শিল্প ও সংস্কৃতি

জুম ঈসথেটিকস কাউন্সিলের ৩৬ তম বার্ষিকী পালিত

বৃহস্পতিবার রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন জুম ঈসথেটিকস কাউন্সিলের(জাক) এর ৩৬ তম বার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে আলোচনা সভায় পার্বত্য চট্টগ্রামের কবি,সাহিত্যক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের অংশ গ্রহনে প্রাণ প্রিয় সংগঠন জাক-এর স্মৃতিচারণ করতে যেন এক সাহিত্য আড্ডায় পরিণত হয়েছিল।
বনরুপাস্থ জাক-এর কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জাক-এর সভাপতি শিশির চাকমা। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাকের সাবেক সভাপতি মঙ্গল কুমার চাকমা, বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী রনজিত দেওয়ান, মনোজ বাহাদুর গুর্খা ও রাঙামাটি চারুকলা একাডেমীর অধ্যক্ষ রতিকান্ড তংচংগ্যা। অনুষ্ঠানে জাকের ৩৬ তম প্রতিষ্ঠা বাষির্কী উপলক্ষে অনুভূতি ব্যক্ত করেন কবি ও সাহিত্যক মৃত্তিকা চাকমা, কবি সজীব চাকমা, জাকের সাবেক সভাপতি মানস মুকুর চাকমা, জাকের সাবেক সাধারন সম্পাদক তরুন চাকমা, জাকের সাবেক সভাপতি মিহির কান্তি চাকমা, জাক-এর সহ-সভাপতি সুখেশ্বর চাকমা পল্টু,রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ইনষ্টিটিউটের গবেষনা কর্মকর্তা শুভ্র জ্যোতি চাকমা,সাংবাদিক সত্রং চাকমা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে রাঙামাটির বিশিষ্টজনসহ জাক-এর কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জাক-এর সাধারন সম্পাদক রনেল চাকমা।
আলোচনা সভা শেষে জাক-এর শিল্পীদের সংগীত পরিবেশনা ছাড়াও বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী রনজিত দেওয়ান ও মনোজ বাহাদুর গুর্খা সংগীত পরিবেশন করেন।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনরা জাক-এর ৩৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর শুভ কামনা ও স্মৃতিচারণ করে বলেন,জাক হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক চর্চার অন্যতম একটি সংগঠন। যে সংগঠনটি পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিতে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজ সাহিত্য ও সাংস্কৃতি চর্চা ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশ-বিদেশে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে। পাশপাশি জাক সাহিত্য ও সাংস্কৃতি রক্ষা ও চর্চার ক্ষেত্রে আবদান রেখে চলেছে। বক্তারা জাক সাহিত্য ও সাংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে যে আবদান রেখে চলেছে ভবিষ্যতেও আরো বেশী আবদান রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সভাপতির বক্তব্যে শিশিরি চাকমা বলেন, আমরা আমাদের যদি ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে কাজ না করি তাহলে এসব ভাষা অন্ধকারে হারিয়ে যাবে। চোখের সামনে আমাদের ভাষা হারিয়ে যাবে তা সহ্য করা যায় না। বিশেষ করে চাকমা ভাষাগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। সে জন্য সবাইক সচেতন ও তা নিয়ে ভাবতে হবে। তিনি জাক যে সাহিত্য ও সংস্কৃতি রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছে তার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
মঙ্গল কুমার চাকমা বলেন, জাক প্রতিষ্ঠার পর থেকে আদিবাসী জুম্মদের সাহিত্য ও সাংস্কৃতি রক্ষার জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে। এটি সহজ আন্দোলন নয়,এটি একটি ব্যাপক আন্দোলন। গান, সাহিত্য ও সংস্কৃতি হচ্ছে জীবনের অধিকার, তারা তার আন্দোলন করে যাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, জাক ধ্বংসপ্রাপ্ত ও বিলুপ্ত প্রায় সংস্কৃতিকে রক্ষার জন্য ৮১ দশক থেকে কাজ করে আসছে। তিনি বলেন, আমাদের ভাষাগুলো দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে চাকমা ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। চাকমা ভাষায় বাংলা শব্দ ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ভাষা রক্ষার জন্য জাক আরো অগ্রনী ভূমিকা রাখতে পারে।
মনোজ বাহাদুর গুর্খা বলেন, সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য সাহসী ও যোগ্য নেতৃত্ব প্রয়োজন রয়েছে। জাক-এর মধ্যে সাহসী ও যোগ্য নেতৃত্ব রয়েছে। জাক সাহসী ও যোগ্য নেতৃত্বে এগিয়ে গিয়ে সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে আরো বেগবান করবে।
উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্ম গোষ্ঠীদের ভাষা, সংস্কৃতি,সাহিত্য চর্চা ও বিকাশের লক্ষে ১৯৮১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া কয়েকজন সাহিত্য ও সংস্কৃতি মনা তরুন জুম ঈসথেটিকস কাউন্সিলের(জাক) প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে জাক-এর নাম ছিল রাঙামাটি ঈসথেটিকস কাউন্সিলের(রাক)। এর পর থেকে জাক পার্বত্য চট্টগ্রামের সাহিত্য ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রেখে চলেছে। সাহিত্য ও সংস্কৃতি মনা তরুনদের মধ্যে রয়েছেন কবি ও সাহিত্যক সুহৃদ চাকমা(প্রয়াত), সুষময় চাকমা, মৃত্তিকা চাকমা, ঝিমিত ঝিমিত চাকমা, শিশির চাকমা, মঙ্গল কুমার চাকমা, শান্তিময় চাকমা,মানস মুকুর চাকমা প্রমুখ।

Back to top button