জাতীয়

বাংলাদেশে পাকিস্তানেরই প্রেতাত্মা রাজত্ব করছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে; পঙ্কজ ভট্টাচার্য

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নৃশংসতা, বর্বরতা প্রত্যক্ষ করা এই বাংলাদেশে পাকিস্তানেরই প্রেতাত্মা রাজত্ব করছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রবীন রাজনীতিবিদ ও ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য। আজ সকালে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটে অনুষ্ঠিত ঐক্য ন্যাপের জাতীয় সন্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন কঠিন সংকটে। পাকিস্তানিরা আমাদের মা বোনের ওপর নির্মম অত্যাচার করেছিলো, ধর্ষণ করেছিলো আজ স্বাধীন বাংলাদেশেও রাস্তাঘাটে, বাসে সর্বত্রই নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে। স্বাধীন বাংলাদেশে পাকিস্তানের প্রেতাত্মা রাজ করছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে। এটা হতে দিতে পারিনা। প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের।’
‘স্বাধীনতা সংগ্রাম কেবল পাকিস্তান থেকে দেশকে মুক্ত করার সংগ্রাম ছিলোনা। শোষনহীন, অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার প্রত্যয় ছিলো। যা ঐক্য ন্যাপ প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই ধারণ করে এসেছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

‘পাকিস্তান সময়ে ধর্মের নামে প্রতিনিয়ত যে ষড়যন্ত্র হয়েছে তার বিরুদ্ধে আমরা জয়ী হয়েছি সবসময়। স্বাধীন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার যে বিষবাষ্প তার সাথে প্রতিনিয়ত পরাজিত হবো, তা হতে পারেনা।’

হেফাজতের পরামর্শে পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে মুখে ফেনা তুলে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কাজ করা সাজেনা।
‘মুক্তিযুদ্ধের সারবস্তু রক্ষা করতে হলে কৃষক-শ্রমিক, মেহনতি মানুষ, গরীব, মধ্যবিত্ত, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পার্বত্যচুক্তি বাস্তবায়ন করে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে’ বলেও বক্তব্য রাখেন তিনি।

ঐক্য ন্যাপের জাতীয় সন্মেলনে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা(সন্তু লারমা)। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশের আজকের বাস্তবতায় দাবী করা যায়না যে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সরকার, শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ যদি গণতান্ত্রিক, জনমূখী, সম-অধিকার, সম-মর্যাদার দেশ হতো তবে আজো শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরীরর জন্য লড়াই করতে হয় কেনো, কৃষকরা কেনো বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত, কেনো নারীরা নিরাপদ জীবন যাপন করতে পারছেনা। এদেশে মানুষের মৌলিক মানবাধিকার নেই। বলা হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ এগিয়ে যাচ্ছে বাস্তবে তা দেখা যায় না।’

পাহাড়ে সেনা শাসনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন ‘শাসকগোষ্ঠী পাহাড়ে উপনিবেশ কায়েম করেছে। প্রতিনিয়ত তারা পাহাড়ে দমনপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নিজেদের গণতান্ত্রিক বলে দাবি করছে।’
তিনি সাম্প্রদায়িক, উগ্র জাতীয়তাবাদী বিরোধী শক্তি, সরকারের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে প্রগতিশীল বাম শক্তির ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের প্রয়োজনীয়তা, অপরিহার্যতা রয়েছে বলেও বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম তার বক্তব্যে বলেন, ‘পাকিস্তানের সাথে যে লড়াই তা কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী লড়াই ছিলোনা, ছিলো জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের লড়াই। পাকিস্তানের যে সাম্প্রদায়িক ভাবধারা তা উপেক্ষা করে স্বাধীনতা সংগ্রাম হয়েছে।’
তিনি বিএনপি-আওয়ামীলীগের বাইরে বিকল্প শক্তি হিসেবে বাম বিকল্প গড়ে তোলার জন্য ঐক্য ন্যাপকে অন্যান্য বাম শক্তির সাথে লড়াইয়ে শামিল হওয়ার আহবান জানান।

‘দেশে উন্নয়ন হচ্ছে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু সেই উন্নয়নের সাথে দেশের কৃষক, মজুর, শ্রমিক শ্রেণীর খুব বেশি লাভ হচ্ছেনা’ বলে তার বক্তব্যে বলেন সমাজকল্যান মন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
তিনি আরো বলেন আমরা টেকসই উন্নয়ন চাই, যে উন্নয়নের মূলকথা, কাউকেই পিছিয়ে রাখা যাবেনা।

সাম্যবাদী দলের সভাপতি দিলীপ বড়ুয়া তার বক্তব্যে বলেন ‘বিভিন্ন অপশক্তি দেশের মানুষকে দমিয়ে রাখছে। তারা দমনপীড়ন চালায়, তারাই আদিবাসীদের জমি দখল করে তারাই লুটপাত করছে।’

‘মুক্তির সংগ্রাম যে চেতনায় সংগঠিত হয়েছিলো, তা থেকে আমরা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছি’ বলে বক্তব্য রাখেন জাসদের একাংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া। দেশে একদল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে লুটপাত করছে আরেকদল অভুক্ত থাকছে বলেও তার বক্তব্যে জানান তিনি।

অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক জাতীয় ঐক্য এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দুর্নীতি ও শোষনমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঐক্য ন্যাপের জাতীয় সন্মেলন সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে ও আকাশে বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধন করা হয়। ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটে অনুষ্ঠিত জাতীয় সন্মেলনে সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নেতাকর্মী যোগ দেন।

Back to top button