জাতীয়

পাহাড়ধস থামাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন

যুগের পর যুগ পাহাড় কেটে সেখানে সমতল ভূমির অধিবাসীদের বসতি করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বনভূমি ধ্বংস করে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে নানা অবকাঠামো। আর রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা এই সুযোগ নিয়ে পাহাড় ধ্বংস করেছে। ফলে একের পর এক ভূমিধসের ঘটনা ঘটছে।
গত শুক্রবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ভূমিধস : কারণ, ফলাফল এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশে চীনা দূতাবাস ও বাংলাদেশ চীনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিসিআই) যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
বৈঠকে বক্তারা দেশের পার্বত্য এলাকাগুলোতে পাহাড় ও বনভূমি ধ্বংস বন্ধে কঠোর উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে পুরো এলাকাটি সংরক্ষিত বনভূমি ঘোষণা করার পরামর্শ দেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। পাহাড়ধস থামাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা উন্নয়ন করতে গিয়ে প্রকৃতিকে কতটুকু ধ্বংস করব আর প্রকৃতিকে কতটুকু রক্ষা করব, সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ তিনি বলেন, সমতলের মানুষদের পাহাড়ে নিয়ে বসতি করানো হয়েছে। এতে একদিকে আদিবাসীদের জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে, অন্যদিকে পাহাড়ের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেছে।
সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে গবেষক ও কলামলেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, পাহাড়ধসের মতো দুর্যোগকে শুধু প্রকৃতির কাণ্ড হিসেবে দেখলে হবে না। এর পেছনে দুর্বৃত্ত ও নষ্ট রাজনীতি জড়িত। ধস প্রতিরোধে সরকারের একটি বিশেষ সেল গঠনের পরামর্শ দেন তিনি। দেশের সব পাহাড়কে সংরক্ষিত বনভূমি ঘোষণা করে সংরক্ষণের পরামর্শ দেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, ‘এত বড় একটি পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটার পরও সরকারের তরফ থেকে এখনো তা প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে মনে হচ্ছে, সামনের বছর বা এর পরের বছরও আমাদের আরও বড় বড় পাহাড়ধসের মতো ঘটনা দেখতে হবে।’
মূল বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম বলেন, সংরক্ষিত রেকর্ড অনুযায়ী, ১৯৬৮ সালে কাপ্তাই এলাকায় প্রথম ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। এরপর এ পর্যন্ত পাহাড় ধসে ৪৪৮ জন মারা গেছেন। তিনি বলেন, এই দুর্যোগে এত মানুষ মারা গেলেও দেশের দুর্যোগ আইনে পাহাড়ধস নামে কোনো শব্দ নেই। দুর্যোগবিষয়ক সরকারি যে স্থায়ী আদেশ আছে, তাতে ৩৭৬ বার ঘূর্ণিঝড় ও ২২৯ বার বন্যা শব্দটি আছে, অথচ পাহাড়ধস আছে মাত্র তিনবার। এ থেকেই সরকারি নীতিনির্ধারণে এর গুরুত্ব বোঝা যায়।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবা নাসরিন, কিউ এম মাহবুব ও বাপার মিহির বিশ্বাস।

Back to top button