নারী দিবস উপলক্ষে আইপিনিউজের বিশেষ অনলাইন আলোচনা অনুষ্ঠিত
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে গতকাল ৮ মার্চ (মঙ্গলবার) আইপিনিউজ এক বিশেষ অনলাইন আলোচনা আয়োজন করেছে। “স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ ও আদিবাসী নারীর অভিগম্যতা” শীর্ষক এ আলোচনা সভায় সঞ্চালনা করেন আদিবাসী যুব নারী নেত্রী অনন্যা দ্রং। জাতিসংঘ এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে- GENDER EQUALITY TODAY FOR SUSTAINABLE TOMORROW যা বাংলায় “স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ অর্জনে অন্যতম শর্ত লিঙ্গ সমতা”।
আলোচনার শুরুতে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য তুলি লাবণ্য ম্রং বলেন, আমরা ১৭ টি লক্ষ্য নিয়ে টেকসই উন্নয়নের যাত্রা শুরু করেছি, যেখানে বলা আছে কাউকে পেছনে ফেলে নয়। আদিবাসী নারীদের অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করতে হলে সমতার ভিত্তি এবং মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা অনেক আগেই উন্নয়নের কথা চিন্তা করেছি, বিংশ শতাব্দীতে এসে আমরা টেকসই ভবিষ্যতের জন্য জেন্ডার সমতার কথা ভাবছি।
আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী সুস্মিতা চাকমা আদিবাসী নারীদের সুষ্ঠ বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বলেন, মামলা হওয়ার পরেও বিচারের ক্ষেত্রে অনেক বিষয় কাজ করে। মামলার দীর্ঘসূত্রিতা, সাক্ষ্য-প্রমাণ নিয়ে মামলা প্রমাণ করাসহ প্রত্যেকটি সেক্টর আদিবাসী নারী বান্ধব সিস্টেম না হলে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করার আশা করতে পারিনা। সাক্ষীদের সাক্ষ্য দিতে না আসা, দীর্ঘসূত্রতার কারণে নানা সমস্যার মুখোমুখি হওয়া এমনকি ভাষাগত কারণেও ভিকটিম তার বয়ান ঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারেনা।
তাছাড়া ডাক্তারদের সাক্ষ্য দিতে ভয় পাওয়া, আলামত নষ্ট হওয়ার বিষয়গুলোও সঠিক বিচার না পাওয়ার কারণ বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আরো বলেন, পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় আদিবাসী নারীদের বেরিয়ে এসে বৈরী পরিবেশে তার অবস্থান তৈরী করা খুব সহজ নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা আমরা জানি। সেখানে একজন আদিবাসী নারী কিভাবে তার সংগ্রাম এগিয়ে নেবে সেটা অবশ্যই ভাববার বিষয় বলে তিনি মনে করেন।
আদিবাসী নারীদের জন্য সরকার যেসব সুযোগ-সুবিধা গুলোর ব্যবস্থা করেছে সেগুলো আদিবাসী নারীরা কত সহজে লাভ করতে পারছেন সেগুলো যথাযথ দেখভাল হওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন।
আদিবাসী নারীদের ত্রিমাত্রিক অধঃস্তনতার বিষয়টি তুলে ধরেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. স্নিগ্ধা রেজওয়ানা বলেন, আদিবাসী নারীরা প্রথমতঃ নারী হিসেবে, দ্বিতীয়ত আদিবাসী নারী হিসেবে এবং তৃতীয়ত ইন্টার্নাল আইডেন্টিটির (চাকমা নারীর বাস্তবতা, ম্রো বাস্তবতা, সাঁওতাল বাস্তবতা এক নয়) মাধ্যমে নিপীড়নের শিকার হন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সিপিবির কেন্দ্রীয় সদস্য লুনা নূর সমতার পরিস্থিতি কেন নষ্ট হয়েছিল তার তা নিয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, ‘পৃথিবী সৃষ্টির সময় নারীর অধঃস্তনতা ছিল না। নারীর অধঃস্তনতা শুরু হয় আদিম সাম্যবাদী অবস্থা বিলুপ্তি হওয়ার মাধ্যমে। তখন থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, পরিবার কাঠামোর মধ্যে ক্ষমতার চর্চা এবং পুরো বিষয়টিকে কুক্ষিগত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। আদিবাসীদের নারীর ক্ষেত্রে বিষয়টি আরো প্রকট।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. ঈশানী চক্রবর্তী অতি আড়ম্বরে, অতি জাকজঁমকতার মাঝে যেন নারী দিবসের মূল চেতনা হারিয়ে না যায় সেদিকে জোর দেন। নিজস্ব সমাজ পরিসরে এবং বাইরের পরিস্থিতে আদিবাসী নারীরা তাদের প্রাপ্য অধিকার পাচ্ছেন না বলে তিনি মনে করেন।
এছাড়াও আলোচনা সভায় আরো অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য সোহেল চন্দ্র হাজং, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার জাহেদ হাসান।