জাতীয়

পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ সেনানিবাস – সন্তু লারমা

বিশেষ সংবাদদাতা: দীর্ঘ দুই দশকের অধিক সময় ধরে চলা পাহাড়ের সশস্ত্র সংঘাত অবসানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত হওয়া ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের ২১ বর্ষপূর্তি পালিত হবে আগামীকাল। এ উপলক্ষ্যে ঢাকায় বাংলামটরস্থ সুন্দরবন হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পাহাড়ের জুম্ম জনগণের পক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করা জনসংহতি সমিতি। জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার বিভাগের সদস্য দীপায়ন খীসার পরিচালনায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও সাবেক গেরিলা নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা। লিখিত বক্তব্যে পাহাড়ের এ গেরিলা নেতা বলেন, ”শাসকগোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে চরম দুর্নীতি, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি,দলীয়করণ,পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের অসদিচ্ছা ও অনীহা, শাসকগোষ্ঠীর সৃষ্ট পার্বত্য চুক্তি ও জুম্ম স্বার্থপরিপন্থি সশস্ত্র সংগঠনসমূহের অত্যাচার ও অনাচার, বেআইনী অনুপ্রবেশ ও ভূমি বেদখল, গ্রেপ্তার,তল্লাশি অভিযান, মিথ্যা মামলা,দমনপীড়ন ও সেনা সন্ত্রাসের ফলে আজ জুম্ম জনগণ গভীরভাবে শঙ্কিত ও শাসকগোষ্ঠীর উপর ক্ষুব্ধ।”

আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দুই মেয়াদে এক দশক ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অবাস্তবায়িত মৌলিক বিষয়সমূহ বাস্তবায়নে কোনো কার্যকর ও দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহন করেনি বলে অভিযোগ করে চুক্তি স্বাক্ষরকারী পাহাড়ের এ নেতা আরো বলেন,”প্রকৃতপক্ষে চুক্তির ৭২ টি ধারার মধ্যে ২৫ টি ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে এবং মৌলিক বিষয়সমূহসহ দুই-তৃতীয়াংশ ধারা এখনো অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে।”

সরকারের মন্ত্রী, এমপিরা পার্বত্য চুক্তির ৭২ টি ধারার মধ্যে ৪৮ টি সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন, চুক্তির ৮০ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে, সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিক, এ সরকারের আমলেই চুক্তির অবশিষ্টাংশ সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করা হবে কিংবা পৃথিবীর কোনো চুক্তিই শতভাগ বাস্তবায়িত হয়নি, পার্বত্য চুক্তির মতো বিশ্বের কোনো চুক্তিই এত দ্রুত বাস্তবায়িত হয়নি- বলে এ ধরনের শঠতাপূর্ণ নানা বক্তব্য প্রদানের মধ্য দিয়ে দেশে-বিদেশে অপপ্রচারে ব্যস্ত রয়েছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন পৃথিবীর সবচেযে বৃহৎ সেনানিবাস বলেও দাবী করেন এই গেরিলা নেতা।
পাহাড়ের চলমান বাস্তবতায় পাহাড়ে আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ,সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব নয় বলেও অভিমত দেন সন্তু লারমা।

ঐক্য ন্যাপের সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য তাঁর বক্তব্যে বলেন, ”পাহাড়ের সমস্যা একটি জাতীয় সংকট। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মাধ্যমে এ সংকট উত্তোরণ করে আমরা নোবেল শান্তি পুরস্কারও পেতে পারতাম। কিন্তু আজ চুক্তির বর্ষপূর্তিতে যে ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয় সেখানে শেখ হাসিনার বক্তব্য একরকম আর চুক্তি স্বাক্ষরকারী অপরপক্ষের সন্তু লারমার বক্তব্য অন্যরকম। এটা আমাদের জাতীর জন্য দুর্ভাগ্যজনক।”

পাহাড়ে এখন চুক্তি বিরোধী শক্তির দাপট চলছে এবং তাদের দ্বারাই পাহাড় শাসিত হচ্ছে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মেসবাহ কামাল তাঁর বক্তব্যে বলেন, ”পার্বত্য চুক্তি হয়েছে পাহাড়ের জনগণের সাথে রাষ্ট্রের,কোনো দলের নয়। যে সরকার ক্ষমতায় আসবে সে সরকারকে এ চুক্তির শতভাগ বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিতে হবে।”

প্রতিবছর পার্বত্য চুক্তির বর্ষপূর্তিতে প্রকাশিত ক্রোড়পত্রে মিথ্যাচার হচ্ছে দাবী করে বিশিষ্ট এ আদিবাসী গবেষক বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্রমাগত আদিবাসীদেরকে সংখ্যালঘুতে পরিণত করা হচ্ছে। আধুনিক রাষ্ট্র পাহাড়ের যে বৈচিত্র্য রয়েছে সেটাকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে দাবী করেন তিনি।পাহাড়ে সেনা শাসনের অবসানও দাবী করেন দেশের বিশিষ্ট এ নাগরিক।

এছাড়া উক্ত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আইইডির নির্বাহী পরিচালক নুমান আহম্মদ খান, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং সহ জনসংহতি সমিতির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ এবং প্রগতিশীল বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
উপস্থিত সাাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদানের মধ্য দিয়ে এ সংবাদ সম্মেলন সমাপ্ত হয়।

Back to top button