অন্যান্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জুম্ম শিক্ষার্থীদের ‘গেট টুগেদার’ অনুষ্ঠিত

২৮ জানুয়ারী ২০১৭, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারে নতুন যুক্ত হওয়া ২০১৬-১৭ সেশনের নবীন জুম্ম শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক গেট টুগেদার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত ৮০ জনের অধিক জুম্ম শিক্ষার্থীর স্বত:স্ফুর্ত অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি জগন্নাথ হলের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়।
দ্বিতীয় বর্ষের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী লিটন চাকমা এবং শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের শিক্ষার্থী অনন্যা চাকমার সঞ্চালনায় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সিনিয়র শিক্ষার্থী নিপন ত্রিপুরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অনুভূতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন নবীন শিক্ষার্থী সতেজ চাকমা, মুমু রাখাইন, অন্তর ত্রিপুরা এবং জুলি বম। এছাড়াও নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বক্তব্য রাখেন দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী সুজন চাকমা, রুনি চাকমা, পিকি চাকমা ও কেনি চাক। নিজের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অভিজ্ঞতার কথা শোনান তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নিশৈমং মারমা, চতুর্থ বর্ষের অসীম ত্রিপুরা, মাস্টার্সের মংছাইনু মারমা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের অন্যতম সিনিয়র সদস্য প্রকট চাকমা, সুলভ চাকমা, সুকুমার চাকমা প্রমুখ। এছাড়াও অনুষ্ঠানটিতে উপস্থিত থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তবতার আলোকে জুম্ম তরুণ শিক্ষার্থীদের করণীয় বিষয়ে আলোকপাত করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি ছাত্রনেতা বাচ্চু চাকমা।
অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে নবীন শিক্ষার্থীরা জানান, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরে তারা গর্বিত। সেই সাথে সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে স্বশিক্ষিত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা দেশের ও সমাজের উন্নতির জন্য কাজ করে যাবেন বলে তারা দৃঢ় অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন। তারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন সৃজনশীল, প্রগতিশীল সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের শোষিত, নিপীড়িত মানুষের অধিকার, স্বাধিকার আদায়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে যাওয়ারও আশ্বাস প্রদান করেন ।
অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষার্থীরা নবীনদের উদ্দেশ্য বিভিন্ন উপদেশ ও প্রেরণামূলক বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জ্ঞাপন করে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার তাদেরকে পেয়ে আনন্দিত ও গর্বিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগের পাশাপাশি সর্বদা পার্বত্য চট্টগ্রামের শোষিত মানুষের অধিকার আদায়ে লড়াই করে চলেছে। তারা নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য নিজেদের বিকাশের পাশাপাশি সমাজের জন্য, জাতির জন্য সর্বোপরি পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত মানুষের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানান। জুম পাহাড়কে চেতনায় ধারণ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৩ ভাষাভাষি ১৪ টি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষার জন্য তারা নবীন শিক্ষার্থীদের অনুরোধ জানান। এছাড়াও পারস্পারিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করার সাথে সাথে দেশের বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া জুম্ম শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক উদ্যোগের সাথে নবীন শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার যুগে যুগে কালে কালে পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা দেশের সমগ্র আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছে। তিনি ভবিষ্যতেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারকে একতাবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। সেই সাথে বিশ্বমানের ও বাস্তবমুখী জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমাজকাঠামোকে বদলে দেওয়ারও আহ্বান রাখেন।
পরিশেষে কবিতা আবৃতি ও গানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয় ।

Back to top button