মতামত ও বিশ্লেষণ

নিরীহ জুম্মদের নির্বিচারে ধরপাকড় পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলবেঃ পলাশ চাকমা

এক পরিচিত মাসি’র বাড়ি রাঙ্গামাটি সদরের ভেদভেদী পৌর এলাকায়। কিছুদিন আগে রাত দেড়টার দিকে উনার পাঠানো মেসেজ পড়ছিলাম। বেশ আতঙ্কিতভাবে বলছিলেন- উনাদের ঐ দিকে আর্মিরা ঘুরতেছে, তারা খুব আতঙ্ক বোধ করছেন। গতকাল রাতে ঢাকায় পড়–য়া এক ছোট বোন ফোনে বলছিলেন, ভেদভেদী বাজার এলাকা থেকে তার এক মামাকে আর্মিরা ধরে নিয়ে গেছে। তিনি কোন সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন না। রাতের আঁধারে এসে আর্মিরা দরজা নক করে এবং যাকে পায় তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। লোকটার হার্টের প্রবলেম। কদিন আগে চট্টগ্রাম থেকে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। এখন তার কি অবস্থা তার পরিবারের কেউ জানতে পারছে না। একই এলাকায় স্কুল পড়ুয়া আমার এক ছোট ভাইকে আর্মিরা ধরেছিল। আর্মিরা প্রশ্ন করেছিল সে কোন ক্লাসে পড়ে? দশম শ্রেণিতে পড়ে বলে উত্তর দেয়ার পর আর্মিরা তাকে ছেড়ে দেয়।
গত ৬ ডিসেম্বর রাঙামাটির জুরাছড়ির উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সহ-সভাপতি অরবিন্দু চাকমাকে একদল দুর্বৃত্ত হত্যা করে পালিয়ে যায়। কে বা কারা এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তার উপযুক্ত তদন্ত না করেই বনযোগীছড়া ইউনিয়নের উত্তম কুমার চাকমাসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে জুরাছড়ি থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন দুমদুম্যা ইউনিয়েনর ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য লক্ষী লাল চাকমা, হেমন্ত চকমা, রবিধন চাকমা, মানষ চকমা। জুড়াছড়িতে রাত হলেই আর্মিরা অভিযান চালাচ্ছে এবং সাধারণ লোকজনকে নির্বিচারে ধরপাকড় করে অরবিন্দ চাকমা হত্যা মামলার আসামি বানানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।
অরবিন্দু হত্যার প্রতিবাদে রাঙ্গামাটিতে জেলা আওয়ামীলীগ সকাল সন্ধ্যা অবরোধ ডাকে। অবরোধের দিন সকাল ১১:০০ ঘটিকার দিকে রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলাধীন রাইখালী ইউনিয়নের ডংনালা গ্রাম থেকে উষামং মারমাকে তাঁর বাড়ি থেকে স্থানীয় ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মিজানের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের দুর্বৃত্তরা ধরে নিয়ে যায়। দুর্বৃত্তরা অমানুষিকভাবে মারধর করতে করতে উষামংকে কাপ্তাই উপজেলাধীন কোদালা গ্রামের দিকে ধরে নিয়ে যায়। এবং অন্যদিকে দুপুর ১২:৩০টার দিকে রাইখালি ইউনিয়নের কংহ্লাঅং মারমা (৪০) রাইখালী বাজারে গেলে ছাত্রলীগ-আওয়ামীলীগের একদল দুর্বৃত্ত তাঁকে বেদম মারধর করে। স্থানীয়রা বলছে বিষয়টি জানানো হলেও পুলিশের পক্ষ থেকে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ভোর রাতে রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার বিভিন্ন জুম্ম গ্রামে সেনাবাহিনী নির্বিচারে ধরপাকড় চালিয়েছে। উক্ত অভিযানে বিভিন্ন গ্রাম থেকে নারী ও কিশোরসহ ৮ জন গ্রামবাসীকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আটককৃতরা নিরীহ গ্রামবাসী বলে জানা গেছে। যাদের মধ্যে সখিলাল তঞ্চঙ্গ্যা নামের একজন ৯ম শ্রেণির ছাত্র ও ছিল।
রাঙ্গামাটি শহরের ভালেদি আদামে আওয়ামীলীগ নেত্রী ঝর্ণা চাকমার বাড়ীতে হামলার ঘটনার জের ধরে সে এলাকার অধিকাংশ যুবকদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশই সিএনজি ড্রাইভার। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের পরিবারেরা দূর্বিসহ জীবন যাপন করছেন। গতকাল সন্ধ্যার দিকেও রাজবন বিহার এলাকা থেকে তিনজন নিরীহ ছাত্রকে আর্মিরা ধরে নিয়ে গেছে বলে খবর পেয়েছি। সন্ধ্যা কিংবা গভীর রাত পর্যন্ত লোকারণ্য ভরপুর থাকত রাঙ্গামাটি সদর এলাকার জনপদ। স্টেডিয়ামের রাজবাড়ী সাইডের গ্যালারিতে তরুণ-তরুণীদের হৈ-হুল্লোড় অথবা জিমনেসিয়ামের মাঠে আড্ডা জমানো একদল যুবক। বিসিক অফিসের বিপরীত পাশে গড়ে ওঠা টি-স্টলগুলোতে গোল টেবিলে বসে চা-নাস্তার রমরমা আড্ডা। এখন সন্ধ্যা নামার পর-পরই এই শহরটাতে সুনসান নীরবতা বিরাজ করে।
