মতামত ও বিশ্লেষণ

বর্তমান প্রজন্মের ভাবনায় এম এন লারমাঃ হেলি চাকমা

সূচনাঃ স্বপ্ন দেখে জাতি, স্বপ্ন দেখে জুম্ম জনতা………
আর এ স্বপ্ন দেখিয়ে গেছেন মহান এক স্বপ্ন দ্রষ্টা যার নাম মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা। তিনি একাধারে জুম্ম জাতীয় জাগরণের অগ্রদূত, জুম্ম জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের পথ প্রদর্শক, নিপীড়িত মানুষের ঘনিষ্ট বন্ধু, জুম্ম জাতির কর্ণধার, জুম্ম অধিকার আন্দোলনের পথিকৃৎ এবং প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার ধারক, বাহক। শাসকগোষ্ঠীর বিরামহীন শাসন-শোষণ, নির্যাতন-নিপীড়নের নিষ্ঠুর যাতাকলে পিষ্ট হয়ে জুম্ম জাতির অস্তিত্ব যখনই ধ্বংসের মুখোমুখি তখনই জাতির ভাগ্যাকাশে উদিত উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের মত আর্বিভূত হয়ে এম এন লারমা শোনালেন মুক্তির বাণী, দেখালেন মুক্তির পথ। জুম্ম জনগণের অবিসংবাদিত মহান এই নেতা আজও চিরস্মরণীয় ও চিরভাস্বর হয়ে আছেন জুম্ম জনগণের মনের মণিকোঠায়। তাঁর অগ্নিঝরা সংগ্রামের বাণী, বলিষ্ট চেতনা, নির্ভীক পথচলা এবং প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে আপসহীন দৃঢ় মনোভাবের মধ্যদিয়ে চির অম্লান হয়ে আছেন এবং থাকবেন ইতিহাসের পাতায়।
এম এন লারমার জন্ম ও বংশ পরিচয়ঃ ১৯৩৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মহাপুরুম (মাওরুম) নামক গ্রামে মধ্যবিত্ত এক জুম্ম পরিবারে এম এন লারমার জন্ম। পিতা চিত্ত কিশোর চাকমা ছিলেন একজন শিক্ষনুরাগী আদর্শ শিক্ষক, সমাজসেবক। স্নেহময়ী মাতা সুভাষিণী দেওয়ান সমাজ হিতৈষিণী এবং আদর্শবাদী গৃহিনী ছিলেন। চার ভাই-বোনের মধ্যে এম এন লারমা মাতা-পিতার তৃতীয় সন্তান। বড় বোন জ্যোতিপ্রভা লারমা মিনু, অগ্রজ সুভেন্দু প্রভাস লারমা বুলু যিনি ১০ নভেম্বরের মর্মান্তিক ঘটনায় এম এন লারমার সাথে শহীদ হন। ছোট ভাই জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু), তিনি বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি এবং প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এম এন লারমা ১৯৭১ সালে পঙ্কজিনী চাকমাকে বিয়ে করেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক ছিলেন।
শিক্ষা জীবনঃ এম এন লারমা নিজ জন্মস্থান মহাপুরুম গ্রামের জুনিয়র হাইস্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ চুকিয়ে ভর্তি হন রাঙ্গামাটি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে। ১৯৫৮ সালে এই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর চট্টগ্রাম সরকারী কলেজে অধ্যয়ন শেষে ১৯৬০ সালে কৃতিত্বের সহিত উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯৬৫ সালে পুনরায় একই কলেজ থেকে সমাজ কল্যাণ বিভাগের অধীনে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর ১৯৬৮ সালে বি এড ডিগ্রী অর্জন এবং সর্বশেষ ১৯৬৯ সালে এল এল বি ডিগ্রী অর্জনের মধ্যদিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখার পাঠ সমাপ্ত করেন। এম এন লারমা ছাত্রজীবন থেকেই সৃজনশীল মেধার অধিকারী ছিলেন। অসীম ধৈর্য্য, দৃঢ় মনোবল, আত্মবিশ্বাস, কষ্ট সহিষ্ণুতার অধিকারী এম এন লারমা কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলতেও অভ্যস্ত ছিলেন।
