পিসিপি চট্টগ্রাম পলিটেকনিক শাখার উদ্যোগে চট্টগ্রামে নবীণ বরণ এবং বিদায় অনুষ্ঠিত

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ “পরাধীনতা নয়, বেছে নাও মুক্তির পথ, আত্মকেন্দ্রীকতার শৃঙ্খল ভেঙে গড়ে তুলি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ”-এই শ্লোগানকে সাথে নিয়ে ২৮শে অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগরে প্রথমবারের মত পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক শাখার উদ্যোগে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সমূহের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের আদিবাসী নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ এবং ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান, চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড়ে কদম মোবারক হল-এ অনুষ্ঠিত হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ,চট্টগ্রাম পলিটেকনিক শাখার সভাপতি মিটুল চাকমা বিশাল-এর সভাপতিত্বে, উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট বিধায়ক চাকমা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমন্বয়ক শরৎজ্যোতি চাকমা ,পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছাত্রনেতা জুয়েল চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন-চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি(ভারপ্রাপ্ত) মো: গোলাম সারোয়ার,পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ-চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সহ-সভাপতি বাবলু চাকমা,পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ-চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রিতিশ চাকমা।
প্রধান অতিথির বক্তব্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট বিধায়ক চাকমা বলেন,আপনারা পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে যারা এখানে এসে পড়াশোনা করছেন,তারা সবাই পার্বত্য চট্টগ্রামের এক একটি দূত। এই দূতের কাজ হবে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাগুলোকে ভালোমত জানা, সেখানকার বাস্তব অবস্থাকে এখানকার প্রগতিশীল ছাত্র সমাজের কাছে তুলে ধরা। আজ যারা বিদায়ী,তারা হয়তো কোন পেশায় নিয়োজিত হবেন,সেটা সরকারী হোক বা বেসরকারী হোক। কিন্তু যেন ভূলে না যায় সেই শিখরকে,যে শিখড়ের জোড়ে আমাদের বেড়ে ওঠা। আমাদের মাথা যতই উপরে উঠুক, পা যেন মাটিতেই থাকে। তিনি আরও বলেন,মানুষ তখনই পরিপূর্ণ মানুষ হয়, যখন তার মনুষ্যত্ববোধের পূর্ণবিকাশ করতে সে সক্ষম হয়। তাই সেই মনুষ্যত্ববোধ বিকাশের মাধ্যমে ছাত্রসমাজ তার এতিহাসিক দায়িত্ব পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমন্বয়ক শরৎজ্যোতি চাকমা বলেন,আমিও এই চট্টগ্রামেরই ছাত্র। কিন্তু আমরা যেটা পরিনি,সেটা আজ বর্তমান পলিটেকনিক শাখা করে দেখিয়েছে,তার জন্য আমি পলিটেকনিক শাখাকে ধন্যবাদ জানান। এই ধারাবাহিকতা যাতে বজায় থাকে,উনি সে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ,কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জুয়েল চাকমা বলেন,সকল প্রকার অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিবাদ-প্রতিরোধের অন্যতম হাতিয়ার এই ছাত্র সমাজ। একটি সমাজ তখনই
পররিপূর্ণতা লাভ করে,যখন সমাজের নারী-পুরুষ স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে সেই সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তাই আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই-সংগ্রামেও নারীদপর অংশগ্রহণ অত্যাবশ্যক। জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই-সংগ্রামে এই ছাত্র-যুব সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন,চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি মো: গোলাম সারোয়ার(ভারপ্রাপ্ত) বলেন,শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা একজন ব্যাক্তিকে শিক্ষিত করে তুলতে পারে না। তার জন্য প্রয়োজন কঠোর অধ্যবসায়। পৃথিবীর কঠিন কাজের মধ্য অন্যতম কাজ হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক হওয়া,তরুণ প্রজন্মকে সেভাবেই নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রিতিশ চাকমা বলেন,পার্বত্য চট্টগ্রামের বুক ছেড়ে, নিজের শেখরকে ছেড়ে এই শহরে পড়াশোনা করতে এসেছি। তাই সেই শিখরকে ভূলে গেলে চলবে না।আমরা যদি পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস পর্যালোচনা করি,তাহলে দেখতে পায়,এই ছাত্র সমাজই পার্বত্য চট্টগ্রামের লড়াই সংগ্রামকে ধরে রেখেছিল। তাই আজকেও সেই গুরু দায়িত্ব ছাত্র সমাজকেই নিতে হবে।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিদায়ীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন,চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র অনুপম চাকমা,নবীনদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন ডেফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি-এর ছাত্র সুপ্রিয় চাকমা। নবীনদের উদ্দেশ্য মানপত্র করেন চট্টগ্রাম মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর ছাত্রী রুবি চাকমা, বিদায়ীদের উদ্দেশ্য অভিনন্দন পত্র পাঠ করেন,চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্রী উক্রাইনু মারমা।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক ক্যাসিং মং মারমা এবং অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সুরেশ চাকমা।