জাতীয়

নওগাঁয় আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী “কারাম” উৎসব পালিত

‘ভুমি আমাদের জীবন, সংস্কৃতি আমাদের পরিচয়’ স্লোগানকে সামনে রেখে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নওগাঁয় আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় ‘কারাম’ উৎসব পালিত হয়েছে।
১৭ই সেপ্টেম্বর শনিবার বিকেলে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার নাটশাল মাঠে এ উৎসব পালিত হয়।
এ উপলক্ষে নওগাঁ, নাটোর, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত আদিবাসী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন উৎসবে যোগ দিয়ে তাদের নিজেদের ভাষা সাংস্কৃতি আর ঐতিহ্য তুলে ধরেন। এ সময় নাটশালের পুরো এলাকা জমে উঠেছিল আদিবাসীসহ সকল সম্প্রদায়ের মিলন মেলা।
বংশ পরম্পরায় যুগ যুগ ধরে প্রতি বছর ভাদ্র মাসে পূর্ণিমায় উত্তরের সমতল ভূমির আদিবাসীরা এই কারাম উৎসব পালন করে। কারাম একটি গাছের নাম। আদিবাসী বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠির মানুষের কাছে এটি একটি পবিত্র গাছ। এই কারাম গাছকে মঙ্গলেরও প্রতীক বলে মনে করেন আদিবাসিরা। সেই গাছের ডাল কেটে মাটিতে পুঁতে রেখে পূজা-অর্চনা, নাচ-গান ও কিচ্ছা বলার মধ্য দিয়ে প্রতি বছর কারাম উৎসব পালন করে থাকেন আদিবাসীরা।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে নাটশাল মাঠে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশিদুল হক।
জাতীয় আদিবাসি পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্র্রনাথ সরেনের সভাপতিত্বে কবি ও গবেষক আতাউল হক সিদ্দিকী, জাতীয় আদিবাসি পরিষদের উপদেষ্টা ও বাসদ নেতা জয়নাল আবেদিন মকুল, কান্ট্রিডিরেকটর হেক্স বাংলাদেশ অনিক আসাদ, জাতীয় আদিবাসি পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সবিন চন্দ্র মুন্ডা, কেন্দ্রীয় যুব পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নরেন পাহান প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
সে সময় বক্তারা আদিবাসিদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও আগামীতে আরো বড় পরিসরে এ উৎসব পালন করতে পারে এজন্য সরকারি সহযোগিতা করার দাবি জানান। প্রধান অতিথি নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশিদুল হক বলেন, সমতল ভূমির আদিবাসীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও নিপীড়নে শিকার হয়ে থাকেন। আদিবাসীদের যেকোনো ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হলে পুলিশ প্রশাসন থেকে তা করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন জানান, ১৯৯৬ সাল থেকে নাটশাল মাঠে নিয়মিত পালন করা হয় ‘কারাম’ উৎসব। এ উৎসব বিভিন্ন জেলার ১৫টি সাংস্কৃতিক দল তাদের নাচ-গান পরিবেশন করেন। উৎসবের মূল উদ্দেশ্য আদিবাসীদের নিজেদের ভাষা সাংস্কৃতি আর ঐতিহ্য তুলে ধরার পাশাপাশি আদিবাসীদের ওপর সারাদেশে অত্যাচার, উৎচ্ছেদ, নির্যাতন ও তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সংঘবদ্ধ করা।
পূজা শেষে পরদিন কারাম ডাল উঠিয়ে গ্রামের তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের নারী-পুরুষ নেচে গেয়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে পুকুরে জল বিসর্জন দেয়। আদিবাসীরা এ ‘কারাম’ উৎসবের জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন।

Back to top button