আঞ্চলিক সংবাদ

দুর্গম সাজেকের মানুষের পাশে বাঙালি তরুণরা

রাঙামাটির বাঘাইছড়ির দুর্গম সাজেক ইউনিয়নে আদিবাসী জুমিয়া পরিবারগুলোতে ৪ মাস ধরে খাদ্য সংকট চলছে। পাহাড়ের পাদদেশে জুম চাষ, বাঁশ ও বনজ সম্পদ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে সাজেকের দুর্গম গ্রামগুলোর পাহাড়ী বাসিন্দারা।

কিন্তু এ বছর জুম চাষে বিপর্যয় হওয়ায় এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উৎস হ্রাস পাওয়ায় প্রাক-বর্ষা মৌসুম থেকে সাজেকের ২৫০০ পরিবারে আর্থিক অভাব দেখা দিয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে খাদ্যে।

চলতি বছর ভয়াবহ খাদ্য-সংকটে পড়েছে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক এলাকা। ৬০৭ বর্গমাইল আয়তনের বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন সাজেকে নগদ অর্থ ও চাল বিতরণ করছে সরকার, প্রশাসন ও বিভিন্ন সংস্থা।

বুধবার ১৭ মে রাঙ্গামাটি সাজেকে খাদ্য পীড়িতদের সহায়তা দিয়েছেন বিভিন্ন বাঙ্গালির তরুন ও যুবকরা। প্রধান সমন্বয়কক রেজাউল করিম সুমন ও সুমন্স ট্যুরিজম কর্তৃক বিশেষ সহযোগিতায় ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের এডভোকেট ইমতিয়াজ মাহমুদ ।এছাড়া সহযোগিতায় ছিলেন এনজয় চাকমা, সাজেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নয়ন চাকমা সহ তার পরিষদের মেম্বারগন, হেডম্যান, কারবারি প্রমুখ।

তাদের পরিকল্পনা ছিল সাজেকে খাদ্য পীড়িত আদিবাসীদের ত্রাণ সহায়তা দিয়ে সেবাদান করা। সেই ইচ্ছেটুকু বুধবার তাদের নিজেদের উদ্যাগে ১৫০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল এবং ১ কেজি করে ডাল বিতরণ করে পূরণ করলেন।

এসময় খাদ্য পীড়িত পাহাড়ী মানুষদের ১৫০০ কেজি চাউল বিতরণ করা হয়। কারবারীদের ২ বস্তা করে চাল দেওয়া হয়েছে। কারবারী পাড়ার খাদ্য পীড়িত লিস্ট অনুযায়ী দরিদ্র পরিবারের সংখ্যা ২৯ । তালিকা অনুযায়ী সেখানে তাদেরকে চাল বিতরণ করা হয়।

এদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে সরকারী ত্রাণ সামগ্রী তালিকা থেকেও অনেক জনকে বাতিল করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। কেউ কেউ ত্রাণ সামগ্রী নামে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে হটিয়ে নিচ্ছে খাদ্য পীড়িতের প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী । এসব অভিযোগ ডেইলি স্টার ও বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্টে ও বলা হয়েছে।

ইউপি সদস্য ডোহিন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, তার ওয়ার্ডে বেশির ভাগ মানুষ ত্রাণ পেয়েছেন, যা সর্বোচ্চ ১৫ দিন পর্যন্ত এই ত্রাণ দিয়ে তারা পরিবার চালাচ্ছে।জুমের ফসল ভাল না হওয়ায় চলতি বছর খাদ্য সংকটে পড়তে হয়েছে বলে জানান তিনি।

হেডম্যান জোপই তং ত্রিপুরা বলেন,”বৃহত্তর সাজেক সংরক্ষিত বনভূমির উত্তর দিকে ছয়টি মৌজা রয়েছে, যেখানে রাস্তা যোগাযোগ নেই। সাজেক উপত্যকায় খাদ্য সংকটের মূল কারণ হলো একসময় এই অঞ্চলের মানুষ স্বাধীনভাবে ভারতে মিজোরামে যাতায়াত করত এবং সেখানে থেকে খাদ্য সহায়তা নিয়ে আসত, তবে ভারত সরকার আন্তর্জাতিক সীমানা বেড়া দেওয়ায় এখন তা করতে পারে না।

সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা বলেন, “ওয়ার্ড নং ৬-এর কিছু গ্রাম এবং ওয়ার্ড নং ৫-এর সব গ্রাম এখনও পর্যন্ত কোন ত্রাণ পায়নি। আমরা তাদের কাছে খাবার পৌঁছানোর চেষ্টা করব। ”

উল্লেখ্য, ৬০৭ বর্গমাইল আয়তনের বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন সাজেকে নগদ অর্থ ও চাল বিতরণ করছে সরকার, প্রশাসন ও বিভিন্ন সংস্থা । তবে সেসব সহায়তা খাদ্যপীড়িত মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না, বলে অভিযোগ উঠেছে।

এখন পর্যন্ত সাজেকে পার্বত্য মন্ত্রণালয়, জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসন থেকে চাল এবং অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। কিন্তু এই অর্থ ও চাল দুর্গম এলাকার মানুষ পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে অনেকে। ইউনিয়নের কাছের মানুষের চেয়ে দুর্গম এলাকার মানুষেরা বেশি খাদ্যপীড়িত, কিন্তু নাম তালিকায় নেই বলে খাদ্য সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

গিণারাণী ত্রিপুরা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি প্রায় সাত কিলোমিটার হেঁটে বাচ্চা নিয়ে এসেছি। কিন্তু আমি চাল ও টাকা পাইনি। আমরা বাচ্চাটা খুবই অসুস্থ, কিছু সাহায্য পেলে খুব ভালো হতো। ইউপি মেম্বার আমাদের নাম নিয়েছিলো, কিন্তু কেন এই নাম বাদ দিয়েছে আমি জানি না।’ দেবাছড়ি থেকে আসা রুপাশ্রিরি ত্রিপুরা বলেন, ‘আমার নাম তালিকাতে নেই, সে জন্য আমি নাকি চাল পাবো না। আমাদের এলাকার অনেকেই চাল পায়নি।’

পশ্চিম খাগড়াছড়ির কারবারি রিপতি মোহন বলেন, ‘যারা সাজেক ইউনিয়নের আশেপাশে রয়েছে তারাই মূলত এই সহযোগিতা পাচ্ছে। কিন্তু যারা দূর গ্রামে রয়েছে তারা এই সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’

Back to top button