প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পুর্তি উদযাপন করবে ওয়ার্কার্স পার্টি: সমাজতন্ত্রের পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার আহবান
আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পঞ্চাশ বছর পুর্তিতে সমাজতন্ত্রের পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার আহবান জানালো বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। আজ ১৫ মে ২০২২ রবিবার ওয়ার্কার্স পার্টির সুবর্ণজয়ন্তীর বছরব্যাপি কর্মসূচি তুলে ধরার লক্ষে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পলিটব্যুরোর সদস্য ও উদযাপন কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মাহমুদুল হাসান মানিক ও কামরূল আহসান বক্তব্য তুলে ধরেন। সকাল ১১টায় সংগঠনটির কার্যালয় সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন আনিসুর রহমান মল্লিক। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য পাঠ করেন উদযাপন কমিটির যুগ্ম আহবায়ক কামরূল আহসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পলিটব্যুরোর সদস্য হাজী বশিরুল আলম, কেন্দ্রীয় মিটির সদস্য দিপাংকর সাহা দিপু, আমিরুল হক আমিন, মোস্তফা আলমগীর রতন, জাকির হোসেন রাজু, কিশোর রায়, বেনজির আহমেদ, মুর্শিদা আখতার নাহার, মুতাসিম বিল্লাহ সানি প্রমুখ।
নিচে সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য দেয়া হলো।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আগামী ১৭ মে’ ২০২২ বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিষ্ঠার পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হবে। এই পঞ্চাশ বছর যেমন ছিল সুমহান আন্দোলন অর্জনের, তেমনি লক্ষ্য পূরণ করতে না পারার ব্যর্থতার গ্লানির। এই পঞ্চাশ বছরে পার্টি যেমন এগিয়েছে, তেমনি পিছিয়েছে। স্বাধীনতার পরপরই পার্টি বহুধাবিভক্ত বাম কমিউনিস্ট গ্রুপগুলোকে একত্রিত করার উদ্যোগ নেয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অর্জনসমূহ সংহত করে সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে পার্টি অসম্প্রদায়িক জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনের কাজে উদ্যোগী হয় এবং কমিউনিস্ট আন্দোলনকে পুর্নগঠনের প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (লেনিনবাদী) প্রতিষ্ঠা করে। বহুবিধ বিভক্তি ও ঐক্যের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (লেনিনবাদী) বর্তমানে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি নামে এগিয়ে চলেছে। এই পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় লেনিনবাদী পার্টি যেমন বিভক্তির মুখে পড়েছে, তেমনি বিভিন্ন উপধারায় বিভক্ত বাম কমিউনিস্ট অন্যান্য গ্রুপগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করেছে ও শেষ অব্দি ১৯৯২ সালের মে মাসে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিতে সংগঠিত হয়ে এক নতুন পথের উন্মোচন করেছে।
এখনো বিভক্তির ধারা শেষ হয় নেই এবং এ কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে পার্টি কমরেডদের মতাদর্শগত অবস্থান, সাংগঠনিক শৃংখলা ও ঐক্য উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, একে মোকাবিলা করে নিরন্তর অন্ত:পার্টি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পার্টিকে মতাদর্শগতভাবে দৃঢ়, সাংগঠনিকভাবে সুশৃংখল ও সর্বোপরি শ্রেণী ও গণসংগ্রামের উপযুক্ত অগ্রগামী বাহিনী হিসাবে পার্টি এগিয়ে চলেছে দেশের ভবিষ্যত বিপ্লবী পরিবর্তনের পথে।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, বিভিন্ন সময় কিছু সদস্য আদর্শ ও কৌশলের প্রশ্নে বিরোধীতা করে পার্টি থেকে বেরিয়ে গেছে। কিন্তু পার্টি (ওয়াকার্স পাটি) ঐ ঐক্যের ধারায় এখনও সংঘবদ্ধ আছে। বিভিন্ন বিভক্তি, আন্দোলনের ব্যর্থতা, মতাদর্শিক অবনতি, সাংগঠনিক শৃংখলার ক্ষেত্রে দৃঢ়তার অভাব এবং বিশেষ করে নব্বইয়ে সমাজতান্ত্রিক শিবিরের বিপর্যয়ের পর ব্যক্তিগত লাভ, সুবিধা, অর্থনীতিবাদ, সংসদীয়বাদ, সাম্প্রদায়িক ও ধর্মাশ্রয়ী চিন্তার কাছে আত্মসমর্পন পার্টিকে আকীর্ণ করে রেখেছে ।