কর্মজীবনে প্রবেশঃ ১৯৬৬ সালে দীঘিনালা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদানের মধ্যদিয়ে এম এন লারমার কর্মজীবনের সূচনা। তিনি দূরদর্শী চিন্তাভাবনার অধিকারী ছিলেন। সামন্ত শাসনের আষ্টেপৃষ্টে নিমগ্ন জুম্ম সমাজকে অধিকার সচেতন করার লক্ষ্যে তিনি শিক্ষার ব্যাপক প্রয়োজনীয়তার কথা উপলব্দি করেছিলেন। তাই সে লক্ষ্যে কাজ করেছিলেন। শিক্ষক জীবনে ছাত্র ও যুব সমাজকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াস পেতেন। ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম রেলওয়ে কলোনী হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। একজন শিক্ষক হিসেবে যথেষ্ট সুনাম ও খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তাঁর পাঠদানের পদ্ধতি ছিল আকর্ষণীয়। অতি সহজে কঠিনতম বিষয়বস্তু সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় বুঝিয়ে দিতেন।
১৯৬৯ সালে এল এল বি পাশ করে আইনজীবি হিসেবে তিনি চট্টগ্রাম বার এসোসিয়েশনে যোগদান করেন। সে সময় চারু বিকাশ চাকমা তৎকালীন সরকারের হাতে গ্রেপ্তার হলে ঐ মামলার আইনজীবি হিসেবে তিনি যথেষ্ট দক্ষতা ও মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছিলেন।

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনঃ এম এন লারমা বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন। শব্দগত সীমাবদ্ধতার কারণে এখানে এম এন লারমার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক পদচারণার চুম্বক অংশ আলোকপাত করার চেষ্টা করছি-
১৯৬০ দশকে ছাত্র আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ততার মধ্যদিয়ে মূলত এম এন লারমার রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ। ১৯৫৭ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম পাহাড়ী ছাত্র সম্মেলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ হলে বিজাতীয় শাসকগোষ্ঠীর উপনিবেশিক তান্ডবতা তাকে গভীরভাবে পীড়া দেয়। তখন তিনি সচেতন ছাত্র-যুব সমাজকে সঙ্গে নিয়ে এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও আন্দোলন গড়ে তোলেন। যে কারণে ১৯৬৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নির্বতনমূলক আইনে তৎকালীন সরকারের হাতে গ্রেপ্তার হন। এরপর ১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম নির্বাচন কমিটির মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন।
কিছুকাল পর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। তিনি যুব সমাজকে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে উৎসাহিত করেন। কিন্তু এম এন লারমার এই উদ্যোগকে একটি মহল কর্তৃক অত্যন্ত সুকৌশলে পাশ কাটিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত রাখা হয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট এম এন লারমা ৪ দফা দাবি সম্বলিত স্বায়ত্বশাসনের দাবিনামা পেশ করেন। কিন্তু দেশের নব্য শাসকগোষ্ঠী তাঁর এই দাবিনামাকে সরাসরি অগ্রাহ্য করে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দেয় এবং প্রত্যাখ্যান করে। এমনকি ১৯৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর এম এন লারমার তীব্র বিরোধীতা এবং প্রতিবাদ অগ্রাহ্য করে “বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাঙালি বলিয়া পরিচিত হইবেন” এমন প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশে বসবাসরত ভিন্ন ভাষাভাষী সকল জনগোষ্ঠীকে বাঙালি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সেদিন তিনি এর প্রতিবাদে গণপরিষদ অধিবেশন বর্জন করেন।
১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি জুম্ম জনগণের প্রথম রাজনৈতিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর পরপরই পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি, যুব সমিতি নামে বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের কার্যক্রম সম্প্রসারণের মধ্যদিয়ে জুম্ম জনগণকে আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেন।
