অন্যান্য

ঢাবি ও চবি’র জুম্ম শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা

সুলভ চাকমাঃ গত ২৪ শে মার্চ,২০১৭ ইং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে দিনব্যাপী এক বর্ণাধ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আদিবাসী জুম্ম শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এক মিলনমেলা ও গেট টুগেদার অনুষ্ঠিত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সার্বিক সহযোগিতা ও তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত এই মিলনমেলা ও গেট টুগেদার অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে অনুষ্ঠিত হয় ২০-টুয়েন্টি প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ। সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচের উদ্বোধন করেন পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি ও পিসিপি কেন্দ্রীয় নেতা ক্যারিংটন চাকমা। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন পিসিপি ঢাবি সভাপতি নিপন ত্রিপুরা, চবি শাখার সহ-সভাপতি রিময় চাকমা, সাধারণ সম্পাদক মনস্বী চাকমা, সাংগঠনিক সম্পাদক ভূবন তঞ্চঙ্গ্যা প্রমূখ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে ছাত্রনেতারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের বিভিন্ন ন্যায্য আন্দোলনে সর্বদা অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জুম্ম শিক্ষার্থীরা। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে শত শত জুম্ম শিক্ষার্থী প্রতিবছর এই দুটি ক্যাম্পাসে আসে উচ্চশিক্ষার জন্য। আজকে এই দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত জুম্ম শিক্ষার্থীদের মধ্যকার মিলনমেলা ও গেট টুগেদার নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক একটি উদ্যোগ। অনুষ্ঠিত প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম ক্রিকেট একাদশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম ক্রিকেট একাদশকে ৪ রানে পরাজিত করে।

পরে দুপুরবেলায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বশান্তি প্যাগোডা-র ডাইনিং কক্ষে চলে এক প্রীতিভোজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জুম্ম শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন এমন খবরে কয়েকদিন ধরেই উৎসব উৎসব আমেজ ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জুম্ম শিক্ষার্থীদের মধ্যে। ঢাবি শিক্ষার্থীদের আপ্যায়নের কোন ত্রুটিই তারা রাখেন নি, উপরন্তু আপ্যায়নের জন্য প্রীতি ভোজে প্রচেষ্টা ছিল পাহাড়ের স্বতন্ত্র খাদ্যাভ্যাসের স্বাদ একটু হলেও ঢাবি শিক্ষার্থীদের মুখে তুলে দেওয়া। তাই চবি শিক্ষার্থীরা গত কয়েকদিন ধরেই তাদের ক্যাম্পাসের আশেপাশে বনে-বাদারে ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করতে থাকে শামুক, তারা প্রভৃতি। তারা গুদেয়ে তরকারি, শামুক তরকারি এবং মাংস দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় ঢাবি জুম্ম শিক্ষার্থীদের। আন্তরিকতাপূর্ণ এই প্রীতিভোজ সম্পর্কে ঢাবি জুম্ম শিক্ষার্থী মহেন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, “এককথায়- অনবদ্য। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রিয় চবি জুম্ম শিক্ষার্থীবৃন্দ” ।

দুপুর ৩.০০ টায় অনুষ্ঠিত হয় ঢাবি ও চবিতে অধ্যয়নরত বিভিন্ন বর্ষের মেয়েদের মধ্যকার প্রীতি রশি টানাটানি খেলা। রশি টানাটানি খেলায়ও জয় লাভ করে চবি টিম।
পরে বিকেল ৪.০০ টার দিকে অনুষ্ঠিত হয় বহু আকাঙ্খিত ঢাবি জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার বনাম চবি জুম্ম শিক্ষার্থীদের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ। “লীজেন্ডারি ঢাবি জুম্ম একাদশ” এর অধিনায়ক চাই লাউ মারমার নেতৃত্বে ব্যাপক উদ্দীপণা নিয়ে মাঠে নামে ঢাবির খোলোয়ারেরা। অন্যদিকে “এভারগ্রীণ ইলেভেন অব চবি” ও মাঠে নামে জয়ের প্রস্তুতি নিয়ে। তুমুল প্রতিদ্বন্দিতামুলক এই প্রীতি ফুটবল ম্যাচের উদ্বোধন ঘোষণা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনন্দ বিকাশ চাকমা। তিনি বলেন,- “তোমাদের এই উদ্যোগ দেখে আমি যেন আমার ফেলে আসা ক্যাম্পাসদিনগুলিতে চলে গেলাম। পারষ্পরিক ভ্রাতৃত্ব ও সংহতি নির্মাণের এই উদ্যোগ আগামীতেও চলমান থাকুক।” এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন পিসিপি চবি শাখার সভাপতি রিটিশ চাকমা, পিসিপি ঢাকা মহানগর সভাপতি ক্যারিংটন চাকমা, পিসিপি ঢাকা সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা, পিসিপি ঢাবি সাধারণ সম্পাদক অমরশান্তি চাকমা এবং পিসিপির কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সুলভ চাকমা প্রমুখ।

পরে বিকেল ৫.৩০ এর দিকে অনুষ্ঠিত হয় উভয় ক্যাম্পাসের জুম্ম শিক্ষার্থীদের মধ্যকার পারষ্পরিক পরিচিতি সভা ও ঘরোয়া সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। গান শোনান চবি শিক্ষার্থী রিময় চাকমা ও পূর্ণিমা চাকমা, ঢাবি শিক্ষার্থী জয়শ্রী চাকমা প্রমুখ। এর পরেও সন্ধ্যার দিকে চলতে থাকে উভয় ক্যাম্পাসের ব্যাচ বাই ব্যাচ গেট টুগেদার ও মতবিনিময়, ক্যাম্পাস ঘুরে বেড়ানো, চা-আড্ডা।

আয়োজকরা আইপিনিউজকে বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জুম্ম শিক্ষার্থীদের যৌথ প্রয়াস এই মিলনমেলা। উভয় ক্যাম্পাসের জুম্ম শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারষ্পরিক যোগাযোগের সেতুবন্ধ রচনা ও সংহতি নির্মাণের এমন বড় উদ্যোগ এটিই প্রথম। আমরা চাই ভ্রাতৃত্ব এবং সংহতি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান বাস্তবতায় সমগ্র জুম্ম সমাজে একটি সংহতি বার্তা পৌঁছে দিতে।আমরা আমাদের অগ্রজ, সাবেক এবং অপরাপর শুভাকাঙ্খীদের নিকট কৃতজ্ঞ।”

Back to top button