মতামত ও বিশ্লেষণ

পিসিপির ২৮ বছরঃ আদর্শিক চেতনায় ছাত্র আন্দোলন জোরদার করুন – বাচ্চু চাকমা

সারা বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। তথাকথিত গনতন্ত্রের অবমাননার মিথ্যার ধুয়া তুলে অগনতান্ত্রিক কায়দায় দেশ পরিচালনা করা হচ্ছে। এক অদ্ভুত বৈপরীত্যের মধ্যে গোটা দেশের মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে। সারাদেশে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, র্দূবৃত্তায়ন, অনিয়ম অতীতের মতই অব্যাহত রয়েছে। পাকিস্তানী কায়দায় সাম্প্রদায়িক অপশক্তির মেলবন্ধনে কোমলমতি শিশুদের পাঠ্যপুস্তকের সাম্প্রদায়িকীকরণ হয়েছে। বাংলাদেশের আদিবাসী ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর চলছে নির্যাতন-নিপীড়ন, অত্যাচার-অবিচার। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর সঙ্গে লেজুরবৃত্তি করে বিদেশের বড়-বড় কোম্পানির সাথে চুক্তি করে দেশকে বিকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিএনপির সময়ে জামাতকে কোলে নিয়ে নির্বাচনের রাজনীতি অপসংস্কৃতির সূচনা করেছিল। সেই রাজনীতির অপসংস্কৃতি থেকে মহাজোটের নেতৃত্বাধীন সরকার আওয়ামীলীগও সাম্প্রদায়িক একটি দল হেফাজত ইসলামকে কোলে নিয়ে একই কায়দায় নির্বাচনের টিকে থাকতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। যে যায় লংকায় সে হয় রাবন-বর্তমান আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ও তাই হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে চারিদিকে রুদ্ধশ্বাস এক পরিস্থিতি ও আমাদের জুম্ম জনগনের বুকের উপর দিয়ে বয়ে চলেছে। সেনাশাসন ও নির্যাতন চলছে নির্বিচারে। অত্যাচার ও শোষণের মাত্রা দিনের পর দিন বৃদ্ধি পেতে চলেছে। শোষণের কালো থাবায় জর্জরিত পাহাড়ের জুম্ম জনগন। আমাদের চোখের সামনে বোনকে ধর্ষণ করা হয়, ভাইকে বেয়নেট দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয়। কেড়ে নেওয়া হচ্ছে আমাদের পূর্ব পুরুষদের আবাদ করা সমস্ত জায়গা জমি ও বসতভিটা। বিজাতীয়রা ব্যবসা বানিজ্যগুলো একচ্ছত্র আদিপত্য বিস্তার করে চলেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের অফিস, আদালত সমস্ত কিছু বিজাতীয়দের দখলে। নির্মম ও নিষ্ঠুর পরিস্থিতির মধ্যে এগিয়ে যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম ছাত্র ও যুব সমাজ। অন্যায়ভাবে আমাদের পাহাড়ের সাধারণ মানুষ ও সংগঠনের কর্মীদের জেলে আটকানো হয়। বন্দী কারাগারে অমানষিক জীবন কাটাতে হয়। শাসকগোষ্ঠীর নগ্ন থাবায় পৈশাষিক অত্যাচারে আমাদের জীবনগুলো আজ ক্ষতবিক্ষত ও বিলুপ্ত প্রায় আমাদের জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব। পার্বত্য চট্টগ্রামের চারিদিকে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ানো হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুক, মেডিয়ায়, দৈনিক প্রকাশিত কিছু পত্রিকা ও অনলাইনগুলোতে চুক্তি বিরোধী এবং জুম্মস্বার্থ পরিপন্থী রাজনৈতিক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো পাহাড়ের বুকে মাথা সাড়া দিয়ে উঠেছে। ধর্মীয় উন্মাদনায় মেঠে উঠেছে মৌলবাদী গোষ্ঠী। ইসলামী সম্প্রসারণবাদ আজ প্রকট আকার ধারণ করছে। যা পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে জটিল থেকে জটিলতর করে তুলেছে। শাসকগোষ্ঠীর কাছে মানবতা বলতে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। অনৈতিক সমস্ত কার্যক্রম ঘটে চলেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগনের কোন মূল্য নেই, কুকুর শৃগালের মত রাস্তাঘাটে মানুষ মারা গেলেও তার কোন বিচার হয় না। আইনের শাসন বলতে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। চারিদিকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থা আজ বিশৃঙ্খলার চরম সীমায় অবস্থান করছে। পাহাড়ের বুকে আজ হাহাকার নৈরাজ্য ও অরাজকতা। সামাজিক অধ:পতনের দিকে জুম্ম ছাত্র ও যুব সমাজকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। মানবিক বিকাশের পথে বাধা সৃষ্টি করছে শাসকশ্রেনী। বেদনাকর নিষ্ঠুর ও অমানষিক শোষণ ও নির্যাতন চালিয়ে শাসকশ্রেণী জুম্ম জাতির ইতিহাসের পৃষ্টাকে কলংকিত করছে।

রাজনৈতিক অধিকার ছাড়া কোন জাতি পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকতে পারেনি। জুম্ম জনগনের রাজনৈতিক অধিকারের প্রাথমিক সনদ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি আজ পদদলিত। কঠিন এক বাস্তবতার মুখোমুখী ছাত্র ও যুব সমাজ। পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে চারিদিকে মদ, গাজা, হেরোইন, জুয়ার আসর জমজমাট। ছাত্র ও যুব সমাজ আসক্ত হয়ে উঠেছে মরণ নেশায়। শহরের ক্লাবগুলোতে চলছে অবাধে মদ, জুয়ার আসর। শাসকশ্রেণী কৌশলে সেই মরণ নেশার আসর আয়োজন করে রেখেছে। আমাদের জুম্ম তরুন ছাত্র ও যুব সমাজকে যদি নেশায় মত্ত করে রাখা যায় তাহলে শাসকগোষ্ঠীর আসল উদ্দেশ্য স্বার্থক। যুগ যুগ ধরে জুম্ম জনগনকে শাসন শোষণ করে দরিদ্র করে রাখা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাঘাইছড়ি উপজেলা সাজেক ইউনিয়নের দূর্গম এলাকায় যে খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে, সেখানে ঠিকমত চাউল পৌঁছানো কষ্টকর হয়েছে। জুম্ম শিক্ষার্থী বন্ধুরা ত্রাণ উত্তোলন করে সেখানে চাউল পৌঁছানোর জন্য যারা দায়িত্ব পালন করে চলেছেন-তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। অনন্তকাল ধরে পাহাড়ের সম্পদগুলো সমতল এলাকা থেকে এসে লুট করে নেওয়া হয়েছে, এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। জুম্ম জনগন পাহাড়ের বুকে কোনদিন দরিদ্র ছিল না, আমাদেরকে দরিদ্র করে রাখা হয়েছে। দীর্ঘ দুই যুগের অধিক বীরত্বপূর্ণ স্বশস্ত্র লড়াই সংগ্রাম হয়েছিল পাহাড়ের বুকে। জুম্ম জাতির বীর সেনানীরা অসীম সাহসিকতা নিয়ে শত্রু বাহিনীর সাথে লড়াই করেছিল। সেই বীর সেনানীদের সাহস ও শক্তি যুগিয়েছিল প্রত্যন্ত এলাকার খেতে-খাওয়া নিরন্ন মানুষ-যারা জুমচাষ করে, যারা চাষাবাদ করে, যারা ক্ষেত খামারে কাজ করে, যারা গরীব মেহনতি মানুষ। শত্রু বাহিনীর কবল থেকে অনেক বীর যোদ্ধার প্রাণ তারা রক্ষা করেছিল। সেই প্রত্যন্ত এলাকায় আবারও ছাত্র ও যুব সমাজকে ফিরে যাওয়ার সময় এসেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জুম্ম জনগন হাজারো র্মমান্তিক হৃদয় বিদারক কালো অধ্যায় পেরিয়ে এসেছিল। বর্তমান ও ভবিষ্যতে আরও অনেক কঠিন বাস্তবতা পেরিয়ে ছাত্র ও যুব সমাজকে পথ চলতে হবে। ভিয়েতনামে মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদ কনসেট্রেশন ক্যাম্প নির্মাণ করে সেখানকার জনগনকে বন্দী জীবনে নিক্ষেপ করেছিল। পাহাড়ের বুকে এক সময় জুম্ম জনগনের উপর একইভাবে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বরতম নির্যাতন চালিয়েছিল। গুচ্ছগ্রাম, শান্তি গ্রাম, আদর্শ গ্রাম নাম দিয়ে জুম্ম জনগনকে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় জড়ো করা হতো। চারিদিকে সেনা বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে রাখা হতো। সেনাবাহিনীদের অনুমতি ছাড়া সেনা বেষ্টনী থেকে কোথাও বাহির হতে পারতো না। বন্দী নিবাসে পাহাড়ের মানুষের জীবন অতিবাহিত করতে হয়েছে। জুম্ম জাতির সেই কালো অধ্যায়গুলোর কথা ছাত্র ও যুব সমাজকে কখনো ভুলে থাকতে পারে না।

বিশ্বের দরবারে জুম্ম জাতিকে স্থান করে দেওয়ার মহান দায়িত্ব আমাদের কর্মী বন্ধুদের নিতে হবে বলে আমি মনে করি। আমাদের জুম্ম জনগনের জীবন্ত কিংবদন্তী প্রাণপ্রিয় নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা বলেছেন, মানুষ চিরদিন বাঁচে না, বস্তুর ধ্বংস ও সৃষ্টির অনিবার্য পরিনতির দিকে আমাকেও এগিয়ে যেতে হবে। সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা চুক্তি স্বাক্ষর করে দিয়েছি, তাই বলে কি আমাদেরকে চুক্তি বাস্তবায়ন করে দিতে হবে? চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছাত্র ও যুব সমাজের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। ছাত্র সমাজের সংগ্রামের ঐতিহ্যকে স্মরন করে দিয়ে বলতে চাই, ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯ এর গনআন্দোলন, ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ৯০ এর সৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন-ছাত্র সমাজের ঐতিহ্যমন্ডিত ভূমিকা স্মরণযোগ্য। তাই মানব সভ্যতার অগ্রগতি, শ্রমজীবী মানুষ, মেহনতি মানুষ ও নিপীড়িত জুম্ম জাতির সংগ্রামের ইতিহাস গভীরভাবে উপলদ্ধি করতে হবে। মানব সমাজের ইতিহাস হলো উৎপাদন সংগ্রাম, শ্রেণীসংগ্রামের ইতিহাস। পৃথিবীব্যাপী যা কিছু অগ্রগতি ও পরির্বতন, বির্বতন হয়েছে শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষের শ্রমের বিনিময়ে হয়েছে। সেকারনে জুম্ম জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পাহাড়ের বুকে বেঁচে থাকা নিরন্ন ক্ষেতে খাওয়া মেহনতি মানুষগুলোকে ঐক্যবদ্ধ ও জাগ্রত করার দায়িত্ব ছাত্র সমাজের উপর বেশি। জন্মভূমি ও জাতীয় অস্তিত্ব সংরক্ষণের জন্য যারা জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছিলেন তাদের জীবনে বর্তমান বাস্তব চিত্রগুলো আপনাদের উপলদ্ধি করতে হবে-তারা কিভাবে বেঁচে রয়েছে। প্রতিকূল পরিস্থিতি ও কঠিন বাস্তবতার সাথে লড়াই করে আজো তারা নীতি, আদর্শ থেকে বিচ্যুৎ হয়নি। জেল, জুলুম, পুলিশ, নির্যাতন-নিপীড়ন, দমনপীড়ন মৃত্যু কিছুতেই তারা ভয় পায় না। রক্তাক্ত সংগ্রামের পথ বেয়ে চলার তাদের জীবনের অভিজ্ঞতালদ্ধ যে জ্ঞান, সেটা আহরণ করে ভবিষ্যত দিনগুলোতে আমাদের কর্মী বন্ধুদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। বীর যোদ্ধাদের আদর্শের ঝান্ডা বহন করে জন্মভূমি ও জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে আপনাকে সামিল হতে হবে। পৃথিবীর বুকে কোন শাসকশ্রেণী অধিকার বঞ্চিত কোন জাতিকে সংগ্রাম ছাড়া, বিপ্লব ছাড়া অধিকার দেয়নি। পাহাড়ের বুকে জুম্ম জাতির তিক্ত অভিজ্ঞতা ও বাস্তবতার আলোকে ঐতিহাসিকভাবে প্রমানিত হয়েছে-অধিকার কেউ কাউকে দেয় না, অধিকার আদায় করে নিতে হয়। আপনাদের নিশ্চয় অজানা নয়, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা আরো কঠিন। সেই কঠিন কাজটি বাস্তবায়নের জন্য দাবী আদায়ের সংগ্রাম নিরন্তরভাবে চালিয়ে যেতে হবে।

আমাদের চোখের সামনে কত অন্যায় অবিচার ঘটে যাচ্ছে, সেটাকে দেখার পরেও যদি আমাদের মানবতাবোধ জাগ্রত না হয়, তাহলে সংগ্রাম করার মানে কি! প্রয়াতনেতা এম এন লারমা যে, আদর্শকে বুকে নিয়ে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে দেখিয়েছেন, সেটাকে অন্তর দিয়ে লালন করা ছাড়া আমাদের বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। আপনাদের মধ্যে যে চেতনা ও আদর্শ রয়েছে সেটা জাগরিত করা দরকার। আজ আমরা অধিকারহীন, জুম্ম জাতি অধিকার চায়, নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে মুক্তি চায়। জুম্ম জাতির মুক্তির জন্যে নিজেকে বলীয়ান সৈনিক হয়ে সামনে এগিয়ে আসার সংখ্যাটা খুবই কম দেখা যায়। আপনাদের স্মরণ করে দিতে চায়, পাহাড়ের বুকে অপ্রতিরোধ্য ছাত্র আন্দোলনকে দাবিয়ে রাখার জন্য এক সময় শাসকশ্রেণী কঠোর পদক্ষেপ হাতে নিয়েছিলেন। দমন-পীড়ন, অত্যাচার, জেল, জুলুম, হুলিয়া জারী করে ছাত্র আন্দোলনকে ভিন্ন পথে নিয়ে যাওয়ার ব্যর্থ অপচেষ্টা চালিয়েছিল শাসকগোষ্ঠীরা। নিপীড়নের নগ্ন বহি:প্রকাশ জুম্ম ছাত্র সমাজ প্রত্যক্ষ করেছে। পাহাড়ের বুকে গুলি করে হত্যা করেছিল মিছিলে আসা শহীদ ভরদ্বাজমনি, ক্যজই মারমা, লাল রিজার্ভ বম, সনজিৎ তঞ্চঙ্গ্যা, রুপম, সুকেশ, মনতোষ, সমর বিজয়, ভূবনমনি, দীঘিনালার রিংকু, পেজকা মারমা, মংচসিং মারমাসহ আরো অনেক বীর যোদ্ধাদের। লড়তে লড়তে তারা মৃত্যুকে আলিঙ্গণ করে চলে গেছেন, তারপর ও তারা পরাজয় মানেননি। তাঁদের অজেয় শক্তি, র্দুদান্ত সাহসিকতার কথা ছাত্র সমাজকে ভুলে গেলে চলবে না। শাসকশ্রেণী রাষ্ট্রযন্ত্রের সমস্ত হাতিয়ার আমাদের জুম্ম জাতির উপর নিক্ষেপ করছে। উৎপীড়ক শাসকশ্রেণী প্রতিটি ক্ষেত্রে নগ্ন থাবা বিস্তার করে চলেছে। জাতিগত নিপীড়ন ও বৈষম্যের শিকার আমরা চারিদিকে, ন্যায় বিচার আমরা কোথাও পায় না। হয়রানি ও বিমাসুলভ আচনের শিকার হয়ে জুম্ম জনগন সর্বোচ্চ হারাচ্ছে। অনন্তকাল ধরে বসবাসরত আমাদের পূর্ব পুরুষদের ভিটামাটি প্রতিদিন বেদখল করে নেওয়া হচ্ছে। শাসকশ্রেণীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় নিরবে প্রতিদিন বেআইনীভাবে বহিরাগত বাঙ্গালী অনুপ্রবেশ ঘটানো হচ্ছে। সেই বহিরাগত বাঙ্গালী দ্বারাই সংগঠিত হয়েছে গনহত্যা, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ, নারী ধর্ষণ, ভূমি বেদখল ও মানবতা বিরোধী সকল কর্মকান্ড। চুক্তি অনুযায়ী ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১ যথাযথ সংশোধন হলেও শাসকশ্রেণীর আন্তরিকতার অভাবে কমিশন এখনো আলোর মূখ দেখেনি। এভাবে চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন না করে বরং উল্টো সরকার নিজেই