়। সমিতির লামা থানা কমিটির বর্তমানে কোন কার্যালয় না থাকায় স্বপন আসামের বাড়িতেই উক্ত কাগজপত্র সংরক্ষণ করা হয়। সেনা ও পুলিশ সদস্যরা যাওয়ার সময় ‘সংগঠনের কাগজপত্র ব্যতীত কোন মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া হয়নাই’ মর্মে স্বপন আসামের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি পত্র নিয়ে যায়। এছাড়া আরও বলে যায় যে, সেনাক্যাম্পের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে এবং কোন অনুষ্ঠান করলে যেন তাদের অনুমতি নেয়া হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা রহয়, গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখও বান্দরবান পার্বত্য জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একদল সেনাসদস্য ভোর রাতে জনসংহতি সমিতির রোয়াংছড়ি থানা শাখা কার্যালয়ে তালা ভেঙে প্রবেশ করে কার্যালয়ের আলমিরা ভেঙে ফাইলপত্র, সভার কার্যবিবরণী বহি, সমিতির মুখপত্র ‘জুম্মবার্তা’ নিয়ে যায় এবং আসবাবপত্র ভাঙচুর, তছনছ ও সমিতির নেতাদের ছবি তছনছ করে দিয়ে যায়।
দেশের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত বান্দরবান ও আলীকদম জোনের সেনাবাহিনী কর্তৃক এভাবে জনসংহতি সমিতির কার্যালয়ে তালা ভেঙে প্রবেশ করা এবং কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ও কাগজপত্র তছনছ করা বা নিয়ে যাওয়া নিঃসন্দেহে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অগণতান্ত্রিক ও ষড়যন্ত্রমূলক কাজ বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয় আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর এহেন কার্যকলাপ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে ও বান্দরবানের সামগ্রিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।
চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী এবং চরম সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠী, অগণতান্ত্রিক ও কায়েমী স্বার্থবাদী একটি মহলের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার স্বার্থে স্থানীয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ কর্তৃক এভাবে তল্লাশী অভিযান, জনসংহতি সমিতির মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া, আসবাবপত্র ভাঙচুর ও দলিলপত্র তছনছ করে দেয়া ও কাগজপত্র নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং উক্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
অচিরেই বান্দরবানে জনসংহতি সমিতির উপর এধরনের অন্যায় তল্লাশী অভিযান, কার্যালয় ভাঙচুর, দলিলপত্র নিয়ে যাওয়া, দমন-পীড়ন, হয়রানি বন্ধ করা না হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হবে বলে সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়।