বন্যায় বেহাল খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাঃ পানি বন্দি জেলার লক্ষাধিক মানুষ
আইপিনিউজ, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়িতে টানা ভারী বর্ষণে পাহাড়ি ঢলে আবারও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এদিকে গতকাল রাত থেকে এখন পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। যার ফলে চেঙ্গী নদীর পানি বেড়ে খাগড়াছড়ি সদর ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে এবং জনবসতি ডুবে দিচ্ছে। এদিকে পানি উঠেছে শহরের বিভিন্ন সড়কেও। চেঙ্গী নদীর পানি বাড়ায় পানছড়ির অনেক এলাকা পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বলেও বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
অন্যদিকে, পাহাড়ি ঢলে মাটিরাঙ্গা, রামগড়, দীঘিনালার অনেক গ্রাম পানিবন্দী। এর মধ্যে বন্যার পানিতে ডুবে আছে মেরুং ও কবাখালি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম। বর্তমানে জেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।
অতি ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে মাইনি ও কাচালং নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ডু্বে গেছে খাগড়াছড়ি -সাজেক সড়কের একাধিক অংশ। গতকাল বিকেল থেকে সাজেক সড়কের কবাখালি,বাঘাইহাট বাজার ও মাচালং বাজারসহ একাধিক অংশ ৫ থেকে ৬ ফুট পানির নীচে তলিয়ে যায়। এতে সড়কটিতে পর্যটকবাহী যানবাহনসহ সকল ধরনের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়ক ডুবে যাওয়ায় সাজেকে বেড়াতে এসে আটকা পরেছে অন্তত আড়াই শ পর্যটক। অনেক পর্যটক সাজেক বেড়াতে এসে আটকা পড়েছে।
খাগড়াছড়ির পৌরসভার প্রশাসক নাজমুন আরা সুলতানা জানান, বন্যা দুর্গতদের জন্য ১২ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২৫৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। খাগড়াছড়িতে গেল ২৪ ঘণ্টায় ৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানান, খাগড়াছড়ি পৌরসভায় ১৮টিসহ পুরো জেলায় ৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রাখা হয়েছে। আশ্রিতদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় খাগড়াছড়ির সঙ্গে দীঘিনালা এবং রাঙামাটির লংগদু ও বাঘাইছড়ির সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।টানা বর্ষণের কারণে জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে বলা হচ্ছে।
অন্যদিকে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায়ও হাজার হাজার মানুষ বন্যার পানিতে আটকা পড়েছেন।
নানা সংগঠনের উদ্যোগ:
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের উদ্ধার ও বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের জন্য সাপোর্ট টিম গঠন করেছে বিভিন্ন সংগঠন। পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রুমেন চাকমা’র নেতৃত্বে সংগঠনটি গঠন করেছে ইমাজেন্সি সাপোর্ট টিম। এছাড়া বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরামর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার ও ঢাকাস্থ জুম্ম শিক্ষার্থীদের আয়োজনেও গঠন করা হচ্ছে ফান্ড উত্তোলনের কাজ।
এ কাজে নেতৃত্ব দেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষার্থী অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, “সকল সংকটে আমরা জুম পাহাড়ের মানুষের পাশে ছিলাম। আমরা সাজেকে যখন খরা হয়ে খাদ্যভাব দেখা গিয়েছিল তখনও আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। বিভিন্ন জনকে অন্তর্ভুক্ত করে ফান্ড গঠন করেছিলাম। এখনও আমরা ফান্ড গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি এবং আমাদের জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের অনেক সদস্য বন্যা দুর্গতদের সাহায্যে নিয়োজিত আছে।
এদিকে এ উদ্যোগের অন্যতম সমন্বয়কারী এবং ঢাবি জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের সিনিয়র সদস্য কৌশিক চাকমা বলেন, আমরা আপামর জনসাধারণ এবং বিত্তশালীদের অনুরোধ জানাচ্ছি তারা যেন এই বন্যা দুর্গতদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে।