জাতীয়

পাহাড়ে বৈসুক, সাংগ্রাই, বিজু, বিহু, বিষু-র আগমনী বার্তা

সুলভ চাকমাঃ চৈত্র প্রায় শেষ হয়ে এলো। পাহাড়ে এখন জুম পোড়ানোর মৌসুম শুরু হয়েছে। বছরের এই সময়টাই কোকিলের কুহুকুহু ডাকে পাহাড়ে ফিরে আসে ঐতিহ্যবাহী বৈসুক, সাংগ্রাই, বিজু, বিহু, বিষু-র আগমনী বার্তা।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ঘরে ঘরে এখন বইছে বৈসুক,সাংগ্রাই,বিজু,বিহু,বিষু -র উৎসব উৎসব আমেজ। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পুরাতন বছরের সকল অপ্রাপ্তিকে ধুয়ে-মুছে নতুন দিনের শুভসূচনার আকাঙ্খায় পাহাড়ের ঘরে ঘরে এখন চলছে জোর প্রস্তুতি। গ্রামে গ্রামে, এলাকায় এলাকায় নানার আয়োজনের মধ্য দিয়ে উৎযাপন করা হয় পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব বৈসুক-সাংগ্রাই-বিজু-বিহু-বিষু।
ত্রিপুরারা এই উৎসবকে বলেন বৈসুক, মারমারা বলেন সাংগ্রাই, চাকমারা বিজু, অহমিয়ারা বিহু এবং তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু। পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবকে কেন্দ্র করে পাহাড় যেন নতুনরুপে সেজে ওঠে। তাই এই উৎসব কেবল আর উৎসব থাকে না, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সকলক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারকারী এই সামাজিক উৎসব একইসাথে সাক্ষ্য দিয়ে যায় পাহাড়ের যুগান্তরের স্বকীয় সমাজ-সাংস্কৃতিক চেতনার উপস্থিতি। রাস্তায় রাস্তায়, দেওয়ালে দেওয়ালে স্থানীয় শিশু-কিশোর-যুবকেরা লিখতে থাকে “বিজু মানে উৎসব, বিজু মানে আনন্দ, বিজু মানে চেতনা”। কিশোরী-যুবতী কিংবা রমণীরা নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী অলঙকার, পোশাকের উজ্জ্বল স্বাতন্ত্রে নিজেদের সাজাতে ভালোবাসেন।
বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠন প্রকাশ করে লিটল ম্যাগাজিন। চাকমাদের ঘরে ঘরে বাজতে থাকে ঐতিহ্যবাহী গেংখুলী গান, উবোগীদ। মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা প্রভৃতি জাতিসমূহের নিজস্ব সাংস্কৃতিক চৈতন্যবোধে এই উৎসব যেন ডাক দিয়ে যায় নতুন দিনের। মাঠে মাঠে শিশু-কিশোরেরা মেতে উঠে ঘিলে খেলা, নাদেং খেলা, বাঁশখরম দৌঁড়, বলিখেলা প্রভৃতি ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলায়। সাংগ্রাইকে কেন্দ্র করে মারমাদের “জল উৎসব” এখন দেশ-বিদেশে অত্যন্ত পরিচিত।
পাহাড়ের সবচেয়ে বড় এই সামাজিক উৎসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ক্লাব, পাড়া, গ্রাম, সংগঠন ইতিমধ্যেই নানান উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। রাঙ্গামাটিতে “বিজু,সাংগ্রাইং,বৈসুক,বিষু,বিহু,সাংক্রান -২০১৭ উদযাপন কমিটি” ৪দিনব্যাপী অনুষ্ঠানসূচি প্রকাশ করেছে। “আদিবাসী ঐতিহ্য সংস্কৃতি বিকাশে ঐক্যবদ্ধ হোন,আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসুন” – এই আহবানে আগামী ৯ই এপ্রিল,২০১৭ ইং সকাল ৯.০০ টায় রাঙ্গামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গনে উৎসব উদযাপন কমিটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও র্য্যালীতে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চাকমা সার্কে চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় এবং প্রধান অতিথি থাকবেন রাঙ্গামাটির মাননীয় সাংসদ শ্রী উষাতন তালুকদার, এমপি। এছাড়াও উৎসব উদযাপন কমিটির অনুষ্ঠানসূচিতে থাকছে- ৯ই এপ্রিল,২০১৭ – শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ১০ই এপ্রিল,২০১৭ – ঐতিহ্যবাহী জুম্ম খেলাধুলা ১১ই এপ্রিল,২০১৭ – ঐতিহ্যবাহী বলিখেলা।
এদিকে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে রাঙ্গামাটি জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে রাঙ্গামাটির স্বনামধন্য সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠন “জুম ঈসথেটিক কাউন্সিল- জাক” আগামী ৪ ও ৫ এপ্রিল দুইদিনব্যাপী আয়োজনে রেখেছে সাহিত্য-সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান, আদিবাসী কবিতা পাঠের আসর এবং চাকমা নাটক মঞ্চায়ন অনুষ্ঠান। পার্বত্য চট্টগ্রামের চিত্রশিল্পীদের সংগঠন “হিল আর্টিস্ট গ্রুপ” উদ্যোগ নিয়েছে আর্ট-ক্যাম্পেইন এবং চিত্র প্রদর্শনী আয়োজনের। রাঙ্গামাটি জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে “জীবন ও রঙের বৈচিত্রে স্বপ্নের পাহাড়” শিরোনামের চিত্র প্রদর্শনী চলবে ৭-৯ এপ্রিল,২০১৭ পর্যন্ত। রাঙ্গামাটির স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মোনঘর। পার্বত্য চট্টগ্রামের বঞ্চিত-অবহেলিত শিক্ষার্থীদের ঠিকানা ও আশ্রয়স্থল এই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে এবছরও “মোনঘর সাপোর্ট গ্রুপ” উদ্যোগ নিয়েছে রাফেল ড্র অনুষ্ঠানের। আগামী ৯ই এপ্রিল, ২০১৭ ইং রাঙ্গামাটির রাঙ্গাপানি গ্রামের কান্ত চাকমা স্মৃতি খেলার মাঠ প্রাঙ্গনে “রাঙ্গাপানি বিজু উৎযাপন কমিটি’-র সহযোগিতায় এই রাফেল ড্র অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রথম পুরষ্কার হিসেবে থাকছে একটি ১০০ সিসি মোটরসাইকেল।
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ বাংলা ট্রিবিউন

Back to top button