জাতীয়

পাহাড়ের পরিস্থিতি ক্রমাগত জটিলতর হয়ে উঠছেঃ চার ছাত্র সংগঠন

আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা):  পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি ক্রমাগত জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে বলে দাবি করেছে দেশের চারটি ছাত্র সংগঠন। এক বিবৃতিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবিও জানিয়েছে এই ছাত্র সংগঠন সমূহ। এই চারটি সংগঠন হল পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন,  বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী,  বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।
এক যৌথ বিৃবতিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুমন মারমা,  বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি অতুলন দাশ আলো এবং বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে সম্পাদিত ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ২৫ বছরেও যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় পাহাড়ে কাঙ্খিত শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বরং পরিস্থিতি বছরের পর বছর জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরকারী আওয়ামীলীগ সরকার একনাগাড়ে ১৪ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকেও পার্বত্য চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেনি এবং চুক্তি বাস্তবায়নে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি দাবি করে সংগঠন সমূহ বিবৃতিতে উল্লেখ করে যে,  সরকারের পক্ষ থেকে ৭২ টি বিষয়ের মধ্যে ৪৮ টি বাস্তবায়িত হয়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে যা অসত্য এবং অপপ্রচার মাত্র। বাস্তবিকপক্ষে চুক্তির ২৫ টি বিষয় বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র। মৌলিক বিষয়সহ এখনো চুক্তির দুই তৃতীয়াংশ বিষয় অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে। চুক্তির মৌলিক বিষয়— পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণে আইনী ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা; পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে সাধারণ প্রশাসন, আইন—শৃঙ্খলা, পুলিশ, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন ও পরিবেশ, পর্যটন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদিসহ রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা ও কার্যাবলী হস্তান্তর করা;  নির্বাচনী বিধিমালা ও স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়ন পূর্বক আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা;  ‘অপারেশন উত্তরণ’ ও সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার করা;  বিধিমালা প্রণয়ণ করে ভূমি কমিশনের মাধ্যমে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করে বেদখল হওয়া জায়গা—জমি জুম্মদের নিকট ফেরত দেয়া;  ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণ জুম্ম উদ্বাস্তুদেও তাঁদের স্ব স্ব জায়গা—জমি প্রত্যার্পণ পূর্বক যথাযথ পুনর্বাসন প্রদান করা;  অস্থানীয়দের নিকট প্রদত্ত ভূমি ইজারা বাতিল করা;  পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল চাকরিতে জুম্মদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়োগ করা;  চুক্তির সাথে সঙ্গতি বিধানকল্পে ১৮৬১ সালের পুলিশ এ্যাক্ট, পুলিশ রেগুলেশন, ১৯২৭ সালের বন আইন ও ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধিসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রযোজ্য অন্যান্য আইন সংশোধন; পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সেটেলার বাঙালিদের সম্মানজনক পুনর্বাসন প্রদান করা ইত্যাদি এখনো অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে। যার ফলে জুম্ম জনগণের ঘরবাড়ি তল্লাসী, গ্রেফতার, ক্রশফায়ারের নামে বিচার—বহিভুর্ত হত্যা, ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের, নারীর প্রতি সহিংসতা, অনুপ্রবেশ, ভূমি বেদখল, চুক্তি বিরোধী অপপ্রচার ইত্যাদি মানবতা ও জুম্ম স্বার্থ বিরোধী কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।

পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরার স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, আমরা ক্রমাগত লক্ষ্য করছি যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে কেবল বন্ধই রাখা হয়নি। একই সাথে চুক্তি স্বাক্ষরকারী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ক্রমাগত মিথ্যা মামলা, ধরপাকড়, হামলা ও গ্রেফতারের মাধ্যমে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে কোণঠাসা ও নস্যাৎ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার ও শাসকগোষ্ঠী। অন্যদিকে এযাবৎ পর্যন্ত শাসকগোষ্ঠীর আশ্রয়ে প্রশয়ে পার্বত্য চুক্তির বিরোধীতা করে গড়ে ওঠা ইউপিডিএফ, জনসংহতি সমিতি(সংস্কারপন্থি), ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক), মগপার্টি, কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট( বম পার্টি), বহিরাগত সেটেলার বাঙালিদের সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ ও অন্যান্য সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী জঙ্গি—গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সেরকম কোনো তৎপরতা তো দেখায় যায় নি, বরং তাদেরকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হচ্ছে।

নেতৃবৃন্দ কাল বিলম্ব না করে সরকারকে চুক্তি বিরোধী ও জুম্মস্বার্থ পরিপন্থী সকল যড়যন্ত্র ও কার্যক্রম বন্ধ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়নের দাবি জানান।

 

Back to top button