শিল্প ও সংস্কৃতি

ঢাবিতে জুম লিটারেচার সোসাইটির সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য উৎসব

সতেজ চাকমা, ঢাবি প্রতিনিধি: “বৈচিত্র্যে বাঁচুক জুম্ম ভাষা ও সংস্কৃতি” এ স্লোগানকে ধারণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম লিটারেচার এন্ড কালচারাল সোসাইটির উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আজ ১০ ফেব্রুয়ারী ২০১৮, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলস্থ উপাসনালয়ে এক ভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য উৎসবের আয়োজন করা হয়।
বিগত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নিশৈমং মারমার সঞ্চালনায় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়রতম শিক্ষার্থী প্রকট চাকমার সভাপতিত্বে তিন সেশনের এ আয়োজনে সকালের সেশনে ছিলো প্রায় ৯ টি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী (মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা, বম, ¤্রাে, চাক, তঞ্চঙ্গ্যা, রাখাইন ও সাঁওতাল) ছাত্র-ছাত্রীদের নিজস্ব মাতৃভাষায় উপস্থিত বক্তৃতা। উপস্থিত বক্তব্যর পরে অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম এবং দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাকমা এবং মারমা ভাষায় বিতর্ক। এরপরে বাংলা ভাষায় বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয় তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অধিবেশনে বিগত কমিটির সদস্য টরা তঞ্চঙ্গ্যার সঞ্চালনায় এবং সভাপতি এডিট দেওয়ানের সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. অসীম সরকার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জোবায়দা নাসরিন, শিক্ষা ও গবেষণা ইনন্সিটিটিউটের শিক্ষক তাপস কুমার বৈশ্য, পালি ও বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক জ্যোতিস্বী চাকমা এবং স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন কমিটির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক জয়শ্রী চাকমা।
বক্তারা আয়োজনটির সাথে সংহতি জানিয়ে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বহু ভাষা ও সংস্কৃতিকে দেশের মূল ধারার সাথে মেলবন্ধন ঘটানোর জন্য এ আয়োজনটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জুম্ম শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, খেলাধূলাসহ সহপাঠমূলক কার্যক্রমে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে। এছাড়াও বিভিন্ন আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাধুলায় তারা দক্ষতার সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করছে। বক্তারা এ ধরণের সৃষ্টিশীল উদ্যোগের সাথে সবসময় একাত্ম থাকবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনও সাথে থাকবে বলে উল্লেখ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সহযোগী অধ্যাপক ড. জোবায়দা নাসরিন বলেন একটি জাতির পরিচয় ফুটে উঠে তার ভাষা ও সংস্কৃতির মধ্যে দিয়ে। তিনি বলেন, শাসক গোষ্ঠী প্রতিনিয়ত পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী ভাষা ও সংস্কৃতির উপড় আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে। হাগাড়াপুর থেকে ইসলামপুর, ভেইবোনছড়া থেকে ভাইবোনছড়া ইত্যাদি বিভিন্নভাবে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান বাস্তবতায় তরুণ শিক্ষিত সমাজের উচিত নিজের ভাষা, সংস্কৃতি, স্ককীয় ঐতিহ্য চর্চা করার মধ্যে দিয়ে সেগুলো রক্ষা করা এখন সময়ের দাবী বলেও উল্লেখ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. অসীম সরকার বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়ী আদিবাসী শিক্ষার্থীদের এ ধরণের উদ্যোগগুলো অপরাপর শিক্ষার্থীদের অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। তারা নিত্যনতুন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার মধ্যে দিয়ে তাদের মৌলিক দাবী দাওয়া তুলে ধরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এ ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আদিবাসী শিক্ষার্থীদের যে কোন ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের সাথে সবসময় সাথে থাকবেন বলেও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
পরে সকালের সেশনে মাতৃভাষায় উপস্থিত বক্তব্য, মাতৃভাষা ও বাংলা ভাষার বিতর্কে অংশগ্রহণকারীদেরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম লিটারেচার এন্ড কালচারাল সোসাইটির প্রকাশনা জুম ম্যাগাজিন পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় ্
আয়োজনের তৃতীয় অধিবেশনে রিবেং দেওয়ান এবং জয়শ্রী চাকমার সঞ্চালনায় এক মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিবেশনা করা হয় মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা, গারো, ¤্রাে প্রভৃতি আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী নাচ, গান কবিতা।
পরিশেষে কিংশুক চাকমাকে সভাপতি, নিশৈমং মারমাকে সাধারণ সম্পাদক এবং জয়শ্রী চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম লিটারেচার এন্ড কালচারাল সোসাইটির নতুন কমিটি ঘোষণা করেন বিগত কমিটির সহ-সভাপতি মংছাইনু মারমা।

Back to top button