ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ নভেম্বরের প্রথম প্রহরে এম.এন লারমাকে স্মরণ
১০ নভেম্বর ২০২২, প্রথম প্রহরে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের শহীদ বেদীতে এক স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। স্মরণসভার শুরুতে প্রয়াত নেতা’র প্রতি পুষ্পমাল্য অর্পন করেন জুম্ম শিক্ষার্থীবৃন্দ।
উক্ত শোকসভায় সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সুমেধ চাকমা এবং সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।
স্মরণ আয়োজনে পিসিপি ঢাবি শাখার স্কুল ও পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক সৈসানু মারমা বলেন, “শ্রী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা একটি সূর্যের মত। তিনি জুম্ম জাতীয়বাদ প্রতিষ্ঠায় জুম্মদের অন্ধকার দরকার দূর করার জন্য সূর্যের মত দেদীপ্যমান হয়ে শিক্ষা ও চেতনার আলো ছড়িয়েছেন। কাপ্তাই বাঁধের বিরুদ্ধে তাঁর রুখে দাঁড়ানো শুরু হয় এবং সেখান থেকেই তিনি জুম্ম জনগণকে সংগঠিত করেছেন। তাই আমাদের তরুণ প্রজন্মকে তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরী।”
সভায় উপস্থিত বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চ্যং ইয়ং ম্রো বলেন, “বিগত ২৪ বছরেও পার্বত্য সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান হওয়া তো দূরের কথা, বরং সমস্যা আরো জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠেছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক পরিস্থিতি খুবই নাজুক। এই পরিস্থিতিতে ছাত্র সমাজকে একতাবদ্ধ হতে হবে। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে আমাদের কাজ করতে হবে, তা না হলে আমাদের অস্তিত্ব এ দেশে থাকবে না।”
সংহতি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি ঐতিহ্য চাকমা বলেন, “মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা তার আদর্শের জন্য আমাদের মাঝে অমর হয়ে আছেন। গণ পরিষদ বিতর্ক চলাকালে তিনি যে বক্তব্য রেখেছিলেন সেই কথাগুলো বর্তমান সময়েও প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি। জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে তার নির্দেশিত পথে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগ্রামকে আরো বেগবান করতে হবে।”
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শুভ চাকমা তার বক্তব্যে বলেন, “বর্তমানে দেখা যায় আমাদের জুম্ম তরুণের একটি বিশাল অংশ শ্রী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার জীবন ও সংগ্রামকে জানেনা। তাঁকে জানার জন্য, তার চেতনাকে ধারণ করার জন্য ও তার প্রতিষ্ঠিত আত্মনিয়ন্ত্রাধিকারের সংগ্রামকে বোঝার জন্য আমাদের সবার তার জীবন ও সংগ্রাম বইটি অধ্যয়ন করতে হবে। বর্তমানে জুম্ম জাতীয়তাবাদ ও আত্মনিয়ন্ত্রণাধীকার প্রতিষ্ঠায় তরুণ ছাত্র সমাজকে এগিয়ে এসে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।”
সভাপতির বক্তব্যে সুমেধ চাকমা বলেন, “আজকের এইদিনে আমরা এমন একজন মহান নেতাকে হারিয়েছি, যিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পথচলার নির্দেশনা দিয়ে গেছেন তাঁর সংসদীয় বিতর্কে রাখা বক্তব্যের মধ্যে। তাঁর নির্দেশনা এবং কল্পিত রাষ্ট্রব্যবস্থায় সবার সমান অধিকারের নিশ্চয়তা ছিল। যার জন্য ভবঘুরে, যৌনপল্লির পতিতা নারী, বেদে থেকে শুরু করে সব মানুষের জীবন বদলের কথা তিনি বলে গেছেন।”
তিনি আরো বলেন, “মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ছড়িয়ে দেয়া জুম্ম জাতীয় চেতনা ও জাতীয়বাদ আমাদের জুম্ম তরুণ সমাজের প্রত্যেকটি তরুণরা ধারণ করুক এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যেকটি জুম্ম পরিবারের মাঝে সেই চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমাদেরকে এ ধরণের আয়োজন করতে হবে। ঘুণে ধরা সামন্তীয় সমাজকে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা যেভাবে বিপ্লবের মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছেন তা আজও জুম্ম তরুণ সমাজকে আলোড়িত করে। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা’র প্রতিবাদী চরিত্র আমাদের সবাইকে ধারণ করতে হবে এবং তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবায়নে আমাদের সবার করণীয় নির্ধারণ করা উচিত।”
শোকসভায় মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাসহ এ দিনে শহীদ অন্য আট নেতাদের স্মরণে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাবি শাখার তথ্য ও প্রচার সম্পাদক শান্তিময় চাকমা, সদস্য মিশুক চাকমা, উ সৈ লা মারমা প্রমুখ। শোক সভার আগে ১০ নভেম্বররের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়।