জাতীয়

দক্ষিণ এশিয়ার ক্রমবর্ধমান বৈষম্য দূর করতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে স্যাপি

নিজস্ব প্রতিবেদক; ঢাকাঃ ২২জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে সাউথ এশিয়ান অ্যালান্স ফর পভার্টি ইরাডিকেশন (স্যাপি)-বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের উদ্যোগে ‘বৈষম্যহীন দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে সকলে ঐক্যবদ্ধ হই’শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত। ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির সাগর-রুনি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সভাপতিত্ব করেন সাউথ এশিয়া অ্যালান্স ফর প্রভার্টি ইরাডিকেশন (স্যাপি)-র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক ও নারীনেত্রী রোকেয়া কবীর। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন নাট্যব্যক্তিত্ব আফরোজা বানু। আরও বক্তব্য রাখেন বিএমএ- এর সাবেক সভাপতি ডা. রশিদ-ই-মাহবুব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর এএম আকাশ,শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন, শিশু সংগঠক ও কেন্দ্রীয় খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক ডা. লেলিন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজিমউদ্দিন খান, ইনসিডিন বাংলাদেশ -এর পরিচালক মুশতাক আলী।

সংবাদ সম্মেলনে রোকেয়া কবীর বলেন-‘ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও লিঙ্গ নির্বিশেষে সবাই বৈষম্যের শিকার। এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালীরা আঁতাত করে এমন ধরনের অর্থনৈতিক ধ্যানধারণা ও ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, যেখানে বাজার ও অর্থের একচ্ছত্র আধিপত্য। মূলত, এই বিষয়গুলোর ফলেই বিগত ৩০ বছর ধরে বৈষম্য চরমভাবে বেড়েই চলেছে। ওর্য়াল্ড ইকোনোমিক ফোরাম (World Economic Forum) ২২-২৫জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে সুজারল্যান্ডের ডাভস শহরে সম্মেলনে মিলিত হচ্ছে। এসময়ে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান বৈষম্য, অসমতা ও ব নার বিষয়গুলো এবং এপ্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়ার জনগোষ্ঠীর দাবীগুলো তুলে ধরার লক্ষ্যে Let’s End Equality Together-Make South Asia Asia fair for All’এই দাবিতে week of action 2019 in South Asia – জানুয়ারি সপ্তাহব্যাপী বিশ্বজুড়ে ফাইট ইনইকুয়ালিটি ক্যাম্পেইন চলছে।’

প্রফেসর এম এম আকাশ বলেন- ‘দক্ষিণ এশিয়ার জনগোষ্ঠী জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও লিঙ্গ নির্বিশেষে বৈষম্যের শিকার। বিশ্বব্যাপী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার অংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে ১৯৯০-২০১৩ সময়ের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাসকারী দরিদ্র লোকের সংখ্যা ২৪৮.৮ মিলিয়ন হ্রাস পেলেও পালমা রেশিও (বৈষম্যের সূচক) দ্বারা দক্ষিণ এশিয়ার ১০ শতাংশ ধনী ব্যক্তির সামগ্রিক জাতীয় আয়কে (জিএনআই) ৪০ শতাংশ দরিদ্র ব্যক্তির সামগ্রিক জাতীয় আয় দিয়ে ভাগ করে দেখা যায়, উপরের ১০ শতাংশের আয়ের তুলনায় নিচের ৪০ শতাংশের আয় হ্রাস পাচ্ছে।’

শ্রমিকনেতা আবুল হোসেন বলেন-ওর্য়াল্ড ইকোনোমিক ফোরাম অর্থনৈতিক আলোচনার নামে ধনী, অভিজাত এবং বৃহৎ বহুজাতিক করপোরেশনগুলো জলবায়ুকে ধ্বংস করছে এবং নারী, শ্রমিক ও আদিবাসী জনগণের অধিকারগুলো ছিন্ন করতে মুনাফা এবং শক্তি প্রয়োগ করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজিমউদ্দিন খান বলেন-‘নাগরিক সমাজ এবং রাষ্ট্রের মধ্যকার সামাজিক চুক্তিকে ধ্বংস করে এবং বাকস্বাধীনতা ও মুক্ত সহযোগিতায় বাধা সৃষ্টি করে জনগণকে দরিদ্র ও নীরব রাখার উদ্দেশ্যে ক্ষমতাবানকে শক্তিশালী করার সিস্টেমের বিরুদ্ধে আমরা একটি নতুন অর্থনৈতিক মডেলের দাবি করছি আমরা। দক্ষিণএশিয়ার সকল দেশের সক্রিয়জন, সামাজিক আন্দোলন, নারীবাদী, আদিবাসীসহ সকলের জন্য এমন একটি ব্যবস্থা চাই, যা মানুষের অর্থনৈতিক সুবিধা, শান্তি এবং গণতন্ত্র পুনর্নিমাণ করবে এবং একটি অধিকতর ভালো বিশ্ব ব্যবস্থা তৈরি করবে। ’

ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন- ‘আমরা একটি মহৎ সমতাভিত্তিক বিশ্ব বিনির্মাণের কথা বলছি যেখানে সকল মানুষের অধিকার সম্মানিত এবং পরিপূর্ণ, সকল সম্ভাবনা, সুযোগ এবং খ্যাতি সবাই ভাগ করে নেয় ।’

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের এবং অন্যান্য বিশ্বের সরকারসমূহকে ধনী এবং দরিদ্রদের মধ্যকার ব্যবধান কমানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা,মজুরী বৈষম্য কমানো, নারীর প্রতি বৈষম্য কমানো,দেশীয় কর রাজস্ব সচল করা এবং ধনী ব্যক্তি ও কোম্পানির প্রতি অন্যায্য কর ছাড় বন্ধ করা,ধনী ব্যক্তি ও কোম্পানির ন্যায্য ভাগ পরিশোধ করা; জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বিনিয়োগ করা, দায়িত্বশীল রাষ্ট্র গড়ে তোলা এবং সকলের জন্য সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা, ক্ষতিগ্রস্ত/আক্রান্ত জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা প্রদানের মাধ্যমে জলবায়ূ বিপর্যয় রোধ এবং জীবাশ্ম জ্বালানির অযৌক্তিক প্রভাব দূর করা, নারী ও ক্ষুদ্র কৃষকের ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরণ এবং কৃষি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাধান্য খর্ব করাসহ খাদ্যের ভ্যালু চেইনের ঘোষণ থেকে নারী ও ক্ষুদ্র কৃষককে রক্ষা করার দারী জানান।

Back to top button