জাতীয়

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইতি চাকমা হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি

অদ্য ১লা মার্চ ২০১৭ইং, রোজ বুধবার পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে খাগড়াছড়িতে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ইতি চাকমার হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শাহবাগের কেন্দ্রীয জাদুঘরের সামনে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় । বিক্ষোভ মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে পুরো ক্যম্পাস প্রদক্ষিণ করে শাহবাগে এসে শেষ হয় ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, ঢাকা মহানগর শাখার সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক নিপণ ত্রিপুরার সঞ্চালনায় এবং সহ-সভাপতি সুমন মারমার সভাপতিত্বে সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক অমর শান্তি চাকমা । সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ঐক্যন্যাপের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য এ্যাড. এস এম এ সবুর, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি অনন্ত বিকাশ ধামাই, ঢাকা মহানগর টিএসএফ-এর সংগ্রামী সভাপতি অসীম রায় ত্রিপুরা এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশন, ঢাকা মহানগর শাখার রুনি চাকমা প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা ইতি চাকমার নৃশংসতম হত্যার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম আদিবাসী নারীদের উপড় এধরণের আক্রমণ এটাই প্রথম নয়। কল্পনা চাকমাকে অপহরণের মধ্যে দিয়ে শুরু হওয়া এ চিত্রটি সবিতা, তুমাচিং হয়ে আজ ইতি চাকমাতে এসে পৌঁছেছে। যুগ যুগ ধে শোষিত, নিপীড়িত জুম্ম জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব বিলীন করে দেওয়ার নীল নকশা হিসেবে এ ধরণের ন্যাক্কারজনক হামলা করা হচ্ছে বলেও বক্তারা উল্লেখ করেন। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি করা হয়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্ম জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার রক্ষাসহ আদিবাসী নারী ও শিশুদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য । কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি লঙ্ঘন করে শাসকগোষ্ঠী প্রতিনিয়ত পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি থেকে উচ্ছেদ, সাম্প্রদায়িক হামলা, আদিবাসী নারীদের উপড় নির্যাতন, নিপীড়ন চলমান রেখেছে। এমতাবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই পার্বত্য চট্টগ্রাম আবারো উত্তপ্ত হতে পারে বলেও বক্তারা হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রুনি চাকমা বলেন, এদেশে হত্যাকারীরা বার বার হত্যাকান্ড সংগঠিত করেও পার পেয়ে যাচ্ছে । এর আগেও কল্পনা চাকমা অপহরণ থেকে শুরু করে সুজাতা চাকমা , তুমাচিং মারমাকে হত্যা করেও খুনিরা পার পেয়ে গেছে । তিনি বলেন আদিবাসী নারীরা নিরাপত্তা চাই এবং এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের উপড়ই বর্তায় ।
পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি অনন্ত বিকাশ ধামাই বলেন, পার্বত্য চুক্তিতে উল্লেখিত আদিবাসীদের মৌলিক মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণেই আদিবাসী নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছেনা । তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চুক্তি করতে আমাদের দুই যুগ সময় লেগেছে , এই চুক্তির জন্য সসস্ত্র সংগ্রাম করতে হয়েছে । এ চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি খারাপ হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন ।
ঐক্যন্যাপের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য এ্যাড. এস এম এ সবুর বলেন, ইতি চাকমার হত্যা অত্যন্ত নিন্দনীয় যা বাংলাদেশের মতো গণতান্ত্রিক দেশে একেবারে কাম্য নয় । তিনি বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে আদিবাসীদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষা করা এবং আদিবাসীসহ সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ।

পরিশেষে ইতি চাকমা হত্যাকারীদের সুষ্টু তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়ে সমাবেশ সমাপ্ত করা হয়।

উক্ত ঘটনায় দেশের তিন পার্বত্য জেলাসহ দেশের স্থানে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে।

Back to top button