বান্দরবানের লামায় আদিবাসীদের জুম পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে বিশিষ্টজনেরা
বান্দরবানের লামায় আদিবাসীদের জুম পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন ২৮ জন বিশিষ্টজনেরা।
বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে বান্দরবানের লামা উপজেলার লাংকম ম্রো পাড়ায় একটি রাবার কোম্পানী গত ২৭ এপ্রিল, ২০২২ মঙ্গলবার আদিবাসীদের প্রায় একশ একর জুমের বাগান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। ধান, আম, কলা, আনারসসহ পুরো বাগান পুড়ে গেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় আজ পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি এবং প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
এর আগে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ স্থানীয় ভূমিদস্যুদের সহায়তায় বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের লাংকম ম্রো কারবারি পাড়া, জয়চন্দ্র ত্রিপুরা কারবারি পাড়া এবং রেংয়েন ম্রো কারবারি পাড়ার আদিবাসীদের প্রায় ৩০০ একর জুম ভূমি দখল করেছে। এর প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন সময় আদিবাসীদের বিরুদ্ধে এই কোম্পানি মিথ্যা মামলা করেছে।
সমতলের আদিবাসীদের ভূমির মালিকানা দেশের প্রচলিত আইনে নির্ধারণ করা হলেও তিন পার্বত্য জেলায় আদিবাসীদের ভূমি মালিকানা সামাজিক । ‘সার্বজনীন সম্পদ-সম্পত্তি মালিকানা অধিকার’ নীতিই হলো তাদের ভূমি মালিকানার ভিত্তি। ফলে এই মালিকানা বংশ পরম্পরায় মৌখিক। তিনটি সার্কেলের আওতায় পার্বত্য পাড়ার হেডম্যান এবং কারবারিরা এর ব্যবস্থাপনা করে থাকেন। কিন্তু গত ৩০ বছরে এই পার্বত্য পাড়ার নিয়ন্ত্রণাধীন ভূমির পরিমাণ শতকরা ৫১ ভাগ কমে গেছে। আরেক কথায় বলা যায়, পাহাড়িদের সামাজিক মালিকানার অর্ধেকেরও বেশি ভূমি ও ভূসম্পদ হাতছাড়া হয়ে গেছে।
বান্দরবানের লামা উপজেলার লাংকম ম্রো পাড়ায় জুমের বাগান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় প্রশাসনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ না থাকার বিষয়টি আমাদের গভীরভাবে হতাশ করেছে; আমরা উদ্বিগ্ন। বাগান পুড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসী পরিবারগুলোর শিগগিরই খাদ্য সংকটে পরার আশংকা রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ন্যায় বিচারের লক্ষ্যে কোনো প্রকার ব্যবস্থা কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে থেকে তাদের আশ্বস্তও করা হয়নি, যা আমাদের বিক্ষুব্ধ করেছে।
এমতাবস্থায় আমরা অনতিবিলম্বে বান্দরবানের লামা উপজেলার লাংকম ম্রো পাড়ায় একটি রাবার কোম্পানী কতৃক গত ২৭ এপ্রিল, ২০২২ মঙ্গলবার আদিবাসীদের প্রায় একশ একর জুমের বাগান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় আইনানুগ প্রতিকারের লক্ষ্যে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত সম্পন্ন করা, দায়ীদের অবিলম্বে গ্রেফতার, ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপত্তা ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং পাড়াগুলোতে ম্রো জনগোষ্ঠীর মানুষের দখলসত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অত্র যৌথ বিবৃতি প্রদান করছি।
বিবৃতি প্রদানকারীরা হলেন:
১. পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সভাপতি, ঐক্য ন্যাপ
২. অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, তত্ত্বাবধারক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা
৩. রাশেদা কে. চৌধুরী, তত্ত্বাবধারক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা
৪. রামেন্দু মজুমদার, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন
৫. ডা. সারওয়ার আলী, ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
৬. ডা. ফওজিয়া মোসলেম, সভাপতি, মহিলা পরিষদ
৭. ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, সদস্য সচিব, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চ
৮. এস.এম.এ সবুর, সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি
৯. খুশী কবির, উন্নয়ন কর্মি
১০. এম. এম. আকাশ, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১১. রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১২. অ্যাডভোকেট জাহিদুল বারী, সাধারণ সম্পাদক, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি
১৩. সালেহ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন
১৪. অ্যাডভোকেট পারভেজ হাসেম, আইনজীবি, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
১৫. রবীন্দ্রনাথ সরেন, সভাপতি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি
১৬. আবদুল ওয়াহেদ, কার্যকরী সভাপতি, জাতীয় শ্রমিক জোট
১৭. আব্দুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ (ইনসাব)
১৮. ড. সেলু বাসিত, সংস্কৃতি কর্মি
১৯. রাজিয়া সামাদ ডালিয়া, সমাজকর্মি
২০. ডা. লেনিন চৌধুরী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
২১. এ কে আজাদ, সংস্কৃতি কর্মি
২২. অলক দাস গুপ্ত, সংস্কৃতি কর্মি
২৩. দীপায়ন খীসা, তথ্য ও প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম
২৪. অ্যাডভোকেট জীবনানন্দ জয়ন্ত, সংগঠক, গণজাগরণ মঞ্চ
২৫. বিভ‚তী ভূষণ মাহাতো, সদস্য, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি
২৬. কাজী আব্দুল মোতালেব জুয়েল, সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী
২৭. গৌতম শীল, সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল)
২৮. দনওয়াই ম্রো, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।