জাতীয়

বাংলাদেশের আদিবাসীদের ভাষাসমূহ সুরক্ষার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় সেমিনার সম্পন্ন

৩০ মার্চ শনিবার সকাল ১০ টায় রাজধানীর ওয়াডাব্লিউসিএ সম্মেলন কক্ষে ‘বাংলাদেশের আদিবাসী ভাষাসমূহের বর্তমান অবস্থা ও করণীয়’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষ উদযাপন কমিটি ২০১৯ কর্তৃক আয়োজিত এই জাতীয় সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন উদযাপন কমিটির আহবায়ক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের আদিবাসী ভাষাসমূহকে নিয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান উল্লেখযোগ্য কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট কর্তৃক ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জাতিসত্তার ভাষার অবস্থান ও ইতিহাস জানার জন্য নৃভাষাবৈজ্ঞানিক সমীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক চাকমা, মারমা, ককবরক, গারো ও সাদরি ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক ও পাঠোপকরণ প্রণয়ন করে মাঠে বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এখনো অনেক আদিবাসী ভাষা বিকৃতি ও বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। সে করণে পলিসি গ্যাপগুলো পূরণ করা, বহুভাষিক অস্তিত্বের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, নীতি ও বাস্তবতার মধ্যে সমন্বয় সাধন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, আদিবাসী ভাষা একাডেমি প্রতিষ্ঠা, আদিবাসীদের ভাষায় অভিধান প্রকাশ, শিশু শিক্ষার জন্য ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে উপকরণ প্রকাশ, আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষ জাতীয়ভাবে সরকারের উদ্যোগে উদযাপন, পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোর ক্ষমতায়ন, আদিবাসী ভাষা ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সুদৃঢ়করণ, লিঙ্গুইস্টিক সার্ভের উদ্যোগ গ্রহণ, এলাকাভিত্তিক ভাষার অবস্থান নির্ণয় করে এসব ভাষা সংক্রান্ত কার্যাবলি পরিচালনা, মালো ও মাহলেসহ বাদপড়া আদিবাসীদের স্বীকৃতি প্রদান, স্বল্প সংখ্যার আদিবাসীদের ভাষা ডকুমেন্টেশন ও উন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহণ, পর্যায়ক্রমে সকল আদিবাসী ভাষায় শিক্ষা কর্মসূচি চালু করা, আদিবাসী ভাষায় পাঠদানের জন্য শিক্ষক নিয়োগ ও পদায়ন ইত্যাদি উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে আলোচকগণ সুপারিশ করেন।

প্রধান অতিথি অধ্যাপক ড. জীনাত ইমতিয়াজ আলী বলেন, অনেক আদিবাসী জাতির মধ্যে তাদের নিজ নিজ ভাষার হরফ ইত্যাদি নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমস্যা বিরাজমান রয়েছে। সকলে সহনশীল মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসলে এসব সমস্যা নিরসন করা সহজ হতে পারে। এ সমস্যাগুলো সমাধান না হলে সংশ্লিষ্ট ভাষা বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে পড়বে। তিনি স্বল্প সংখ্যার আদিবাসীদের ভাষা বিকাশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হতে সকল প্রকার সহায়তা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেন।

বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষ উদযাপন কমিটি ২০১৯-এর সদস্য সচিব বাঁধন আরেং-এর স্বাগত বক্তব্য দিয়ে সূচিত এই সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট-এর মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. জীনাত ইমতিয়াজ আলী। মূল আলোচক হিসেবে প্রতিপাদ্য বিষয়ের উপর আলোকপাত করেন নৃবিজ্ঞানী প্রশান্ত ত্রিপুরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এর সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম-এর সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং ও এমএলই ফোরাম-এর সদস্য সচিব তপন কুমার দাশ এবং আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিমগাছি কলেজ-এর শিক্ষক সাদরি ভাষা বিশেষজ্ঞ প্রফেসর যোগেন্দ্রনাথ সরকার, সেভ দ্যা চিলড্রেন-এর প্রকল্প পরিচালক (এমএলই),মেহেরুন নাহার স্বপ্না ও ফ্রিল্যান্স লেখক ইলিরা দেওয়ান।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে আদিবাসী ভাষা বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক, উন্নয়নকর্মী ও কমিউনিটি লিডাররা উপস্থিত ছিলেন।

Back to top button