সারাদিনের কর্মব্যস্ততা অতিক্রান্ত করে সন্ধ্যায় পাড়ায় দোকানে বসে প্রতিবেশীদের সাথে সুখ-দু:খ আলাপনের সুযোগটাকে যেন স্থিমিত করে দেওয়া হচ্ছে। রাত নামার সাথে সাথে এখানে অজানা আতঙ্ক এসে ভিড় জমাচ্ছে। রাতে কেউ হঠাৎ অসুস্থ হলে পাশের দোকানের ফার্মেসিতে গিয়ে ওষুধ আনার মত অবস্থাও যেন নেই। পাশে যদি আর্মিরা এসে তুলে নিয়ে যায়! সারা রাত জুড়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় আর্মিরা অভিযান চালাচ্ছে। যাকে পাওয়া যায় তাকে নির্বিচারে আটক করা হচ্ছে।এই শহরটা যেন,বিখ্যাত সাহিত্যিক ব্রাম ট্রোকারের রচিত “ড্রাকুলা” উপন্যাস। যেখানে সন্ধ্যা নামার পর রক্তচোষা ভ্যাম্পায়াররা নেমে আসে শহরে। সন্ধ্যার পর তাদের ভয়ে পুরো শহরে বিরাজ করে অনাকাঙ্খিত স্থবিরতা। স্বাভাবিকভাবে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এই প্রশাসন কার জন্যে? জনগণের জন্যই প্রশাসন? নাকি প্রশাসনের জন্য জনগন? প্রশাসন যদি জনগণের জন্য হয় তাহলে নির্বিচারে এই ধর-পাকর আটক-অভিযান কার স্বার্থে? কার মনোরঞ্জনের জন্য আমাদের সাথে এমন আচরন করা হচ্ছে? এই ঝর্নারা আওয়ামী লীগের কর্মী না হয়ে যদি সাধারণ জনগণ হতেন তাহলে কি প্রশাসন এভাবে ততপর হতো? ঝর্ণা চাকমারা আওয়ামীলীগ করছেন কাদের জন্য? নিজের আখের গোছানোর জন্য নাকি জনগণের জন্য? আওয়ামী লীগ সরকার কার জন্য? সরকার যদি জনগণের জন্য হয় তাহলে নিরীহ জনগণের সাথে এমন বৈরি আচরণ কেন? প্রশাসনের কাজে বাধা দেয়ার কোন অধিকার আমাদের নেই তবে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের কাছে অবশ্যই প্রশাসনকে জবাবদিহিতা করতে হবে এবং এসকল প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
উপযুক্ত তদন্তের আগে এভাবে নির্বিচারে ধরপাকড় দেশের কোন আইনে রয়েছে আমাদের জানা নেই। ঝর্ণা চাকমাকে কে বা কারা কুপিয়েছে সেটাও তো আমাদের জানা নেই। এই জঘন্য অপরাধ কে করেছে তার বিচার এবং যথোপযুক্ত শাস্তি আমরা অবশ্যই চাই কিন্তু আগে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। এই তদন্ত বলতে শুধু মাত্র ঝর্ণা চাকমার উপর “কারা” হামলা করেছে সেটা নয়। তদন্তের অংশ হিসেবে “কি কারণে” হামলা করা হয়েছে সেটাও খুজে বের করতে হবে। সেখানে ব্যাক্তিগত শত্রুতা থাকতে পারে, থাকতে পারে দলীয় কোন্দল ও! এটা সবাই জানে যে ঝর্ণা চাকমা যে এলাকায় থাকেন সে এলাকাগুলোতে মদের কেনাবেচা ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে অনেক আগেই। তাহলে সেটা এমনও হতে পারে যে ব্যক্তি গত শত্রুতার জের ধরে মদ্যপ কেউ তাকে কুপিয়েছে।
উপযুক্ত তদন্ত ছাড়া ঝর্ণা চাকমার হামলার দায় সাধারণ জনগণ কেন নেবে? আটককৃত ওই সিএনজি ড্রাইভার ও তাদের পরিবারের নিরীহ সদস্যরা নেবে কেন? অথবা ভেদভেদী বাজার এলাকা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া ওই হার্টের রোগী কি দোষ করেছে; কি দোষ করেছে তার জন্য প্রবলভাবে দুচিন্তাগ্রস্ত তার পরিবারের সদস্য-সন্তান-সন্ততি ও আত্মীয়-স্বজনের? বিহার এলাকা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া সাধারণ ছাত্ররা কি দোষ করেছে? গ্রাম থেকে শহরে পড়তে এসে পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝতে না পারাটাই কি তাদের দোষ? অথবা পড়ার ফাঁকে ঘুরতে গিয়ে একটু রাত হয়ে যাওয়াটা কি তাদের দোষ ছিল? তাদের বাবা-মা’রা কি দোষ করেছেন যারা সন্তানের দুচিন্তায় দু-চোখের পাতা এক করতে পারছে না? একজন মানুষ নাক ভুচা, চোখ চিপা অর্থাৎ সরকারি ভাষায় উপজাতি হলেই কি তাকে রাতের আঁধারে যেখানে পাওয়া যায় সেখানে আটক করতে হবে? উপজাতি হলেই কি সে সন্ত্রাসী হয়ে গেলো? যদি তা না হয় তাহলে নির্বিচারে গনহারে গ্রেফতার কেন করা হচ্ছে? গ্রেফতার আতঙ্কে পাহাড়ী গ্রামের ওই যুবকেরা কেন আজকে আজকে ঘরছাড়া?