ওয়াকার্স পার্টি এই মুহূর্তের কাজ হিসাবে ২১ দফা কর্মসূচীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ৫০ বছর পুর্তিতে বছরব্যাপি অনুষ্ঠানমালার মধ্যে থাকবে আলোচনা সভা, প্রয়াত নেতৃবৃন্দের ছবি প্রদর্শন, তোড়ন নির্মাণ, সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সংবাদ সম্মেলনে ঘোষিত অনুষ্ঠানমালা হল-
১৭ মে ২০২২ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উৎসব কেন্দ্রীয় অফিস (জেলা-উপজেলা অফিস-যেখানে সম্ভব) সজ্জিতকরণ, তোরণ নির্মাণ, আলোকসজ্জা, প্রয়াত নেতৃবৃন্দের ছবি প্রদর্শণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
৩১ মে শহীদ জামিল আখতার রতনের মৃত্যুবার্ষিকী ঃ বাংলাদেশে জামাতে ইসলামের উত্থান, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা অনুষ্ঠান।
৫ জুন পরিবেশ দিবস ঃ গঙ্গা, তিস্তা, যমুনা, মেঘনা ব্যবস্থাপনা ও পানির উপর কৃষক ও আদিবাসীর অধিকার।
১৮ জুন ম্যাক্সিম গোর্কীর মৃত্যুদিবস ঃ গণতান্ত্রিক ও সাম্যবাদী আন্দোলনে সাহিত্য ও সাংস্কৃতির ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা।
২৬ জুন শহীদ জননী জাহানারা ইমামের মৃত্যুবার্ষিকী ঃ ঘাতক দালাল বিরোধী আন্দোলন ও যুদ্ধাপরাধী বিচারের তাৎপর্য।
১৩ আগস্ট ফিদেল ক্যাস্ট্রো,চেগুয়েভারা ও স্যাভেজ স্বরণে ঃ সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন ও লাতিন আমেরিকার অভিজ্ঞতা।
১৭ আগস্ট সন্ত্রাসবিরোধী দিবস: সন্ত্রাস, গুম, খুন, ধর্ষণ প্রতিরোধ বিষয়ক আলোচনা।
৯ সেপ্টেম্বর কমরেড মাও সেতুংয়ের জন্মদিন ঃ জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব : তত্ত্ব ও তার প্রয়োগ।
২৮ অক্টোবর ২০২২ শহীদ কমরেড রাসেল আহমেদ খান মৃত্যুবার্ষিকী: বিএনপি-জামাত জোট বিরোধী আন্দোলন।
১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবস: শিক্ষা আন্দোলন-অতীত ও বর্তমান।
৭ নভেম্বর রুশ বিপ্লব বার্ষিকী। প্রথম সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সোভিয়েত রাশিয়ার উত্থান ও পতন।
৮ নভেম্বর কমরেড আবুল বাশার, কমরেড শফিকুর রহমান মজুমদার, কমরেড এটিএম নিজামুদ্দিন, কমরেড হাফিজুর রহমান ভূঁইয়া ও কমরেড শফিউদ্দিন আহমেদ স¥রন : বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের অতীত ও বর্তমান।
১০ নভেম্বর শহীদ নুর হোসেন দিবস ঃ এরশাদ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন।
১৭ নভেম্বর মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী ঃ ভাসানী ও স্বাধীনতা।
৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস: পঞ্চাশ বাংলাদেশের নারী আন্দোলন; অতীত ও বর্তমান।
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ।
জানুয়ারিতে গণশিল্পী সংস্থার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী: বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছরে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অতীত ও বর্তমান।
১৭ জানুয়ারি ২০২৩ কমরেড অমল সেনের মৃত্যুদিবস ঃ বাংলাদেশের কৃষক-খেতমজুর আন্দোলন: অতীত ও বর্তমান।
২০ জানুয়ারি ২০২৩ শহীদ আসাদ দিবস ও ২৪ জানুয়ারি ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে ২৩ জানুয়ারি ঃ ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ শহীদ দিবস।
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ববাংলা ঘোষণা দিবস ঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বামপন্থীরা।
২৬ মার্চ ২০২৩ স্বাধীনতা দিবস।
১৪ এপ্রিল ২০২৩ বাংলা নববর্ষ ও তার সাংস্কৃতিক-সামাজিক তাৎপর্য।
১৮ এপ্রিল ২০২৩ চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন দিবসঃ চট্টগ্রামের যুব বিদ্রোহ, বাংলাদেশের যুব আন্দোলন যুবকদের অতিত ও বর্তমান।
২৪ এপ্রিল ২০২৩ খাপড়া ওয়ার্ড দিবস: রাজনৈতিক বন্দীদের লড়াই।
১লা মে ২০২৩ মে‘দিবস।
৫ মে,২০২৩ কার্লমার্কস, ফ্রেডরিখ এঙ্গেলসের, লেনিন ও স্ত্যালিন স্বরণেঃ কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার, লেনিনবাদ ও জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম।
১৭ মে ২০২৩ পঞ্চাশ বছর পূর্তি সমাপনী অনুষ্ঠান ওয়ার্কার্স পার্টির পঞ্চাশ বছরের পথচলা শীর্ষক আলোচনা।