অন্যান্য

দুর্গাপুরে আদিবাসী নারীর প্রতি সহিংসতার পরিস্থিতি শীর্ষক আলোচনা সভা

সোহেল হাজংঃ গত ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭,শুক্রবার নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুরের আদিবাসী অডিটোরিয়ামে “আদিবাসীদের মানবাধিকার ও আদিবাসী নারীর প্রতি সহিংসতার পরিস্থিতি” শীর্ষক একটি আলোচনা সভা আয়োজন করে যৌথভাবে ‘বাংলাদেশ জাতীয় হাজং সংগঠন’ ও ‘কাপেং ফাউন্ডেশন’ নামে একটি মানবাধিকার সংস্থা। আলোচনা সভাটি সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় হাজং সংগঠন-এর সভাপতি খগেন্দ্র হাজং এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পল্টন হাজং। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাজংমাতা রাশিমণি কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মতিলাল হাজং, দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার হোসেন আসাদ, বাংলাদেশ কৃষকলীগ, দুর্গাপুর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক স্বপন হাজং, বাংলাদেশ হাজং নারী সংগঠনের সভাপতি সন্ধ্যা রাণী হাজং ও কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি সোহেল হাজং। আলোচনার প্রথম অধিবেশনে কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর সোহেল হাজং তার মূল প্রবন্ধে বলেন, “দেশের আদিবাসীদের মানবাধিকারের সার্বিক অবস্থা ভালো নয়। আদিবাসী নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা বাড়ছেই । রাষ্ট্রে যেখানে আদিবাসী জনসংখ্যা, মোট জনসংখ্যার মাত্র ১.৮% । কিন্তু ২০১৬ সালেই এদেশে শুধুমাত্র আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশুর ওপর সহিংসতার হার প্রায় ৫.৭%। যা থেকে স্পষ্ট যে, এদেশে এখনো বিভিন্ন কারণে বাঙালি নারীদের তুলনায় আদিবাসী নারীদের প্রতি যৌন সহিংসতা শিকারের অনুপাত অনেক বেশি।” তিনি বলেন, ভূমিকে কেন্দ্র করে গত ৬ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ও পুলিশ দ্বারা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বাগদা ফার্ম এলাকায় সাঁওতাল ও বাঙ্গালিদের উপর বর্বরোচিত হামলা করে পুলিশের গুলিতে ৩ জন সাঁওতাল নিহতসহ প্রায় ১২,০০ পরিবারের ঘরবাড়ি আগুনে ভস্মীভূত করা হয়। তাছাড়া গতবছর বন বিভাগ কর্তৃক মধুপুর গড়ের আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলের ৯,১৪৫ একর জমি ‘সংরক্ষিত বন’ হিসেবে ঘোষণা করে উচ্ছেদ আতঙ্ক সৃষ্টি, মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার নাহার চা বাগান কর্তৃপক্ষের দ্বারা একটি উচ্ছেদ নোটিশে নাহার পুঞ্জির প্রায় ৭০০ খাসি আদিবাসীদের হুমকীর মধ্যে জীবনযাপন এবং এবছরের গত ২ জুন পার্বত্য রাঙ্গামাটি জেলার লংগদুতে সংঘটিত আদিবাসীদের ২ শতাধিক ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনাগুলো দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে আরো প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।

দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার হোসেন আসাদ তাঁর বক্তব্যে আদিবাসীদের প্রতি বলেন, ‍”বাংলাদেশের আইন আপনাদের জন্যেও প্রযোজ্য। এদেশ যদি আপনাদের প্রতি আইনের সুবিচার না করে তাহলে এর প্রাথমিক প্রতিবাদ আপনাদেরই করতে হবে। আপনাদের অধিকার আদায়ে যদি কোন প্রতিবাদ বা আন্দোলন গড়ে তোলেন, সে আন্দোলনের সফলতা আনতে সার্বিক সহযোগিতায় আমি পাশে থাকব।” বাংলাদেশ জাতীয় হাজং সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আদিবাসীদের অধিকার আদায়ে আরো শক্তিশালী ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং অচিরেই একটি বৃহৎ হাজং সম্মেলন আয়োজনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

Back to top button