নদীতে ফুল নিবেদনের মাধ্যমে পাহাড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো বিজু উৎসব
আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): পানিতে ফুল নিবেদনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম শুরু হল বর্ষবিদায় ও বরণের উৎসব। এই উৎসবকে চাকমা’রা বলে বিজু, মারমারা বলে সাংগ্রাই, ত্রিপুরার বলে বৈসু, তঞ্চঙ্গারা বলে বিষু, অহমিয়ারা বিহু, খুমিরা সাংক্রাইং, খিয়াংরা সাংলান এবং ম্রো’রা বলে চাংক্রান। নানা নামে পরিচিত পাহাড়ের সবচেয়ে বৃহৎ সামাজিক এই উৎসবটিতে সুখ, শান্তি এবং সমৃদ্ধ জীবনের প্রত্যাশায় আসন্ন নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে নদীতে ফুল নিবেদনের মধ্য দিয়ে দিনটি শুরু হয়। আজও রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের বিভিন্ন ছড়া ও নদীতে ফুল নিবেদন ও মা গঙ্গার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে শান্তি কামনায় আনুষ্ঠানিকতায় সামিল হয়েছেন জুম পাহাড়ের জুম্ম’রা।
নানা রঙের, গন্ধের বাহারী ফুল সংগ্রহ করে রঙিন পোশাক, অলঙ্কার এবং চুলে ফুল গুজিয়ে আজ এই ফুল নিবেদনে সামিল হয়েছে জুম পাহাড়ের মানুষ। তাই আজকের দিনকে বলা হয় ‘ফুল বিজু’।
সকল আদিবাসীদের কাছে উৎসবটির তাৎপর্য মূলত একই। যদিও তারা একে বিভিন্ন নামে অভিহিত করে থাকে।
চাকমারা এই উৎসবকে তিন দিনব্যাপী উদযাপন করে। বিজুর প্রথম দিন ‘ফুল-বিজু’। এদিন নদী-হ্রদে ফুল ভাসিয়ে পুরোনো বছরকে বিদায় দেয় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়। সেসময় তারা সবার মঙ্গল কামনায় প্রার্থনাও করে থাকেন গঙ্গা দেবতার কাছ থেকে।
তার পরের দিন মুর (বাংলায়- মূল) বিজু নামে পরিচিত। এই দিনটি নদীতে স্নানের মাধ্যমে শুরু হয় এবং ছোটরা বড়দের কাছে আশীর্বাদ চায়। এদিন নতুন পোশাক পরে গ্রামে ঘুরে বেড়ায় ছেলেমেয়েরা এবং গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। উৎসব শেষ হবে আগামী রোববার বাংলা নববর্ষের দিন যা চাকমা’রা ‘গজ্যাপোজ্যা’ বলে থাকে।
এদিকে ত্রিপুরা সম্প্রদায় এই উৎসবকে বৈসু নামে ডাকে। তিন দিনব্যাপী এই উৎসব (হারি বৈসু, বৈসুমা ও বাইসু কাতাল নামে পরিচিত) উদযাপন করে। প্রথম দিন তারা খুব ভোরে ফুল কুড়াতে বের হয়, সকালে নদীতে যায় (পরিবার, জাতি, দেশ ও পৃথিবীর সুখ, শান্তি ও কল্যাণ) উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করতে।
এই উৎসবে পুরুষরা ধুতি, সাদা পোশাক এবং নারীরা রঙিন পোশাক ও রূপার গয়নাসহ বিভিন্ন অলংকার পরে থাকেন। সারাদিন নানা ধরনের আয়োজন থাকে।
ম্রো, মারমা ও রাখাইন, খিয়াংসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বর্ষবিদায় ও বরণের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন আয়োজন করে থাকে। প্রতিবছর এই সময়ে পাহাড়ের মানুষ মেতে উঠে উৎসবের আনন্দে।