জাতীয়

পার্বত্য চুক্তির ২৫তম বর্ষপূর্তিতে যা বললেন সন্তু লারমা

আমরা পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের ২৫ বছর পার হয়ে এসেছি। এই সময়টা আমার জীবনের বৃথায় পার করে এলাম। যে সময়টাতে এই দেশের মানুষের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি কল্পে আরো কিছু অবদান রাখতে পারতাম, তা হল না। আমি গুনে গুনে এসব উপলব্ধি করতাম। কিন্তু ফলাফল হীন ছিল এই ২৫ টি বছর। এটা ছিল অবর্ণনীয় ও অনুভ‚তির বেপার। পার্বত্য চুক্তি তো বাস্তবায়ন তো হলই না, বরং এই চুক্তি যেন মানুষ ভুলে যায় তার ব্যবস্থায় করেছে সরকার বলে মন্তব্য করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও পার্বত্য চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয়(সন্তু) লারমা। গতকাল  পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫তম বর্ষপূতি উপলক্ষ্যে ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম। উক্ত সংগঠন দু’টির সভাপতি ও পার্বত্য চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয়(সন্তু) লারমা’র সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অংশ নেন বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি ও সাংসদ রাশেদ খান মেনন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের সদস্য খুশী কবির, কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আসাদুল্লাহ তারেক, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং প্রমুখ। জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয়(সন্তু) লারমা আরো বলেন, সরকার আমাদেরকে কথা বলতে দেয় নাই। আমাদেরকে সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। আমরা পাহাড়ের সমস্যা নিয়ে এবং সমতলের আদিবাসীদের নানা সমস্যা নিয়ে দেশে বিদেশে নানা জায়গায় কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সরকার সেটাতে বাধা প্রদান করে এসছে। বাংলাদেশের উপনিবেশ হলো পার্বত্য চট্টগ্রাম। পাকিস্তান যেভাবে বাংলাদেশকে শাসন শোষ করে এসেছে তার চেয়েও অধিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামকে শাসন শোষণ করে এসছে। পাহাড়ে যেসব সশস্ত্র গ্রুপ আছে তাদের কারা সৃষ্টি করেছে তাদের নিয়ে কেউ জানতে চায় না দাবি করে তিনি আরো বলেন, জনসংহতি সমিতিকে চিরতরে দমন করার জন্যই এসব গ্রুপগুলোকে সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই গ্রুপগুলোর মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে, অন্যের প্রাণ হরণ করা হচ্ছে। তার খবর এদেশের শিক্ষিত মানুষ জানে না। স্বাধীনতার পর থেকেই পাহাড় সামরিক কায়দায় শাসিত হচ্ছে দাবী করে সন্তু লারমা আরো বলেন, পাহাড়ের শাসন কর্তা হল সামরিক কর্তৃত্ব। দীর্ঘ ৫২ টি বছর ধরে সামরিক শাসনের মধ্য দিয়ে চলছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। হত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন, সম্পদ হানি থেকে শুরু করে লুঠতরাজ চলছে। পাহাড়ী মানুষ নিরাপত্তাহীন। আমি সন্তু লারমা যেখানে যায় সেখানে গোয়েন্দা বাহিনী থাকে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্ত মানুষের পেছনে এই বাস্তবতা বলেও মনে করেন তিনি। যতদিন গণমুখি সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে না ততদিন পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত হবে না। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে পাহাড়ে আন্দোলন জিইয়ে থাকবে দাবি করে তিনি আরো বলেন, এই চুক্তির পেছনে অনেক মানুষের রক্ত আছে। অনেক জুম্ম মা-বোনের নিপীড়ন ও স¤্রম আছে। কাজেই এই চুক্তি পাহাড়ের মানুষ ভুলতে পারে না। এই চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাহাড়ে বৃহত্তর আন্দোলনের কতা ভাবা হচ্ছে। এই আন্দোলন কোন দিকে মোড় নিবে তা আমি জানি না। এই বৃহত্তর আন্দোলন দেশের সকল শিক্ষিত সমাজ ও গণমানুষকে সামিল হওয়ারও আহŸান জানান তিনি। সামরিক শাসন প্রত্যাহার করে সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন করবে সেই কথা ব্যক্ত করেন এই নেতা।
বক্তব্য রাখছেন জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয়(সন্তু) লারমা

Back to top button