জাতীয়

‘তুরু তুরু তুরু রু বাঁশি বাজেরে’- পাহাড়ে উৎসবের আমেজ

শ্যাম সাগর মানকিনঃ তুরু তুরু তুরু রু বাঁশি বাজেরে পাড়ায় পাড়ায় বেড়াবো সবাই মিলেরে এসেছে বিজু বিজু বিজু…..(চাকমা গানের বাংলা অর্থ)।
বর্ষ বিদায় ও বরণের নানান আয়োজনে পাহাড়ের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে উৎসবের আমেজ। শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতী ও বৃদ্ধ নরনারীদের প্রাণে প্রানে যেনো বেজে চলেছে এই গান। পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসীদের প্রধানতম সামাজিক উৎসব বিজু, বৈসু, সাংগ্রাই, চাংক্রান বর্ষ বিদায় আর বরণের উদযাপন । পাহাড়ে বসবাসরত ১৪ টি জনগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য অনুসারে বর্ষ বিদায় ও বরণের এই উৎসব উদযাপন করে থাকে । মূলত চৈত্র মাসের শেষদিন চৈত্র সংক্রান্তি ও বৈশাখের প্রথমদিনকে ঘিরেই সাজানো হয় অনুষ্ঠানসূচী। বৈশাখের প্রথম দিনের দু-তিনদিন আগে থেকেই উদযাপন শুরু হয়ে যায়। পাহাড়ের আদিবাসীরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে নানা আয়োজন নিয়ে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ঐতিহ্যবাহী নাচ-গান, যুবক-যুবতীদের পানিখেলা, পিঠা উৎসব, ঐতিহ্যবাহী খাবার রান্না, ফুলভাসানো প্রভৃতি আয়োজন থাকে এ উৎসবে।
ইতিমধ্যেই পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় নানান অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হয়ে গেছে উৎসব উদযাপন পর্ব। রাঙামাটিতে প্রতিবারের মত ‘বিজু-সাংগ্রাই-বৈসু-বিষু-বিহু-চাংক্রান উদযাপন কমিটির’ আয়োজনে উৎসব শুরু হয়েছে। ৯ এপ্রিল এক বর্ণাঢ্য র্যালী ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এবারে আয়জন শুরু হয়েছে বলে জানান আয়োজকদের পক্ষে ইন্টুমনি চাকমা। এবারের আয়োজনে ১০ এপ্রিল আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ১১ এপ্রিল রাঙামাটি স্টেডিয়ামে বলীখেলা ও ১২ এপ্রিল ফুল ভাসানো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উৎসব আয়োজনের সমাপ্তি হবে। তাছাড়া বিভিন্ন পাড়া কমিটি, যুবক্লাবের উদ্যোগে অনেক জায়গায় আলাদা আলাদা করে উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বান্দরবন জেলার আইপি নিউজ প্রতিনিধি আমাদের জানায়, বান্দরবনে এবারে ‘উৎসব উদযাপন কমিটি’র আয়োজনে ১৩ এপ্রিল এক বর্ণাঢ্য র‍্যালীর মাধ্যমে শুরু হবে উৎসব উদযাপন। পরের দিন ১৪ এপ্রিল ‘পিঠা উৎসব’ সহ নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও যুবক-যুবতীদের পানিখেলা অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি আমাদের জানান।
এছাড়া বান্দরবনের রোয়াংছড়িতে ১৬ এপ্রিল এবং ১৭ এপ্রিল বলীপাড়ায় ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। বান্দরবনের রোয়াংছড়ি ও বলীপাড়ায় সাংস্কৃতিক আয়োজনে আদিবাসী গানের দল ‘ মাদল’ তাদের পরিবেশনা নিয়ে হাজির থাকবে বলে স্থানীয় আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
খাগড়াছড়িতেও বিভিন্ন জায়গায় বিজু, বৈসু, সাংগ্রাই, চাংক্রান, বিহুর নানান আয়োজন করা হয়েছে। খাগড়াছড়ি সদরে পানখাইয়্যাপাড়ায় ‘মারমা উন্নয়ন সংসদ’র আয়োজনে থাকছে চারদিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠান। ১১ এপ্রিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও ঐতিহ্যবাহী ‘আলারী’ খেলা পরেরদিন ১২ এপ্রিল দিনব্যাপী পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ‘ধ’ খেলা, ১৩ এপ্রিল সকালে ‘প্রভাত ফেরি পদযাত্রা’ এবং ১৪ এপ্রিল সাংগ্রাই শোভাযাত্রা, পানিখেলা, ও ঐতিহ্যবাহী নাচ-গানসহ সাংস্কৃতিক নানান আয়োজনের কথা জানা গেছে। তাছাড়া পাড়ায় পাড়ায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী নানা আয়োজনে বর্ষ বিদায় ও বর্ষ বরণের এ উৎসব পালিত হবে।

Back to top button