চুক্তি বিরোধী ও জুম্মস্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এমনিতর পরিস্থিতি ও বাস্তবতায় পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক পরিস্থিতি কঠিন থেকে কঠিনতর অবস্থায় নিয়ে যেতে শাসকগোষ্ঠী বাধ্য করছে। ৭০ দশকের মতো অগনতান্ত্রিক পথে চলে যেতে ছাত্র ও যুব সমাজকে বাধ্য করা হচ্ছে। আর নয় দুদুল্যমানতা-আন্দোলনের প্রতি দ্বিধা, সংশয় না রেখে এম এন লারমার সংগ্রামী চেতনাকে বুকে নিয়ে, সন্তু লারমার নেতৃত্বে লড়াই-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। যতক্ষন ছাত্র অবস্থায় থাকবো-ততক্ষণ ঘন্টা বাজাবো-এই সুবিধাবাদী নীতি পরিহার করে জুম্ম জাতির মুক্তিই হবে ছাত্র সমাজের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

শাসকগোষ্ঠী পাহাড়ের বুকে গনতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রক্রিয়াকে এক সময় স্তব্দ করে দিতে চেয়েছিল। পাহাড়ের বুকে মুখোশ বাহিনী, আঙ্গুল বাহিনী স্পাই বাহিনী, গুগ্রুক বাহিনী, আর কত বাহিনী গড়ে তুলেছিল, জনসংহতি সমিতির আন্দোলনকে স্তমিত করে দেয়ার জন্য। ছাত্র আন্দোলনের অপ্রতিরোধ্য গতিধারাকে কালিমালেপন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। শাসকগোষ্ঠীর সমস্ত হাতিয়ার আন্দোলনের বিপক্ষে ব্যবহার করেছিল। ছাত্র ও যুব সমাজের অপ্রতিরোধ্য লড়াইয়ের কাছে শাসকশ্রেণীর সমস্ত ষড়যন্ত্র অপকৌশল, কুটচাল চূর্নবিচূর্ন হয়ে গিয়েছিল। সেই রক্তাক্ত সংগ্রামের ইতিহাস বুকে ধারণ করে আজো আমাদের পার্টির নেতৃত্বে পাহাড়ী ছাত্র পরষদ আপোষহীন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। শাসকশ্রেণীর অমানবিক আচরণ প্রতিদিন-প্রতিমুর্হুত দেখে চলেছি। জুম্ম জনগনের জীবনযাত্রা জুম্ম জাতীয় জীবনে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। সকল মৌলিক অধিকার থেকে, মানবিক অধিকার থেকে আমাদের জুম্ম জনগনকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। পৃথিবীর মানচিত্র থেকে আমাদের জুম্ম জাতির নাম ঠিকানা মুছে দিতে চায়। ভিয়েতনামের মুক্তির দিশারী হো চি মিন বলেছিলেন-“বাঁচতে চাও তো বিপ্লবের কাজে লেগে যাও”। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগন যেকোন মূল্যে পাহাড়ের বুকে মানুষের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। জুম্ম জাতির জাতীয় জীবনে বারেবারে সংকট নেমে এসেছিল। জাতির দূর্দিনে সংকট মোকাবেলায় অসীম সাহস নিয়ে পাহাড়ের বুকে আমাদের জুম্ম জাতির বীর সেনানীরা এগিয়ে এসেছিল। তাঁদের মেধা, ঘাম, রক্ত ও জীবন দিয়ে গড়ে উঠেছে জুম্ম জাতির সংগ্রামের গৌরবোজ্জল ইতিহাস। মুক্ত মানবের মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠাই হলো আপনাদের লক্ষ্য। কিন্তু সেই মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে প্রবল বৈরি ¯্রােতে দাঁড়িয়ে আপনাদের লড়াই করতে হচ্ছে। সমাজের প্রগতিশীল চেতনাকে বুকে ধারণ করে সামনে দিকে এগিয়ে চলতে হবে। আমাদের চলার পথকে কেউ রুদ্ধ করে দিতে পারে না-যদি আমরা মহান মুক্তির মহান আদর্শকে ধারণ করতে পারি এবং সেটা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারি। জুম্ম জনগনের করুন পরিনতির জন্য দায়ী হলো এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা। দুঃখ, যন্ত্রণা, অভাব জুম্ম জাতির মানুষগুলোকে যন্ত্রণায় দগ্ধ করেছে এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ভূমির উপর অধিকার, বনের উপর অধিকার, জন্মভূমির উপর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের লড়াই কোন জাতির বিরুদ্ধে নয়, আমাদের লড়াই শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে, যারা আমাদের জুম্ম জাতিকে বঞ্চিত করে রাখতে চায়, ন্যায্য অধিকার দিতে চায় না। সাম্প্রদায়িকতা, উগ্র মৌলবাদ ও ইসলামী সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে আমাদের কন্ঠ প্রতিধ্বনিত হবে পাহাড়ের বুকে।

জন্ম হলেই মানুষের মৃত্যু অবধারিত। একজন মানুষকে হত্যা করা যায়, কিন্তু একটি মানুষ যখন একটি আদর্শ বা একটি জাতির আশা আঙ্খাকার প্রতীক হয়ে উঠে তখন তাকে হত্যা করা গেলেও তিনি যে আদর্শ বা চিন্তাধারার প্রতীক তাকে কখনো হত্যা করা যায় না। ত্রিশ বছর বন্দী থেকেও দক্ষিণ আফ্রিকার নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা সেই আদর্শকে অবলম্বন করেই তাঁর স্বদেশকে বর্নবাদী শাসন ও শোষণ থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। জুম্ম জাতির মুক্তির পথ প্রদর্শক মহাননেতা এম এন লারমাকে হত্যা করা গেলেও তাঁর আদর্শ ও চিন্তা চেতনা আজো জুম্ম জনগনের কাছ থেকে মুছে দিতে পারেনি। তাঁর আদর্শকে বহন করে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য পাহাড়ের বুকে আমাদের বীর সেনানীরা লড়াই করেছিল। নতুন সমাজ বির্নিমাণের জন্য যখন আপনারা স্বপ্ন দেখবেন, আপনার এমন একটি আদর্শকে লালন করতে হবে-যে আদর্শের মৃত্যু নেই। যে আদর্শ পৃথিবীর বুকে অজেয় এবং সবচেয়ে প্রগতিশীল। যে আদর্শ মানুষকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা দেবে। যে আদর্শ ধনী, গরীব, উচু-নিচু, নারী-পুরুষ ভেদাভেদ সৃষ্টি করে না। অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে আপনাদের সংগ্রাম করতে হবে নিরন্তর, জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হবে। মহৎ আদর্শের জন্য যারা লড়াই করে সমাজে তারা মরেও অমর। শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামে ইসলামীকরণ নীতি প্রয়োগ করছে। এক সময় রাশিয়ায় জার শাসনামলে অরুশীয় জাতিসমূহকে বলপূর্বক রুশীকরণের নীতি তারা অনুসরণ করেছিল। ঠিক একইভাবে শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামে মসজিদ, মাদ্রাসা ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে তুলে ইসলামী সম্প্রসারণবাদ কায়েম করে জুম্ম জাতির নাম নিশানা মুছে দেওয়ার সুগভীর ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। ইসলামীকরণের নীতির ফলে জুম্ম জনগনকে জোর পূর্বক ইসলাম ধর্মান্তকরণ করা হচ্ছে। এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ছাত্র ও যুব সমাজকে প্রতিরোধের দেয়াল নির্মাণ করতে হবে। মহান পার্টির বীর সেনানীরা প্রমাণ করে দিয়েছেন, ক্ষুদ্র শক্তি নিয়েও শাসকগোষ্ঠীর কাছ থেকে অধিকার ছিনিয়ে আনা সম্ভব। বৃহৎ শক্তির সাথে লড়াই করার জন্য আমাদের প্রয়োজন সাহস, মেধা, যোগ্যতা ও আদর্শ। নীতি, আদর্শগত সুসংগঠিত কোন জাতিকে কোন শাসকগোষ্ঠী পরাজিত করতে