জাতীয়

পাহাড়ে তেল গ্যাস উত্তোলন হলে হুমকিতে পড়বে প্রাকৃতিক পরিবেশঃ জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা

রাঙামাটি প্রতিনিধি
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার কাচালং ও কাপ্তাই উপজেলার সীতা পাহাড় এলাকায় তেল,গ্যাস উত্তোলন করা হলে এই এলাকায় প্রাকৃতিক বিপর্যয় বাড়বে। হুমকিতে পড়বে জীব বৈচিত্র্য। পাশাপাশি হাজার হাজার পরিবার উদ্ভাস্তু হবে। পাহাড়ে চলমান ভূমি বিরোধকে আরো জটিল করে তুলবে। সম্প্রতি সংসদে পাস হওয়া পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০১৬ সংশোধনী কার্যকর আরো কঠিন হবে। বলেছেন রাঙামাটি জেলার বিশিষ্টজনেরা।
১০ অক্টোবর সোমবার সকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সভাকক্ষে বাপেক্স কর্তৃক রাঙামাটি পার্বত্য জেলার উপজেলার কাচালং ও কাপ্তাই উপজেলার সীতা পাহাড় এলাকায় তেল গ্যাস উত্তোলন বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের মত বিনিময় সভায় এসব কথা বলেন জেলার বিশিষ্টজনেরা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমা। এ সময় তিনি বলেন, সীতা পাহাড় ও কাচালং এলাকায় তেল, গ্যাস উত্তোলনের জন্য বাংলাদেশ সরকার আমেরিকা ও চীনের সাথে যে চুক্তি করেছে তার আগে পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের কাছ থেকে কোন মতামত নেওয়া হয়নি। এমন অবস্থায় এসে আঞ্চলিক, জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসকের মতামত চাওয়া হচ্ছে। চুক্তি করার আগে সরকারের উচিত ছিল পাহাড়ে এসে মতবিনিময় করা। এখন আঞ্চলিক পরিষদ মত দেবে এটি সরকার তো গ্রহণ নাও করতে পারে।
সন্তু লারমা বলেন, সীতা পাহাড় ও কাচালং এ বিশাল এলাকায় তেল গ্যাস উত্তোলন করা হলে উদ্ভাস্তু হবে হাজারো পরিবার। এতে করে ভূমি বিরোধ বাড়বে। এর কারণে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০১৬ সংশোধনী কার্যকর আরো কঠিন হবে।
রাঙামাটি সংসদীয় আসনের এমপি উষাতন তালুকদার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে প্রাধান্য দিতে হবে। চুক্তিকে উপক্ষো করে কোন কিছু করা হলে এটি ভাল হবে না। কোন প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে পাহাড়ে স্থায়ী বাসিন্দাদের ক্ষতি হবে এটি হতে পারে না।
কাপ্তাই উপজেলা চেয়ারম্যার দিলদার হোসেন বলেন, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, চন্দ্রঘোনার পেপার মিলের মত বড় প্রকল্পের কারণে পাহাড়ের মানুষ সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। উদ্ভাস্তু হয়েছিল হাজার হাজার পরিবার। এসব প্রকল্প থেকে পাহাড়ের স্থায়ী মানুষের প্রাপ্যতা শূণ্য। কাপ্তাই উপজেলা থেকে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে অথচ আমার এলাকার মানুষ অন্ধকারে থাকে। বিদ্যুৎ থেকে যে আয় এ থেকে ১ পয়সাও পায় না উপজেলা পরিষদ। তাই স্থানীয় জনগণের ক্ষতি করে এমন প্রকল্প পাহাড়ে দরকার নেই। কাপ্তাই সীতা পাহাড়ে তেল গ্যাস উত্তোলনে যে ভুমির কথা বলা হয়েছে সেটি হলে আমার কাপ্তাই উপজেলা মানুষের পুনর্বাসনের জায়গা পাওয়া যাবে না।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, কাচালং ও সীতা পাহাড় এলাকায় তেল গ্যাস উত্তোলনে এই এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ মানুষরা কিভাবে উপকৃত হবে? তাদের স্বার্থ কি হবে? ক্ষতিগ্রস্থদের সঠিকভাবে পুর্নবাসন করা হবে কিনা? কোথায় পুনর্বাসন করা হবে? ভূমি বিরোধ কি পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে? এখানকার জীব বৈচিত্র্য ও বনভূমি কি পরিমাণ ক্ষতি হবে এই নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে? এসব নিশ্চয়তা লিখিতভাবে সরকারকে দিতে হবে। সরকারের মৌখিক কোন আশ্বাস গ্রহণ করা হবে না। তিনি বলেন, এই তেল গ্যাস যদি পাহাড়ের মানুষের উপকারে না আসে তাহলে এটির জন্য পাহাড়ের মানুষ বিরোধীতা করবে স্বাভাবিক। পাহাড়ের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে পিছিয়ে পড়া পাহাড়ের স্থায়ী মানুষের স্বার্থের কথা বিবেচনায় রাখতে হবে।

রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অরুন কান্তি চাকমা বলেন, মগবান ইউনিয়ের মানুষ কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কিন্তু এই ইউনিয়নে ৫৫ বছরেও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। আলোর নিচে অন্ধকার অবস্থায় ৫৫ বছর কেটে গেল। কবে যে তারা বিদ্যুৎ পাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই।
মত বিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন চাকমা সার্কেল প্রতিনিধি কুমার নন্দীত রায়, খাগড়াছড়ি হেডম্যান এসোসিয়েশনের সভাপতি শক্তিপদ ত্রিপুরা, আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য হাজী কামাল, রক্তোৎপল ত্রিপুরা, সাবেক যুগ্ম জজ এ্যাড. দীপেন দেওয়ান, সাকেব উপ সচিব প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, বরকল উপজেলা চেয়ারম্যান মনি চাকমা প্রমুখ।

Back to top button