রাঙ্গামাটির মাননীয় জেলা প্রশাসক মহোদয় গত ৯ ডিসেম্বর দল মত নির্বিশেষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা করার জন্য ফেসবুক ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন। এলাকাযর শান্তি বজায় রাখার জন্য সম্মানিত জেলা প্রশাসকের এ উদ্যোগ যথেষ্ট প্রশংসার দাবি রাখে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের এ সতর্কতা স্থানীয় আওয়ামীলীগের এমপি, ছাত্র সংগঠন ও সেনা মদদপুষ্ঠ নিউজ পোর্টালগুলো কতটুকু মেনে চলছেন এ বিষয়ে ও যথেষ্ট চিন্তা ভাবনা করা দরকার। ফেসবুকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে তারা বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক ও উত্তেজনামুলক বক্তব্যর অবতারণা ঘটাচ্ছেন।
যেটা নি:সন্দেহে অত্র এলাকার পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ঘটাতে মশলা যোগাবে। জনসংহতি সমিতিকে “সন্ত্রাসী সংগঠন” ও জুম্ম জনগণকে প্রতিনিয়ত “উপজাতীয় সন্ত্রাসী” আখ্যাদান এবং সরকার ও রাষ্ট্র বিরোধী আখ্যা দিয়ে তারা অপপ্রচারণায় নেমেছেন। আঞ্চলিক পরিষদের মাননীয় চেয়ারম্যান সন্তু লারমাকে ব্যক্তি আক্রমণ করার মধ্যে দিয়ে তারা বিভিন্ন ধরনের উষ্কানিমুলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন যেটা মাননীয় জেলা প্রশাসকের আদেশ অমান্য করার সামিল। যেটা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা দরকার সেটা হল পাহাড়ের মানুষ আওয়ামীলীগ ও রাষ্ট্র বিরোধী নয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানকল্পে জেনারেল এরশাদ সরকারের আমলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সঙ্গে ৬ বার বৈঠক করেছিল এবং কোন প্রকার সিদ্ধান্তে উপনীত হতে না পারে তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও ১৯৮৯ সালে স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন প্রতিষ্ঠা করে। এরপরে খালেদা জিয়ার সরকার ১৩ বার বৈঠক করলেও কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা করা যায়নি।
শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তিতে উপনীত হয়। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কিত আওয়ামীলীগের ইশতেহারে উল্লেখ ছিল- পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া ১৯৯৫ সালে আওয়ামীলীগ নেতা ক্যাপ্টেন এবি তাজুল ইসলাম তাজ এবং ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার প্রতিনিধি হয়ে আওয়ামীলীগ নেতা ওবায়দুল কাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দিয়ে ব্যবসায়ী সেজে গোপনে পার্টির নেতৃবৃন্দের সাথে দেখা করতে আসেন। উভয় নেতা কথা দিয়ে যান আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধান করবেন এবং তিন জেলায় তিন আওয়ামীলীগ প্রার্থীকে সমর্থন দিতে অনুরোধ করেন। পার্টির সমর্থনে তিন জেলার তিন আওয়ামীলীগ প্রার্থীকে জুম্ম জনতা বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করে।