পারেনি। পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস মানেই হলো নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের ইতিহাস। জুম্ম জাতির ইতিহাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ইতিহাস। রক্তের বন্যা বয়ে গেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে, আজো তা প্রবাহমান। পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে আপনাদের জন্য, পার্বত্য চট্টগ্রামের মাটি ও প্রকৃতির সাথে আপনাদের বেড়ে উঠা। রক্তাক্ত লাশ এবং নৃশংস গনহত্যার নীরব স্বাক্ষী আপনারা, পাহাড়ের বর্তমান নাজুক পরিস্থিতি আপনাদের প্রতিবাদী ও বিদ্রোহী করে তুলেছে। পাহাড়ের বুকে যখন আপনারা পরাধীনতার মুক্তির বানী নিয়ে জনগনের কাছে হাজির হবেন, তখন জনগনের ভাষায় আপনাদের কথা বলতে হবে। আপনাদের ব্যবহার, চলাফেরা, কথার্বাতা এবং আদর্শ দেখে জুম্ম জনগন আপনাদের আপন করে নেবে, নিজেদের মানুষ হিসেবে গন্য করবে। জুম্ম জনগনকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন এবং সংগঠিত করার দায়িত্ব আপনাদের সকলকে নিতে হবে।

পৃথিবীর বুকে এক সময় রোমান সা¤্রাজ্যকে সর্বশক্তিমান বলে মনে করতেন। সম্পূর্ণ দাস প্রথার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল রোমান সা¤্রাজ্য। দাসদের গরু ছাগলের মতো হাট বাজারে বিক্রি করা হতো। সমস্ত ধরণের নির্যাতনের স্ট্রিম রোলার চালানো হতো দাসদের উপর। দাসদের মুক্তির পথ প্রদর্শক হয়ে জন্মগ্রহণ করলো স্পার্টাকাস। তাঁর নেতৃত্বে স্বশস্ত্র ঐক্যবদ্ধ দাস বাহিনীর বিরাট অভ্যুত্থান, সেই রোমান সা¤্রাজ্যের উপর বছরের পর বছর ধরে আঘাত হেনেছিল। এই ঘটনার পর পৃথিবীব্যাপী উৎপীড়ক শাসকশ্রেণীগুলোর ভিত নড়ে উঠেছিল। পাহাড়ের বুকে জুম্ম জাতির ঐক্যবদ্ধ শক্ত ভিত দেখে শাসকগোষ্ঠী টনক নড়েছিল। জাগ্রত জুম্ম জনতা যখন ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন মূখর হয়েছে ঠিক তখনি সারা দেশের রাজনীতির নামে অপরাজনীতির চক্রান্ত শুরু করা হয়েছে তা পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকেও প্রয়োগ করা হচ্ছে। চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ার ফলে এখানকার মৌলিক সমস্যাগুলো এখনো আগের মতোই রয়েছে, কোন কোন ক্ষেত্রে তা অধিকতর জটিল আকার ধারণ করেছে। চুক্তি বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় অনীহা, উপরন্তু অপারেশন উত্তরণের নামে চলছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও তার অঙ্গ সংগঠন, সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ জুম্ম জনগনের উপর চলমান ধড়পাকড়, মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধর, হত্যা, অস্ত্র গুঁজে দিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক গ্রেফতার, মিথ্যা মামলায় জড়িত করে জেল হাজতে প্রেরণ ও মানবতা বিরোধী কার্যকলাপ অব্যাহত রয়েছে। জুম্ম জনগনের উপর চলমান আগ্রাসন পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে দিনদিন জটিল থেকে জটিলতর করে তুলছে যা জুম্ম জনগনকে কঠিনতর আন্দোলনের দিকে নিয়ে যেতে শাসকগোষ্ঠী বাধ্য করছে। চীনের মানুষ এক সময় আফিম খেয়ে ঘুমাতো, ঝিমাতো-আজ সেই চীনের মানুষ কত উন্নত সংস্কৃতির পরিচয় দিচ্ছে। আফিমের