জুরাছড়িতে অতি বৃষ্টিপাতে ২০-৩০ কোটি টাকার সম্পদ ক্ষয়-ক্ষতি
সুমন্ত চাকমা, জুরাছড়িঃ
সম্প্রতি অতিবৃষ্টিপাতে কারণে জুরাছড়ি উপজেলায় রাস্তা-ঘাট-ব্রীজ-কালভাট ভাঙ্গনে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ২শত একর জমির ফসল ও রাস্তা-ঘাট নির্মাণের মালামাল তলিয়ে গিয়ে ২০-৩০ কোটি টাকার সম্পদ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দাবী।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জুরাছড়ি ইউনিয়নের থানা সংলগ্ন পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডের নবনির্মিত বক্স কালভাট ও ওয়াল, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের বাস্তবায়িত বনযোগীছড়া ইউনিয়নের শুকনাছড়ি, জুরাছড়ি ইউনিয়নের লুলাংছড়ি খাগড়াছড়ি উপর সেতু, সাপছড়ি ছড়ার উপর সেতুর অসংখ্য পাহাড়ী ঢল এসে জট বেঁধে রয়েছে। স্থানীয়দের অভিমত পাহাড়ী ঢলে বড় বড় গাছপালা ও জোট পারমিটের কাঠ ভেসে আসায় এসব সেতুর উপর আঘাত আনে। সেতুর উপর জট বাঁধলে ভিত্তির মাটি ৬০-৭০ফুট গর্ত তৈরী হলে এক পর্যায়ে সেতু ডেবে যায়।
লুলাংছড়ি মৌজার হেডম্যান মায়া নন্দ দেওয়ান, স্থানীয় কার্ব্বারী পাত্তর মুনি চাকমাসহ কয়েকজন গ্রাম বাসী জানান, হঠাৎ করে অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড় ভেঙ্গে বড় ধরনে গাছ শিকরসহ ভেসে আসে। জনসাধারণে প্রাথমিক ভাবে ঢল ছড়ানোর চেষ্টা করা হলেও প্রবল পানির ¯স্রোতের কারণে আর ঢল ছড়ারো সম্ভব হয়নি।
সংশ্লিষ্ট্ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক মোঃ হানিফ জানান, আমি যথাযথ ভাবে নির্মাণ কাজ করেছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ব্রীজের ক্ষতি হয়েছে। তবে কোন প্রকার অনিয়ম প্রমাণ পাওয়া গেলে পুর্ণঃকাজ করে দিতে বাধ্য থাকব।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপসি ১৫.৭৫ হেক্টর, আউশ (জুম) ৪২ হেক্টর, আউশ বীজতলা ১ হেক্টর, শাক-সবজি ৮১ হেক্টর, ফলবাগান ৩৮ হেক্টর জমির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে বিগত বোরো মৌসুমে ৩৩৫ হেক্টর চাষাবাদ ফসল কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে উপজেলা উপসহকারী বিদ্যুৎ কুমার চৌধুরী ও উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা এটিএম কামাল উদ্দিনের দাবী। তবে বোরো চাষের সরকারী প্রদত্ত চার ইউনিয়নের প্রদর্শনী সম্পর্ন ভাবে পানিতে তলিয়ে গেছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগে লিখিত তথ্যে দেখা গেছে।
উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা এটিএম কামাল উদ্দিন জানান, ১৫ মার্চের পরে যে সব ফসল রোপন করা হয় সেগুলো বোরো আওতায় পরে না। যে সব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বোরো আওতার বাহিরে।
তিনি অভিযোগ করেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সরকারী ভাবে বেশী করে ভিজিএফ কর্মসূচীর খাদ্য-শষ্য পাওয়ার আশায় মিথ্যা রিপোর্ট দিচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কাজী মাসুদুর রহমান জানান, অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড়ী ঢল ও জোট পারমিটের কাঠ ভেসে আসায় ব্রীজে পানি আটকে যায়। একপর্যায়ে ব্রীজের ভিত্তির মাটি সড়ে গেলে ব্রীজ ঢেবে পরে।
পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী পল্লব চাকমা মুঠো ফোনে জানান, উপজেলা থানা সংলগ্ন বক্স কালভাট ও ওয়াল নির্মাণের কাজ প্রবল পানির বর্ষনে ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। বর্ষা মৌসুম শেষ হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জুরাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ক্যানন চাকমা জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আগে কখনো দেখা যায়নি। অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড়ী ঢল নামায় ব্রীজ, কালভাটসহ শতএকর শাক-সবজি, ফল বাগান, ধান্য জমির ফসল তলিয়ে গেছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান উদয় জয় চাকমা জানান, এই প্রথম প্রাকৃতিক বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপজেলা জুড়ে অতুলনীয় ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। যা নিরুপন করা খুবই মুশকিল। তবে অনুমানিক ২০-৩০ কোটি টাকার অধিক সম্পদ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।