জাতীয়

ঢাকায় পিসিপি’র নবীন বরণ সম্পন্ন

সুলভ চাকমাঃ ৩১ শে অক্টোবর ২০১৭ ইং, ‘‘জুমপাহাড়ের সতেজ নবীন, বাজাও তোমার শেকড়ের বীণ” এই স্লোগানকে ধারণ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে ঢাকাস্থ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০১৬-১৭ বর্ষে ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তন কক্ষে এক নবীন বরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ,ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক নিপণ ত্রিপুরার সঞ্চালনায় এবং সভাপতি ক্যারিংটন চাকমার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ২৯৯ নং আসন, পার্বত্য রাঙ্গামাটি জেলার মাননীয় সাংসদ শ্রী ঊষাতন তালুকদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপকড: সাদেকা হালিম, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার বিভাগের সদস্য শ্রী দীপায়ন খীসা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি ও বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক জ্যোতিষী চাকমা এবংপাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রী জুয়েল চাকমা প্রমুখ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম লিটারেচার এন্ড কালচারাল সোসাইটির শিল্পীদের জাতীয় সংগীত এবং দলীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্যে দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, ঢাকা মহানগরের স্কুল ও পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক রেংইয়ং ম্রো। নবীনদের উদ্দেশ্যে মানপত্র পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সুইক্রাচিং চৌধুরী এবং মান পত্র গ্রহণ ও নবীনদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন প্রথম বর্ষের আরেক মেধাবী শিক্ষার্থী টরা তঞ্চঙ্গ্যা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্রী জুয়েল চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রান্তিক এলাকা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ ঢাকাস্থ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ আজ ভালো নেই। প্রতিনিয়ত ভূমিগ্রাসী দ্বারা তাদের চিরায়ত ভূমি হারিয়ে ভূমিহীন হয়ে পরছে। তিনি বাস্তব মুখী শিক্ষায় সুশিক্ষিত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের নির্যাতীত, নিপীড়িত মানুষদের কল্যাণে কাজ করার জন্য নবীনদের প্রতি আহ্বান জানান।
পালি এন্ড বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক জ্যোতিস্বী চাকমা বলেন, জুম্ম শিক্ষার্থীদের জন্য পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ প্রত্যেক বছর যে নবীন বরণ আয়োজন করা হয় তা নিঃসন্দেহে প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। তিনি একে-অপরকে সাথে নিয়ে বা একতার ভিত্তিতে পরিবারের জন্য , সমাজের জন্য, জাতির জন্য এবং দেশের জন্য কিছু একটা ভালো কাজ করার চেষ্টা করতে হবে বলে নবীনদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানান।
বিশেষ অথিতি বক্তব্যে দীপায়ন খীসা বলেন , যারা জীবনকে খুঁজে নেওয়ার চেষ্টায় আজ উচ্চ শিক্ষার জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছেন তাদের হাতেই জুম্ম জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে। সমাজ বিনির্মানের স্বপ্ন এই তরুণদের হাত ধরে ইহবে ।তিনি নবীনদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন,আমাদের আগের প্রজন্ম আমাদেরকে অনেক কিছু দিয়ে গেছেন এখন নতুন প্রজন্মকে জুম্ম জনগণের দায়িত্ব নিতে হবে । জুম পাহাড়ের ডাকে জুমে ফিরে যেতে হবে । সংস্কৃতির চর্চা কে চালু রাখতে হবে।তিনি গুণগতমান সম্পন্ন শিক্ষা গ্রহণ করে ন্যায়-অন্যায় বোধগুলো অর্জন করার মধ্যে দিয়ে সচেতন অগ্রগামী ছাত্র সমাজ জুম্ম সমাজের কান্ডারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে বলেও প্রত্যাশা করেন।
অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি অধ্যাপক ড: সাদেকা হালিম বলন, ”আমি দীর্ঘদিন থেকে আপনাদের নৈতিক দাবীসমূহের সাথে একাত্ম আছি। বর্তমান সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জন নেত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিক ছিলেন বলেই ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এখন চুক্তির অবাস্তবায়িত বিষয়গুলো যেন বাস্তবায়িত হতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, ”বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাওয়াই কিন্তু শেষ কথানয়। বিশ্ববিদ্যালয় একজন প্রকৃত মানুষ হয়ে বেড়ে ওঠার স্বপ্ন দেখায়, মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন সমাজের বির্নিমাণে তাই জাতি-বর্ণ-ধর্ম সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আপনাদের অধিকার ও প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক।”
তিনি উপস্থিত প্রধান অতিথি মাননীয় সাংসদ উষাতন তালুকদার এবং পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ছাত্র নেতাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ”ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য পাস মার্ক ৪৫ করার দাবী জানানো উচিত, কেননা সাধারণ যে কোটার সুবিধা বিদ্যমান আছে সে সুবিধা অর্জনের জন্য ও প্রান্তিক এলাকার শিক্ষার্থীদেরকে অনেক সংগ্রাম করে আসতে হয় ”
প্রধান অথিতির বক্তব্যে মাননীয় সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেন ,”পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি স্বতন্ত্র ইতিহাস আছে। সেই ইতিহাসকে জানতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মত উন্মুক্ত জ্ঞান চর্চার উর্বর জায়গায় এসে কেবল আত্মমগ্ন হয়ে থাকলে চলবে না। যুগের দাবীকে সামনে রেখে হয়ে ঊঠতে হবে এক একজন দূত। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু-বান্ধবীদের বা ক্লাশের সহপাঠিদেও পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তব ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। ”
তিনি আরো বলেন, ”পাহাড়ের আদিবাসী মানুষও দেশের ১৬ কোটি নাগরিকের অংশ। তাদের ও অধিকার আছে।”
পরে ঢাবি শিক্ষার্থী নি শৈ মংমারমা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী প্রিভেন্টী চাকমার সঞ্চালনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়।মারমা নৃত্য, চাকমা নৃত্য, আদিবাসী গান, উবোগীত এর রেঙে রেঙে চলতে থাকেন বীনের জয় গান”আমরা সবাই সতেজ নবীন, বাজাই আমার শেকড়ের বীণ”

Back to top button