বিরুদ্ধে তারা গ্রাম থেকে শহরে, শহর থেকে গ্রামে সংগ্রাম করেছে। সেই দেশের ছাত্র ও যুব সমাজ আফিমের কড়ালগ্রাসে নিমজ্জিত ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তারা সংগ্রামের মাধ্যমে তার পরিবর্তন ঘটিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে জাতীয় ভবিষ্যত নির্মাণকারী ছাত্র ও যুব সমাজকে ধ্বংস করার শাসকগোষ্ঠী কৌশলে অবাধে মাদক সেবনে ব্যবস্থা করে রেখেছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তিলে তিলে নির্মূল করাই হলো আসল উদ্দেশ্য। শাসকগোষ্ঠীর এই অপকৌশলের বিরুদ্ধে আপনাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। তরুন ছাত্র ও যুব সমাজকে সচেতন করে দেওয়ার মহান দায়িত্ব সকলকে নিতে হবে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ইংরেজ শাসকরা বলতো সন্ত্রাসবাদী। পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বশস্ত্র সংগ্রাম চলাকালীন সময়ে জুম্ম জাতির জন্য অধিকারকামীদের ও শাসকগোষ্ঠী সন্ত্রাসী, বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে অপবাদ দিয়েছিল। সন্ত্রাসী বলে মিডিয়াতে প্রচার করেছিল, এখনো সেই ষড়যন্ত্র অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে শাসকগোষ্ঠী। কিন্তু জুম্ম জনগন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি বীর সেনানীরা জন্মভূমি ও জাতীয় অস্তিত্বের জন্যে সংগ্রাম করেছে। আমরা সন্ত্রাসী নয়, আমরা অধিকারকামী। আমরা নির্যাতন নিপীড়ণের করুন বাস্তবতা থেকে মুক্তি পাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে সংগ্রাম করছি। দুনিয়াব্যাপী অধিকারহীন মানুষকে সামরিক শক্তি দিয়ে দাবিয়ে রাখার ব্যর্থ অপপ্রয়াস চালানো হয়েছিল, আজো হচ্ছে। জুম্ম জাতিকে ও শাসকগোষ্ঠী সামরিক শক্তি দিয়ে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল। বিগত দীর্ঘ দুই যুগের অধিক স্বশস্ত্র লড়াই সংগ্রামে জুম্ম জাতির ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের কাছে সামরিক শক্তির পরাজয় ঘটেছে। শাসকগোষ্ঠী স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছিল যে, সামরিক শক্তি দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। সামরিক শক্তি দিয়ে বলপ্রয়োগ করে কোন জাতিগোষ্ঠীকে সাময়িক কালের জন্য শাসন শোষণ করা যায়, কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী নয়। সামরিক শক্তি দিয়ে আফ্রিকার নিগ্রোদের নিশ্চিহৃ করা যায়নি। জুম্ম জাতিকে ও পৃথিবীর মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না। এক সময় জার্মান জাতি পৃথিবীর বুকে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য ফ্যাসিবাদী কায়দায় শাসন বিস্তার করেছিল। হিটলারের জার্মান জাতির শাসন শোষণ ইতিহাসের বুক থেকে চির বিদায় নিতে হয়েছে। জুলুম ও নির্যাতন করে বিশ্বের বুকে কোন শাসকগোষ্ঠী বেশি দিন টিকে থাকতে পারেনি। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগনকেও বেশি দিন আর শাসন শোষণ করে দাবিয়ে রাখা যাবে না। শোষণের কারাগার পার্বত্য চট্টগ্রামের গনমানুষ একদিন ভাঙবেই, ভাঙবে।

বাচ্চু চাকমা, সভাপতি পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ

Back to top button