১৯৭৩ সালে দেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তিনি জুম্ম জনগণের পক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নসহ সমগ্র দেশের খেটে খাওয়া, অবহেলিত, মেহনতি মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পক্ষে বরাবরই সোচ্চার ছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্দু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্ব-পরিবারে হত্যা করা হলে দেশের রাজনীতি নতুন মোড় নেয়। যার ফলে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের সকল পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বাধীন নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন সশস্ত্র সংগ্রামের রূপ লাভ করে। এম এন লারমা দক্ষতার সাথে সশস্ত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব প্রদান করেন।
এক সময় জনসংহতি সমিতির মধ্যে উপদলীয় কোন্দল সৃষ্টি হয়। আর এই তীব্র কলহ এবং উপদলীয় কোন্দলের জের ধরে ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর জুম্ম জাতির কুলাঙ্গার, ক্ষমতালোভী, বিভেদপন্থী চক্রের বিশ্বাস ঘাতকতামূলক অতর্কিত আক্রমণে ৮ জন সহযোদ্ধাসহ এম এন লারমা নির্মমভাবে নিহত হন।
অসাম্প্রদায়িক লারমাঃ এম এন লারমার সংগ্রাম কখনোই সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারায় পরিচালিত হয়নি। তাঁর লড়াই-সংগ্রাম কেবল জুম্ম জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অধিকার সংরক্ষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। বাংলাদেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে তার সংগ্রাম ছিল দেশের সকল জাতির সকল ধর্মের, বর্ণের, লিঙ্গের এমনকি সকল শ্রেণি পেশার মানুষের স্বপক্ষে। তিনি সংসদের বাইরে-ভিতরে সবসময় দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বাংলাদেশের কোটি কোটি গরীব মেহনতি, শ্রমজীবি মানুষের অধিকারের কথা, শোষিত-বঞ্চিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত, অধিকারহারা জাতিসমূহের কথা বার বার বলেছিলেন।
বর্তমান প্রজন্মের ভাবনায় এম এন লারমাঃ মহান নেতা এম এন লারমার প্রদর্শিত পথ, আন্দোলন, সংগ্রাম, সুমহান আদর্শ, চেতনাবোধ সময়ের দাবিকে যথার্থ মূল্যায়ন করে। প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত, প্রতিমুহূর্তে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ, অজস্র ঘটনাপ্রবাহ একের পর এক সামনে জড়ো হচ্ছে। যে ঘটনাগুলো একটা জাতির জন্য নিঃসন্দেহে হুমকির বার্তা স্বরূপ। এ কথা বলা বাহুল্য যে, অনেক প্রশ্নের সামনে আজ আমরা দাঁড়িয়ে। জাতির এ দুর্দশা, দুর্দিন এবং সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় এম এন লারমার আদর্শ অনুসরণ করে সামনের দিনগুলোকে মোকাবেলা করা। আর এর জন্য প্রয়োজন তরুণ প্রজন্মের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। বর্তমান তরুণ প্রাণের মাঝে সম্ভাবনা বিপুল। প্রয়োজন শুধু এই সম্ভাবনা, মেধা, মননকে সমৃদ্ধ, সৃজনশীল কাজে যথার্থভাবে আত্মনিয়োগ করা।
সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষাপটে যদি আমরা বিবেচনা করি তাহলে দেখি যে, কোন ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয় তুমুল উত্তেজনাকর পরিস্থিতি কিংবা আলোচনা-সমালোচনা। কিন্তু সেটা যে ক্ষণিকের আবেগ আর উগ্রজাতীয়তাবাদের ফল তা বুঝার বাকি থাকে না। কেননা, বাস্তব পরিস্থিতিতে তার প্রয়োগ খুব একটা লক্ষণীয় নয়।
