জাতীয়

পার্বত্য অঞ্চলে ১৩ কারণে পাহাড়ধস

পার্বত্য অঞ্চলে ১৩টি কারণে সাম্প্রতিক পাহাড়ধস ঘটেছে বলে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই কারণগুলোর মধ্যে আটটি মানবসৃষ্ট এবং পাঁচটি প্রাকৃতিক। তদন্ত কমিটি পাহাড়ধস ঠেকাতে ১১টি সুপারিশ করেছে।

প্রতিবেদনটি গতকাল বৃহস্পতিবার পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়।

গত জুনের মাঝামাঝি চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও বান্দরবানে পাহাড়ধসে অন্তত ১২৬ জনের মৃত্যু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১২ জুলাই পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানবসৃষ্ট কারণগুলোর মধ্যে আছে নির্বিচারে বন ও গাছপালা ধ্বংস করা। আরেকটি কারণ হলো পরিকল্পনার অভাব। অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন, রাস্তা ও সড়ক নির্মাণ এবং অন্যান্য উন্নয়নমূলক স্থাপনা নির্মাণে বিল্ডিং কোড না মানা। উন্নয়নমূলক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। পাহাড়ে উন্নয়নের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অভাব। মাটি পরীক্ষার ফলাফল যথাযথভাবে অনুসরণ না করে পুরোনো অ্যালাইনমেন্টের ওপর কাজ করা।

অপরিকল্পিত জুমচাষ। জুমচাষে আগাছানাশক ওষুধ ব্যবহার করার ফলে পাহাড়ের মাটি দুর্বল হয়ে যায়। এ ছাড়া পাহাড়ের পরিবেশ-প্রতিবেশ অনুযায়ী ফসলাদি চাষ না করে আদা, হলুদের চাষ করায় প্রচুর মাটি ক্ষয় হয়।

মানবসৃষ্ট অন্যান্য কারণের মধ্যে আছে পাহাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ না লাগিয়ে বেশি লাভের আশায় অধিক হারে সেগুনগাছ লাগানো।

পানিনিষ্কাশনের সুযোগ না রেখে উন্নয়নমূলক কাজ করা। পাহাড় থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন।

মন্ত্রণালয়ের তদন্তে বলা হয়েছে, পাহাড়ধসের পেছনে তারা পাঁচটি প্রাকৃতিক কারণ পেয়েছে। সেগুলো হলো অতিবৃষ্টি, রাঙামাটিতে গত ১০ থেকে ১৫ জুন সময়ে ৯৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়; যা গত ১০ বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ডের প্রায় নয় গুণ বেশি।

আরেকটি প্রাকৃতিক কারণ হলো মাটির প্রকৃতি। ওই অঞ্চলের বেলে-দোআঁশ মাটি বৃষ্টির পানিতে সহজে নরম হয়ে যায়। এ ছাড়া দীর্ঘ খরার পর একটানা বৃষ্টি, ভূমিকম্পে পাহাড়ে ফাটল সৃষ্টি হওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পাহাড়ধসের পেছনে কাজ করেছে।

পাহাড়ধস ঠেকাতে ১১টি সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে। এর মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক বনভূমি সংরক্ষণ, নির্বিচারে গাছ ও বন কাটা বন্ধ, জুমচাষে আগাছানাশক ওষুধ ব্যবহার বন্ধ, ভূমিকম্প প্রতিরোধে তাল ও সুপারিগাছ লাগানো, পরিবেশ আইন মেনে পাহাড়ের উপযোগী অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা ইত্যাদি।

Back to top button