পাহাড়ে মানবিক বিপর্যয়, আবারো ধসের আতঙ্ক
কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে রাঙামাটিসহ পার্বত্য এলাকায় প্রায় দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। অগণিত গৃহে পালিত পশু-পাখিও মারা গেছে। রাঙামাটি শহরের ভেদভেদী, মানিকছড়ি, যুব উন্নয়ন, শিমুলতলী, হাসপাতালে এলাকাসহ জেলার ৩০টি স্থানে পাহাড় ধসে হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। নিহতের পরিবার গুলোর মধ্যে এখনো শোক বিরাজ করছে।
পুরো দেশের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছে কয়েকগুন। সরবরাহ সংকটে দুই থেকে তিনগুণ বেড়েছে শাক সবজিসহ ভোগ্যপণ্যের দাম। বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে দুর্ভোগে পড়েছেন জেলা শহরের মানুষ। পেট্রোলপাম্পেও তেলের সংকট চলছে। আজ সকালে রাঙ্গামাটি শহরের কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ আসলেও বেশিরভাগ জায়গায়ই এখনো বিদ্যুৎ পৌছায়নি।
নানিয়াচর, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলাগুলো রাঙামাটি শহর নির্ভর হওয়ায় এ বিপর্যয়ের প্রভাব পড়েছে সেখানেও। রাঙামাটি শহরে জিনিসপত্র না থাকায় উপজেলায়ও সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
রাঙামাটি শহরে বৃহস্পতিবার সকালে ২৫ টাকার গোল আলু বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ৯০ টাকা, ৯০ টাকার অকটেন বিক্রি হয়েছে লিটার ২৫০ টাকা পর্যন্ত, ৫ টাকার মোমবাতি বিক্রি হয়েছে ১৫ টাকা। এতেও মিলছে এসব নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস।
এদিন শোক কাটিয়ে না উঠতেই আবার নতুন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই আবার হালকা বৃষ্টি পড়ছে। এদিকে আবহাওয়া অফিসের ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারির কারণে শহরে গতকাল বিকেল থেকেই মাইকিং করেছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান জানান, পাহাড় ধসে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে পুরো রাঙামাটিতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গতকাল দুপুর থেকে থেকে আজ সকাল (শুক্রবার) পর্যন্ত মাঝে মাঝে থেমে থেমে হালকা বৃষ্টি পড়ছে।
তিনি আরও জানান, পাহাড় ধসে হতাহতের পর আবারো বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। গতকাল বিকেলে ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় থাকা মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার জন্য জানানো হয়েছে।
এদিকে বৃষ্টির কারণে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের উদ্ধার কাজে বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানান রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক মো. দিদার হোসেন।
ভেদভেদী এলাকার বাসিন্দা রমেশ চাকমা জানান, পাহাড় ধসে নিহতের পর এখন বৃষ্টি হলেই সবার মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করে। কখন আবার কোথায় পাহাড় ধসে মানুষ মারা যায়। বৃষ্টি হলেই মানুষের মনে এধরনের আতঙ্কের শেষ নেই।
জেলা রেড ক্রিসেন্টের সাধারণ সম্পাদক এম জিসাম বখতিয়ার জানান, রেড ক্রিসেন্টের যুব সদস্যরা কাল রাতেই মাইকিং করেছে। এবং ঝুঁকিপূর্ন স্থানে থাকা মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসছে।
এদিকে, মঙ্গলবার সকাল থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রামসহ পার্শ্ববর্তী জেলা গুলোর সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে কাপ্তাই হয়ে চট্টগ্রামে যাতাযাতের জন্য কাপ্তাই-রাঙামাটি রুটে নৌপথে লঞ্চ চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন ও লঞ্চ মালিক সমিতি।