শিল্প ও সংস্কৃতি

ঢাকায় ওয়ানগালা উৎসব পালিত

হেমন্তের নতুন ফসল ঘরে তোলার উৎসব ওয়ানগালা। ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা ও আনন্দমুখর পরিবেশে গারোদের এই বৃহত্তম উৎসব গত ৩ নভেম্বর ঢাকাস্থ ফার্মগেট বটমূলী স্কুল মাঠ প্রাঙ্গণে এই উৎসবটি পালন করা হল।

শহুরে জীবনের কর্মব্যস্ততার ফাঁকে দিনভর তারা নিজেদের মতো করে আনন্দে মেতে থাকে। স্কুল মাঠে গড়ে তোলা হয় বিভিন্ন পণ্যের অস্থায়ী স্টল। এসব স্টলে স্থান পায় গারো পোশাক, খাবার, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য। খাবারের দোকানে ঘুরে ঘুরে স্বাদ নেয় নিজেদের ঐতিহ্যবাহী নানা পদের খাবারের। কেউ কেউ বাসায় খাবার জন্য কিনে নেন জুমের আলু, কুমড়া, শামুক, কাঁকড়াসহ নিজেদের সংস্কৃতির বিভিন্ন পণ্য। দিনব্যাপী পূজা-অর্চনা, আলোচনা, নাচ-গানে উৎসবটি পালন করেছে রাজধানীতে বসবাসরত গারো সম্প্রদায়। শুক্রবার ঢাকায় বসবাসরত সব বয়সের কয়েক হাজার গারো আদিবাসী পালন করে তাদের সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় উৎসব ‘ওয়ানগালা’।

ঢাকা ওয়ানগালার বিদায়ী নকমা (সমাজ প্রধান) পবিত্র মান্দা গণমাধ্যমকে জানান, ‘ওয়ানগালা’ ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উৎসব। আদিবাসী গারোদের বিশ্বাস, শস্যদেবতা ‘মিশি সালজং’ পৃথিবীতে প্রথম ফসল দিয়েছিলেন এবং তিনি সারা বছর পরিমাণমতো আলো-বাতাস, রোদ-বৃষ্টি দিয়ে ভাল শস্য ফলাতে সহায়তা করেন। তাই নবান্নের নতুন ফসল ঘরে তোলার সময় ‘মিশি সালজং’কে ধন্যবাদ জানাতে উৎসবের আয়োজন করে গারোরা। ফসল দেবতাকে উৎসর্গ না করে তারা কোন খাদ্য ভোগ করে না। ‘ওয়ানগালা’ আদিবাসী মান্দি বা গারোদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এক-দেড় যুগ ধরে প্রতিবছর নবেম্বর-ডিসেম্বরে ঢাকায় বসবাসরত গারোরা এ উৎসব আয়োজন করে। যুগ যুগ ধরে গারোরা তাদের শস্যদেবতাকে এই ফসল উৎসর্গ করে আসছে। খ্রীস্টধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর গারোদের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক প্রথাটি এখন ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে একত্রে পালন করা হয়। অর্থাৎ এক সময় তারা তাদের শস্যদেবতা মিশি সালজংকে উৎসর্গ করে ওয়ানগালা পালন করলেও এখন তারা নতুন ফসল কেটে যিশুখ্রিস্ট বা ঈশ্বরকে উৎসর্গ করে ওয়ানগালা পালন করেন। এ সময় সামাজিক নানা আয়োজনসহ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানাদিও পালন করা হয় বলে জানান পবিত্র মান্দা।

শুক্রবার সকালে দেবতাদের পূজার মাধ্যমে শুরু হয় ‘ওয়ানগালা উৎসব’। ‘আমুয়া’, ‘রুগালা’র মতো ধর্মীয় আচার পালন করা হয়। দুপুরের বিরতির পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে নিজস্ব ভাষায় গান গেয়ে শোনান গারো শিল্পীরা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল গারোদের ঐতিহ্যবাহী জুমনাচ। উৎসবে উপস্থিত গারারো জানায়, ওয়ানগালা একই সঙ্গে ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। ওয়ানগালা উৎসব পাহাড়ী জুমচাষকে কেন্দ্র করে উদ্যাপিত হয়ে থাকে। নতুন ফসল তোলার পরে নকমা (গ্রামপ্রধান) সবার সঙ্গে আলোচনা করে অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করেন।

Back to top button