জাতীয়

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৫ শতাংশ আদিবাসী কোটা পুনর্বহালের দাবিতে পিসিপি ও এইচডাব্লিউএফ’র

আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): বাংলাদেশের পাহাড় ও সমতলে বসবাসরত আদিবাসীদের জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৫ শতাংশ আদিবাসী কোটা পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডাব্লিউএফ)। গতকাল ১০ জুলাই এক বিবৃতিতে এই দাবি জানায় সংগঠন দু’টি।

বিবৃতিতে বলা হয়, বিগত ২০১৮ সালে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফলস্বরূপ মন্ত্রীসভার এক বৈঠকে দেশের সকল কোটা ব্যবস্থা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঐ বছরের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম গ্রেড (পূর্বতন ১ম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিলের পরিপত্র জারি করে। তবে ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধী ও আদিবাসীদের চাকরির জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।

পিসিপি’র কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সম্পাদক অন্বেষ চাকমা স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১৮ সালে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের আগ পর্যন্ত বিসিএসসহ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে আদিবাসীদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু পাহাড় ও সমতলের ৫০টিরও অধিক আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী মিলে প্রতিবছরেই ওই ৫ শতাংশ কোটার এক-তৃতীয়াংশেরও কম আসন পূরণ করতে সক্ষম হতো না। আদিবাসীদের নানা আর্থ-সামাজিক বাস্তবতার কারণে যেখানে কোটার এক-তৃতীয়াংশ আসন পূরণ করতে কষ্টসাধ্য ছিল, সেখানে পুরো কোটা বাতিল করে দেওয়া মানে তাদের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার সমান। বাংলাদেশ সংবিধানে পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর নাগরিকদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথা বলা আছে। আদিবাসী কোটা ব্যবস্থা বাতিলের বিষয়টি সংবিধানের মৌলিক চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

গত ৫ জুন ২০২৪ তারিখে হাইকোর্ট ২০১৮ সালে জারিকৃত প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণা করে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করার রায় দিলেও এখানে আদিবাসী কোটা সম্পর্কে অষ্পষ্টতা রয়ে যায় উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরো বলা হয়,  পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত আদিবাসীরা এখনো আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে মূলধারার জনগোষ্ঠী সমপর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। কোটা ব্যবস্থা বাতিল হওয়ার ফলে আদিবাসীদের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে পিসিপি ও এইচডাব্লিউএফ মনে করে। এছাড়াও ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ঘ খন্ডের ১০ নং ধারায় আদিবাসীদের জন্য সরকারি চাকরি ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা বহাল রাখার কথা উল্লেখ আছে। তাই সরকারি চাকরিতে আদিবাসী কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে দেওয়াটা সরকারের একদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পরিপন্থী অবস্থান এবং অপরদিকে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীকে মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করার সামিল।

তাছাড়া আদিবাসীদের শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে বাংলাদেশের অগ্রগতিতে তাদের অংশীদার হতে আদিবাসী কোটার পুনর্বহাল অতীব জরুরি উল্লেখ করে বিবৃতিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে আদিবাসী কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন সরকারের নিকট জোর দাবি জানায়।

 

Back to top button