সুতরাং চারপাশের ঘটনাপ্রবাহকে সাধারণ আবেগের বশবর্তী হয়ে কিংবা উগ্র জাতীয়তাবাদী চেতনাবোধ থেকে ক্ষণিকের জন্য উপলব্দির প্রবণতা হবে প্রজন্মের জন্য বোকামী। তার চেয়ে ভালো হয় মূল সমস্যার গভীরে প্রবেশ করে নীতি-আদর্শগতভাবে, উপযুক্ত পদ্ধতিতে সামগ্রিকভাবে সমস্যাকে প্রতিহত করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
জাতীয় জীবন আজ অনেকটাই মুমূর্ষ। দুর্বল হয়ে পড়ে আছে সমাজদেহ। নিত্য নতুন ইস্যু সৃষ্টির ফলে উল্লেখযোগ্য অনেক পুরনো ইস্যু কোণঠাসা হয়ে ঢাকা পড়ে যায়। উগ্র মৌলবাদ, অপরাজনীতির অবাধ সম্প্রসারণ, ধর্মান্ধতা, দলীয় রাজনীতির অন্ধ আনুগত্য, ক্ষমতার দাপটে সবকিছুই আজ আমাদের মূল আন্দোলনের জায়গাকে ম্লান করে রেখেছে।
বর্তমানে রোহিঙ্গাদের অবাধ অনুপ্রবেশ সামনে আরেকটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। এ সমস্যাটাকে হালকাভাবে নেয়ার বা অগ্রাহ্য করার কোন উপায় নেই। জাতীয় জীবনে এর ক্ষতিকর প্রভাব ইতিমধ্যে পরিলক্ষিত।
তাই সময় এখন জীবনে জীবন মেলাবার। ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ শুরু করার। সামনে বন্ধুর পথ। এ বন্ধুর যাত্রাপথ পাড়ি দিতে হলে একতাদ্ধ হয়ে লড়তে হবে। রাজনীতির মতাদর্শ ভিন্ন হতে পারে কিন্তু সমগ্র জাতির বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় ইস্যুতে একমত পোষণ করতে হবে। বিরোধিতার কারণে বিরোধীতা করা কিংবা ক্ষমতাসীন বলে ক্ষমতার অপব্যবহার করার মন মানসিকতা, লেজুরবৃত্তি, দালালীপনা পরিহার করে পরিবর্তনের পথে সামিল হওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
হঠকারিতার মাধ্যমে রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্ম না দিয়ে ষড়যন্ত্রকারী স্বার্থান্বেষী মহলের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলে নস্যাৎ করতে হবে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে।
প্রগতিশীলতাই হলো একটা সমাজের মূল চালিকাশক্তি। আমাদের সমাজে এমন প্রগতিশীল তরুণ, যুবক আজও সামগ্রিক স্বার্থের কথা ভাবে বলে এম এন লারমার মহান আদর্শ এখনও নিশ্চিহ্ন হয়নি। নিভু নিভু হলেও এর মশাল আজও জাজ্বল্যমান। এমন প্রগতিশীল ছাত্র যুবরাই আমাদের মূল প্রাণশক্তি। তারাই সংগ্রামকে এগিয়ে নিচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও নিবে। সংখ্যাটা যদিও নগণ্য, প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
মহান নেতার সংগ্রাম একটি দ্বিধা-ত্রিধা বিভক্ত সমাজ, জাতি কিংবা রাষ্ট্রের স্বপক্ষে কখনই ছিল না। তিনি সবসময় সমতায় বিশ্বাসী ছিলেন। আর স্বপ্ন দেখেছিলেন বৈষম্যহীন একটি সমাজের, জাতির, সর্বোপরি একটি রাষ্ট্রের।
তাই বর্তমান প্রজন্মকে এম এন লারমার সংগ্রামী আদর্শ গভীরভাবে ধারণ করে মুক্তির পথে হাঁটতে হবে। লড়তে হবে অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে।
উপসংহারঃ এম এন লারমা বলেছিলেন- “যে জাতি সংগ্রাম করতে জানে না, সে জাতির পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন অধিকার থাকতে পারে না”। সুতরাং আমাদের সংগ্রাম ছাড়া মুক্তি নেই। আর এ সংগ্রাম তরুণ সমাজের অংশগ্রহণ ব্যতীত অসম্ভব। এ আন্দোলন সংগ্রামে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার চেতনা ও আদর্শ হতে হবে মূল পথের পাথেয়।
…………………………………
…………………………………
১. লেখাটি বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৭৮তম জন্মদিবস উপলক্ষে রাঙ্গামাটিতে এম এন লারমা মেমোরিয়েল ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত ডিগ্রী-অনার্স-মাস্টার্স শ্রেণির জন্য রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে।
২.হেলি চাকমা ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে মাস্টার্সের ছাত্রী।

Back to top button