থমকে যাওয়া সময়ঃ ৪ মে ১৯৮৯, লংগদু
আজ ৪ মে লংগদু গণহত্যা দিবস! সেই সাথে আমার ভাই জাগরণের ২৮তম অন্তর্ধান দিবসও। জানি এভাবে বছর ঘুরে বছর আসবে কিন্তু আমার দাদা থেকে যাবে সেই শিশুটি। এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে তার বয়স ৯ এর ঘরে আটকে রেখে তাকে দেয়া হয়েছে নির্মম চির বিদায়!
আমার বন্ধু টিংকু। তার ৭ বছরের ছোট্ট ভাই সজল। সেও আমার দাদার মত ৭ বছরেই অমরত্ব লাভ করেছে তিনটিলায়। চোখ ছল ছল ভয়ার্ত মলিন মুখ নিয়ে যে সজলকে দেখেছিলাম সে সন্ধ্যায় ভাবতে পারিনি সে সারা জীবন এই মলিন চেহারায় বেঁচে থাকবে আমার স্মৃতিতে।
রবি মামা। রাবেতা হাসপাতালে চাকুরী করতেন। পাহাড়ি বাঙ্গালী কত শত মানুষকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছেন। অথচ নিজে সেটেলার এর দায়ের কোপে, বল্লমের আঘাতে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে কত অনুনয় বিনয় করলেন তাঁকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য। কিন্তু পেলেন না কাউকেই। পারলেন না হাসপাতালে পৌঁছাতে। তার আগেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আমার চোখের সামনেই নিথর নিস্তব্ধ হয়ে গেল তাঁর রক্তাক্ত দেহ।
গুলিবিদ্ধ প্রিয় জেঠিমা (অনিল চেয়ারম্যান এর স্ত্রী, আমারা তাঁদের বাড়িতেই আশ্রয় নিয়েছিলাম সেদিন) লুটিয়ে পড়লেন মেঝেতে … !
নাহ, এই তালিকা আর দীর্ঘ করতে চাইনা।
প্রিয়জন বিয়োগের বেদনা না হয় আমাদের কাছেই থাক। সন্তান হারানোর শূন্যতা আর হাহাকার না হয় আমার মা’কেই গ্রাস করুক। প্রয়োজনে বেদনার অশ্রু নদী বয়ে যাক আমাদের সকলের হৃদয়ে। তাতে কার কী আসে যায়? এদেশে জীবন নিয়ে এখনও বেঁচে আছি এটাও ঢের বেশি!!
তারপরও প্রত্যাশা করি – পার্বত্য চট্টগ্রামে আমাদের জীবন আমাদের হোক !
সেদিনের সেটেলার এবং নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ হামলায় হত্যাকাণ্ডের শিকার সকল শহীদদের জানায় অশেষ শ্রদ্ধা !
মানবাধিকার কর্মী পল্লব রাঙ্গেই এর ফেসবুক ওয়াল থেকে নেয়া।