জনসংহতি সমিতির আশির্বাদ বর্ষণে মন্ত্রী হয়েও কল্পরঞ্জন চাকমা ২০০০ সালের ২১ ডিসেম্বর এক প্রশাসনিক নির্দেশনার মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন যে, সার্কেল চীফের পাশাপাশি ডিসিরাও স্থায়ী বাসিন্দাদের সনদ দিতে পারবেন। ২০০১ সালে দীপংকর তালুকদার শরণার্থী বিষয় টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান হয়ে সম্পূর্ণ ব্যক্তিস্বার্থে পার্বত্য চুক্তি লঙ্ঘন করে প্রায় চল্লিশ হাজার সেটেলার পরিবারকে আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামে পুনর্বাসন সিদ্ধান্ত নেন। যা চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন ও আওয়ামীলীগের প্রতি পার্বত্যবাসীর অন্যতম চরম ক্ষোভের কারণ। চুক্তি সম্পাদনের পর এ সকল মন্ত্রী-মিনিষ্টাররা স্পষ্টভাবেই অনেকবার চুক্তির বিরোধিতা করেন এবং জুম্ম জনগণের কাছে বরাবরের মত ধিকৃত হন। পরবর্তীতেও এই সাংসদরা পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে যে ভূমিকা রেখেছিলেন তা জাতীয় কুলাঙ্গারের ভূমিকা এবং জুম্ম জনগণকে আশাহত করে। সেকারণে আজকে জনগণ প্রকৃতপক্ষে এসকল চুক্তি বিরোধিদের সাঙ্গপাঙ্গদেরকে ঘৃনাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এই সকল সুবিধাবাদীরা চায় নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ও সংকীর্ণ স্বার্থ হাসিল। এদের চাওয়া পাওয়া সীমাহীন। তাদের রাতারাতি কুড়েঘরের জায়গায় গড়ে ওঠেছে বহূতল ভবন। স্বার্থ ও ক্ষমতায় বনে যায় জনগণের মনিব। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও অগণতান্ত্রিক সরকারের পুঁজি এরা, জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থীমুলক সব কাজে জড়িয়ে থাকে। দেশের ভেতরে প্রতিক্রিয়াশীল নীতিনির্ধারকদের নিকট আবার এদেরকে সাংসদ হিসেবে পাওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এরা চুক্তিকে অবাস্তবায়িত অবস্থায় রেখে অশান্তি জিইয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর। পার্বত্য অঞ্চলকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করা ও এই অঞ্চলে ভুমি আগ্রাসন নীতি শতভাগ সাফল্যমন্ডিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এসব ভন্ড ও প্রতিক্রিয়াশীল সুবিধাবাদীরা সময় বুঝে সা¤্রাজ্য্যবাদ, আমলা পূঁজিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবাদের ধারক-বাহক বিভিন্ন জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক দলে ভিড় জমালেও আসলে এরা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। এরাই দেশের আওয়ামীলীগের শক্তি ও প্রশাসনের ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে জুম্ম জনগণের জনজীবন কে বিপর্যস্ত করে তুলে দেশের বাঙালি জাতি ও জুম্ম জনগণের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করছে। পাহাড়িদেরকে বাঙালি বিদ্বেষী হিসেবে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
কোনো গণতান্ত্রিক দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থায় একজন নাগরিকের অধিকার ও শান্তি-শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখার জন্য নিরপেক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। কারণ সামরিক বা বেসামরিক প্রশাসন কোনো নির্দিষ্ট দল বা গোষ্ঠীর হতে পারে না। যদি প্রশাসন কোনো গোষ্ঠী বা দল কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত বা প্রভাবিত হয় তাহলে সেখানে আইন ও তার অনুশাসনের সঠিক প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত হয় ও মানবাধিকার লংঘিত হয়। রাষ্ট্র কতৃক প্রণীত আইন ও আইনের অনুশাসন সবার জন্য সমান। সেই হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা যেমন অরবিন্দ চাকমা হত্যাকারী ও ঝর্ণা চাকমার উপর হামলাকারী উপযুক্ত বিচার ও শাস্তি দাবি করি ঠিক তদ্রুপ রাইখালীতে উষামং মারমা ও কংহ্লামং মারমার ওপর হামলাকারীদের বিচার ও শাস্তির দাবি করতে পারি। তবে কোন ক্ষেত্রেই যেন সাধারণ জনগণকে হয়রানি ও ধরপাকড়ের মাধ্যমে আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করতে না হয়। এক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি-সম্প্রীতি ও উন্নয়নের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ছাড়া কোন বিকল্প নেই।

Back to top button