ঢাকায় জাতীয় সংখ্যালঘু কনভেনশনঃ পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন
নিজস্ব প্রতিবেদক, ১২জানুয়ারি, ঢাকাঃ বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদ আয়োজিত ও ১৯ টি ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনের ডাকে এক জাতীয় সংখ্যালঘু কনভেনশনে, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পাঁচ দফা দাবী পেশ করা হয়। আজ রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এ কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় সংখ্যালঘু কনভেনশনের ঘোষণা পত্রে জানানো হয় যে চেতনার ভিত্তিতে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক্, ধর্ম নিরপেক্ষ চেতনার বাংলাদেশ অর্জিত হয়ে ছিলো, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেওতা থেকে যোজন দূরে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, মৌলবাদি তা সমাজ, রাষ্ট্র ও রাজনীতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। নির্বাচন নিয়ে সংখ্যালঘু জনগনের পূর্বে কার নির্মম অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় কনভেনশনে। সে লক্ষ্যে পাঁচ দফা দাবী জানানো হয়। দাবী গুলো হল-(১)কোন রাজনৈতিক দল বাজোট আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে এমন কাউকে মনোনয়ন দেবেন না যারা অতীতে বা বর্তমানে জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে বা রাজনৈতিক নেতৃত্বে থেকে সংখ্যালঘু স্বার্থ বিরোধী কোন প্রকার কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ জড়িত ছিলেন বা আছেন । এমন কাউকে নির্বাচনে দেয়া হলে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী সেসব এলাকায় তাদের ভোট দানে বিরত থাকবে বা ভোট বর্জন করবে। (২) যে রাজনৈতিক দল বাজোট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘুদের প্রাণের দাবী ঐতিহাসিক ৭ দফার পক্ষে নির্বাচনী অংগীকার ঘোষনা করবে এবং তাদের স্বার্থ ও অধিকার নিশ্চিত করণে সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করবে সে দল বাজোটের প্রতি সংখ্যালঘুদের পূর্ণ সমর্থন থাকবে। (৩) আদিবাসীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করণ সহ জন সংখ্যার আনুপাতিক হারে সংসদে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে রাজনৈতিক জোট সমূহকে দায়িত্ব নিতে হবে। (৪) নির্বাচনের পূর্বাপর ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িক তার ব্যবহার, মন্দির, মসজিদ, গীর্জা, প্যাগোডাসহ সকল উপাসনালয়কে নির্বাচনী কর্মকান্ডে ব্যাবহার, নির্বাচনী সভা সমূহে ধর্মীয় বিদ্বেষ মূলক বক্তব্য প্রদান বা কোন রূপ প্রচার নিষিদ্ধ করণের পাশাপাশিতা ভঙ্গের দায়ে সরাসরি প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিলসহ অন্যূন তাকে এক বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদন্ডের বিধান রেখে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনী আইনের যুগোপযোগী সংস্কার করতে হবে। (৫) নির্বাচনের পূর্বেই সরকারকে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন, সমতলের আদিবাসীদের জন্যে ভূমি কমিশন গঠন, বর্ণবৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন এবং পার্বত্য ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের বাস্তবায়নসহ পার্বত্য শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি হিউবার্ট গমেজের সভাপতিত্বে এবং ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত কনভেনশনে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির আরেক সভাপতি এবং সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার, প্রবীন রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পীযুষ বন্দোপধ্যায়, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, আদিবাসী ফোরামের সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।