অদ্য ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ইং রোজ রবিবার আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা নিয়ে মধুর ক্যান্টিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত আদিবাসী শিক্ষার্থীবৃন্দের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় তথ্য প্রচার সম্পাদক ও আয়োজনটির সমন্বয়ক সুলভ চাকমার সঞ্চালনায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল (বিএমএসসি) ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি নিশৈমং মারমা এবং সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস) ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক জেউন্স রিচার্স ঘাগড়া। এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সান্তাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (সাসু) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস মুরমু, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অমর শান্তি চাকমা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংসদের সভাপতি কিংশুক চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য রুনি চাকমা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম সোসাইটির সহ-দপ্তর সম্পাদক জয়শ্রী চাকমা, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরামের সাবেক সভাপতি অসিম রায় ত্রিপুরা, বাগাছাস ঢাকা মহানগরের সহ-সভাপতি সাইমন রিছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষার্থী ম্রাগিয় প্রু মারমাসহ অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী শিক্ষার্থীবৃন্দ।
মূল বক্তব্য উপস্থাপন করতে গিয়ে নিশৈমং মারমা বলেন, দীর্ঘ অচলায়তন ভেঙে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আপামর শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত আদিবাসী শিক্ষার্থীরা আন্তরিকভাবে শুভেচ্ছা জানায়। তিনি আরও বলেন, অন্যান্য আপামর সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতোই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত আদিবাসী শিক্ষার্থীরাও মনে করে শিক্ষার্থীবান্ধব, আধুনিক, মননশীল এবং গবেষণাভিত্তিক ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য দরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রতনিধিত্বমূলক অংশগ্রহণ।
সংবাদ সম্মেলনের সভাপতি জেউন্স রিচার্স ঘাগড়া বলেন, একাডেমিক পড়াশুনার পাশাপাশি ক্যাম্পাসের যাবতীয় সহশিক্ষা কার্যক্রম, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চা প্রভৃতি অঙ্গনে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের রয়েছে স্বতস্ফূর্ত সক্রিয় অংশগ্রহণ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পড়তে আসা আদিবাসী শিক্ষার্থীদের রয়েছে স্বকীয় ভাষা-সংস্কৃতি, ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ। আমরা মনে করি স্বকীয় আদিবাসী সংস্কৃতি শুধুমাত্র আদিবাসীদের নয় বরং গোটা দেশেরই সম্পদ। আমরা চাই দেশের মূল ধারার সংস্কৃতির সাথে স্বকীয় আদিবাসী সংস্কৃতির পারষ্পরিক মেলবন্ধন ঘটুক। আমরা প্রত্যাশা রাখি,আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সামাজিক-সাস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান বৃদ্ধি পাবে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে নিম্নোক্ত প্রত্যাশা উত্থাপন করা হয়-
১.আদিবাসী শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে যেন ডাকসুতে ন্যুনতম প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকবে।
২.ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য ৫% শিক্ষা কোটা বাস্তবায়ন হবে।
৩.ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক আবাসিক সিট সংরক্ষিত থাকবে, আদিবাসী নারী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আবাসিক সিট সংরক্ষিত থাকবে।
৪.আদিবাসী শিক্ষার্থীদের বিপুল অংশের হল সংযুক্তি থাকে জগন্নাথ হলে। তাই জগন্নাথ হলে নির্মিতব্য রবীন্দ্রভবনে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সিট সংরক্ষিত থাকবে।
৫.বৈচিত্র্যময় আদিবাসী সংস্কৃতির সাথে মূলধারার সংস্কৃতির মেলবন্ধনের লক্ষ্যে সক্রিয় আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য সহশিক্ষা কার্যক্রম চর্চা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে নির্দিষ্ট কক্ষ থাকবে।
৬.ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আদিবাসী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন শিক্ষা-সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত সহযোগীতা প্রদান করা হবে।
৭.ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধীনে আদিবাসী ভাষা ও সংস্কৃতি সংগ্রহশালা নির্মান করা। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী তে আদিবাসী বিষয়ক নানান জার্নাল ও পুস্তক সংরক্ষিত থাকবে।
৮.পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের প্রধানতম সামাজিক উৎসব (বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক-বিহু-বিষু) উপলক্ষে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ঐচ্ছিক ছুটি-র ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের প্রধান সামাজিক উৎসবগুলো পালন করার জন্য ঐচ্ছিক ছুটির ব্যবস্থা থাকবে।
৯.অসচ্ছল আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য ট্রাস্ট ফান্ড থাকবে এবং বৃত্তির ব্যবস্থা থাকবে।
