আঞ্চলিক সংবাদ

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম মৌলভীবাজার জেলা সম্মেলনঃ সভাপতি ফ্লোরা বাবলি তালাং, সাধারণ সম্পাদক জনক দেববর্মা

আজ ২৯ নভেম্বর মৌলভীবাজার এম সাইফুর রহমান অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, মৌলভীবাজার জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে  ফ্লোরা বাবলি তালাংকে সভাপতি এবং জনক দেববর্মাকে  সাধারণ সম্পাদক  এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে এলিসন সুঙ্গ সহ মোট ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

“আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ সামিল হোন” শিরোনামে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে পায়রা উড়িয়ে উদ্বোধন করেন সিলেট আদিবাসী অধিকার নাগরিক কমিটির  আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ডার্লি ডেরি প্রেন্টিস।

পায়রা উড়িয়ে উদ্বোধন করেন সিলেট আদিবাসী অধিকার নাগরিক কমিটির  আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ডার্লি ডেরি প্রেন্টিস

সম্মেলন উদ্বোধনের পর র‍্যালি  অনুষ্ঠিত হয় (এম সাইফুর রহমান অডিটোরিয়াম থেকে চৌমহোহনা রোড, সেন্ট্রাল রোড হয়ে আবার এম সাইফুর রহমান অডিটোরিয়ামে এসে শেষ হয়)

সম্মেলন ১ম সেশন অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে।  ১ম অধিবেশন সভাপতিত্ব করেন  বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, মৌলভীবাজার জেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি -২০২৪ এর আহ্বায়ক শ্রী নারায়ণ কুর্মী। সঞ্চালনা করেন  বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য জনক দেববর্মা ও মনিকা খংলা।

সম্মেলনের ১ম অধিবেশনের সভায় স্বাগত বক্তব্য বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য ফ্লোরা বাবলি তালাং।

সম্মেলনে  বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সহ সভাপতি টনি ম্যাথিউ চিরান বলেন, “আদিবাসীদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই-সংগ্রামে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম সর্বদাই অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছে। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের এই সম্মেলন নিশ্চয় নিপীড়িত আদিবাসী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে আরো শানিত করে আগামী দিনের আদিবাসী আন্দোলনকে আরো বেশি সুসংগঠিত ও জোড়দার করবে। এই আন্দোলনে আদিবাসী ছাত্র ও যুবদের আরো বেশি করে সম্পৃত্ত থেকে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় ক্রীড়া, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক উজ্জ্বল আজিম বলেন, “দীর্ঘ শোষণ বঞ্চনার ইতিহাসের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলের আদিবাসীরা দিনযাপন করছে। মুরইছড়া ইকোপার্ক, চা বাগান সম্প্রসারণের নামে আদিবাসীদের ভূমি বেদখল, চা বাগান কর্তন, চলাচলের রাস্তা দখল সহ বিভিন্ন ভাবে আদিবাসীরা উচ্ছেদ ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে। এই দখল ও উচ্ছেদ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের আদিবাসীদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই সংগ্রাম করতে হবে, রুখে দাঁড়াতে হবে। আজকের এই সম্মেলন নিশ্চয়ই আমাদের আদিবাসীদের মধ্যে ঐক্য ও দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (জেএসএস) এর প্রতিনিধি ত্রিজিনাথ চাকমা বলেন, ” পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের লড়াই সংগ্রামের একটি লড়াকু সংগঠন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম। আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই সংগ্রামকে আরো বেশি সুসংহত করার ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম তথা সমতলের আদিবাসী মানুষের সাথে জাতীয়ভাবে কাজ করছে এবং আগামী দিনেও যে কোন ধরনের সহযোগিতা করার আশা ব্যক্ত করি। আদিবাসীদের আগামী দিনের লড়াই সংগ্রাম আরো বেশি সংগঠিত হোক এই প্রত্যাশা করি।

সিনিয়র সাংবাদিক আকমল হোসেন বিপু বলেন,”বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত আদিবাসীরা নির্যাতন-নিপীড়ন ও চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার। এই বাংলাদেশ সকল নাগরিকের এবং সকলের সমান অধিকার চর্চা, স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করার অধিকার সকলের রয়েছে। আমরা যারা গণমাধ্যমে কাজ করছি আপনাদের যৌক্তিক লড়াইয়ে, ন্যায় ও সত্যের পক্ষে সর্বদা পাশে আছি।”

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) মৌলভীবাজার জেলা শাখার সভাপতি  অ্যাডভোকেট মঈনুর রহমান মগনু বলেন, “মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে স্বাধীন বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি, দুঃখজনক হলেও সত্য যে স্বাধীনতার এত বছর পরও সকল মানুষের সাম্য ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য এখনো পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। আদিবাসী, চা শ্রমিক কিংবা মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আদিবাসী-বাঙালি সবার ঐক্যবদ্ধ লড়াই সংগ্রাম করতে হবে। আগামী দিনে এই অঞ্চলে আদিবাসী ও মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে, সেই সাথে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম মৌলভীবাজার শাখার আজকের সম্মেলন সফলতা কামনা করছি।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নিখিলেশ ঘোষ বুলু বলেন, “১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভ করার ৫৪ বছর পরও এখনো নিপীড়িত মানুষ- আদিবাসী, চা শ্রমিক, শিল্পঞ্চলের শ্রমিক কিংবা মেহনতি মানুষের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে। স্বাধীনতার পরে যারাই ক্ষমতায় এসেছেন এই  নিপীড়িত মানুষের অধিকারের প্রতিষ্ঠার জন্য নানান প্রতিশ্রুতি দিলেও সেগুলো বাস্তবায়ব করেননি। শুধু ভোটের রাজনীতি, মার্কার রাজনীতি করেছেন।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এন্ড্রু সলোমার বলেন, “বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই-সংগ্রাম দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। এই লড়াই-সংগ্রাম বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পতাকাতলে এসে সকলকে উদাত্ত আহ্বান জানাই। আগামী দিনে আমাদের আদিবাসীদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই-সংগ্রাম করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।

এছাড়াও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী অধিকার নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক এবং আজকের সম্মেলনের  উদ্বোধক অ্যাডভোকেট ডার্লি ডেরি প্রেন্টিস, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এর মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও হাইকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবুল হাসান সহ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সুশীল মাহাতো, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম সিলেট জেলার সভাপতি গৌরাঙ্গ পাত্র। সিলেট বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যান সংসদের সিলেট অঞ্চলের সভাপতি চিত্তরঞ্জন দেববর্মা প্রমুখ।

মধাহ্ন বিরতির পর ২য় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।  এই ২য় কাউন্সিলে অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এন্ড্রু সলোমার। কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতি হিসেবে ফ্লোরা বাবলি তালাং, সাধারণ সম্পাদক জনক দেববর্মা এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে এলিসন সুঙ্গ সহ মোট ৩১ সদস্য বিশিষ্ট বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম মৌলভীবাজার জেলা কমিটি আগামী দুই বছরের জন্য গঠন ও শপথগ্রহণ করানো করা হয়।

কাউন্সিল অধিবেশনে শেষে মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

 

Back to top button