অন্যান্য

পাহাড় কেটে সাজেকে সুইমিংপুল নির্মাণঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝর

আইপিনিউজ, রাঙ্গামাটিঃ রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার রুইলুই, হামারি এবং কংলাক এই তিনটি পাহাড়েই গড়ে উঠেছে সাজেক পর্যটনকেন্দ্র। প্রকৃতির সবুজে ঘেরা ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড় ও মেঘের অপূর্ব মিলনের জন্যই সাজেককে বলা হয়ে থাকে মেঘের রাজ্য। এদিকে দিনে দিনে সাজেকে বেড়েছে পর্যটক এবং দৈনিক হাজারেও অধিক পর্যটকের আনাগোনা হয় এলাকায়। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে রিসোর্ট, কটেজ, হোটেলসহ রেস্তোরাঁ। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা অপরিকল্পিত এসব স্থাপনায় ঢাকা পড়ছে প্রকৃতির সেই চেনা রূপ। দৃষ্টিপাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ডজন ডজন কটেজ।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জানুয়ারি থেকে সাজেকের পাহাড় কেটে সুইমিংপুল নির্মাণের কাজ করছে মেঘপল্লী রিসোর্ট। এতে যেমন সাজেকের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। তেমনি রয়েছে পাহাড় ধসের ঝুঁকি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে এই সুইমিংপুল নির্মাণ করা হচ্ছে। সুইমিং পুলটির দৈর্ঘ্য ৩৪ ফুট, প্রস্থে ১৮ মিটার ও গভীরতা সাড়ে ৩ মিটার। যেখানে পানির ধারণ ক্ষমতা ৯০ হাজার লিটার।

রুইলুই পাড়ার এক কটেজ মালিক নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, সাজেকে এখন অনেক রিসোর্ট রয়েছে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে একের পর এক কটেজ নির্মাণ করা হয়েছে। এতে সাজেকের সৌন্দর্য ঢাকা পরে যাচ্ছে। এদিকে সাজেকের উঁচু পাহাড়ের অংশ কেটে সুইমিং পুল নির্মাণে রয়েছে বড় ধরনের পাহাড় ধসের ঝুঁকি।

সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ১ হাজার ৮০০ ফুট উপরে পাহাড় কেটে সুইমিংপুল নির্মাণ নিয়ে স্থানীয়রা বলেন, প্রকাশ্যে অনিয়ন্ত্রিতভাবে কাটা হচ্ছে পাহাড়। এতে সাজেকের প্রাকৃতিক ভারসাম্য যেমন নষ্ট হচ্ছে। পাহাড় ধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে আশঙ্কা করছি আমরা।

এদিকে মেঘপল্লী রিসোর্টের মালিক মাজহারুল জিয়ন মুঠোআলাপে বলেন, ‘এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না।’ পরে তিনি কল কেটে দেন। পরবর্তীতে তাঁকে আবারও কল করা হলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ঝিরির পানি শুকিয়ে গেছে। ফলে পানি সংগ্রহ করতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে বান্দরবানের নানা এলাকার আদিবাসী নারীদের।

এদিকে গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাসছে পাহাড় কেটে এই সুইমিং পুল তৈরীর খবর। একই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের আরেক জেলা বান্দরবানের বিভিন্ন প্রান্তের পানির অভাবের খবরও ভাসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অনবরত পাহাড় কাটা, বন-জঙ্গল উজার, ঝিরি থেকে পাথর উত্তোলনসহ নানা কারণে শুকিয়ে যাচ্ছে ভূপৃষ্ঠের পানি। ফলে স্থানীয় আদিবাসীরা প্রতিনিয়ত প্রয়োজনীয় পানির জন্য সংগ্রাম করছেন। এসব খবরেই চটেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারকারী অনেকেই।

এ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সংস্কৃতি কর্মী ডচেংনু চৌধুরী লিখেছেন, “পাহাড় পাহাড়ের মতই সুন্দর, অকৃত্রিম। সেখানে যখন সাজেকে পাহাড় কেটে বানানো হয় সুইমিংপুল, সেটি দেখে শুধু বলতে পারি, একদিন সবকিছুই নষ্টদের অধিকারে যাবে।”

মাজহারুল আলম তিতুমির নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, “পাহাড় কেটে সুইমিংপুল নির্মাণ জঘন্য কাজ। নিন্দা জানাই। পাহাড়ে কেন সুইমিংপুল করতে হবে? সেখানে যারা ঝিরি ঝরনার শীতল জলে গা ডুবিয়ে প্রশান্তি পায় তারাইতো যাবে। সুইমিংপুল না হলে যাদের চলে না, তাদের জন্য নগরীর তারকা বিশিষ্ট হোটেল আছে, সেখানে যাক।”

পানির অভাবে ভুগছে বান্দরবানের অনেক আদিবাসী পাড়া।

এদিকে কিরন জ্যোতি চাকমা নামের এক ব্যক্তি লিখেছেন, “মসজিদ, রিসোর্ট, সুইমিংপুল সব হবে। কিন্তু ওখানকার প্রান্তিক মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হবে না।”

অন্যদিকে সর্বজন কথা’র নির্বাহী পরিচালক কল্লোল মুস্তফা লিখেছেন, “এক প্রবল বর্ষণে পাহাড়ের খাজে খাজে গড়ে উঠা এইসব কুৎসিত স্থাপনা ধসে গেলে খারাপ হয় না। একদিকে পাহাড়ে ক্ষমতাসীন শাসক গোষ্ঠি ও বিভিন্ন বাহিনীর আধিপত্য অন্যদিকে জনগণের একটা বৃহৎ অংশের মধ্যে এই আধিপত্য বিষয়ে নির্লিপ্ততা, সমর্থন ও অংশগ্রহনের পরিস্থিতির মধ্যে এই ধরনের আকাঙ্খা করা ছাড়া আর কোন উপায় তো দেখা যাচ্ছে না।”

বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী ও সংস্কৃতি কর্মী অরুপ রাহী পাহাড় কেটে সুইমিং পুল তৈরীর বিষয়টি শেয়ার দিয়ে  লিখেছেন, “প্রতিরোধ করা দরকার।”

Back to top button